Advertisement
E-Paper

বলিউডের হাঁড়ির হাল, সবাই ‘ধান্দা’য় নেমেছেন, তন্বী না হলে কাজ মেলে না: কিটু গিডওয়ানী

আমিরের সঙ্গে চুম্বন থেকে বলিউডের একতা কপূর, জ়োয়া আখতারদের উপর ক্ষোভ। বলিউড এখন প্রায় কপর্দকশূ্ন্য। কলকাতায় এসে সোজাসাপটা অভিনেত্রী কিটু গিডওয়ানী।

অভিনেত্রী কিট্টু গিডওয়ানি।

অভিনেত্রী কিট্টু গিডওয়ানি। ছবি: নিজস্ব চিত্র।

সম্পিতা দাস

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ১৫:৫১
Share
Save

৩৫ বছরের অভিনয়জীবন। দূরদর্শনে ‘তৃষ্ণা’, ‘স্বাভিমান’, ‘জুনুন’, ‘এয়ার হস্টেস’-এর মতো ধারাবাহিকে কাজ করেছেন। যখন যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন দাগ কেটেছেন দর্শকহৃদয়ে। একেবারে লক্ষ্মীমন্ত নায়িকা তিনি কোনও দিনই নন। বরং দৃঢ়চেতা, উচ্চবিত্ত ঘরানার নারী চরিত্রেই ছিলেন মানাসই। মধুর ভন্ডারকরের ‘ফ্যাশন’ ছবিতে ‘অনীশা শ্রোফ’-এর চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন। কেরিয়ারের শুরুতে আমির খানের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে সাড়া ফেল দিয়েছিলেন। আজও আমিরের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ পথ পেরিয়েও অভিনত্রীর কণ্ঠে আক্ষেপ— বলিউডে শিল্পের কদর কমেছে। বরং টাকা ছাপার মেশিনের মতো কাজ করছেন সকলে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর কলকাতায় এলেন, নিজের আসন্ন ছবি ‘ম্যাডাম ড্রাইভার’-এর প্রচারে। সেখানেই আনন্দবাজার ডট কমের মুখোমুখি কিটু গিডওয়ানী।

প্রশ্ন: কলকাতায় কি প্রায়ই আসেন?

কিটু: না না, একেবারেই না। মঙ্গলবার এলাম ছবির স্ক্রিনিংয়ে। রাতেই মুম্বই ফিরে যাব। প্রায় ১৫ বছর পর শহরটাতে পা রাখলাম। এর আগে এসেছিলাম লিলেট দুবের সঙ্গে একটা নাটক করতে। বিড়লা সভাঘরে হয়েছিল।

প্রশ্ন: এত বছরে এই শহরটার কী কী বদল দেখলেন?

কিটু: অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আধুনিক হয়েছে। আমি তো চিনতেই পারছিলাম না। এখানে এমন সব ইমরাত দেখলাম যা আগে ছিল না। এই বাইপাস সংলগ্ন অঞ্চলটা প্রথম বার দেখলাম। শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা আমার ভাল লেগেছে। আমি পুরনো কলকাতার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। এই নতুন কলকাতাটাও বেশ লাগল। আশা করি খুব শীঘ্রই আসব আবার।

প্রশ্ন: বাংলা সিনেমা দেখেন?

কিটু: না, দেখা হয় না। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের ছবি দেখেছি। বর্তমান সময়ে কাজ দেখিনি একটাও। তবে আমি শুনেছি আমার ধারাবাহিকগুলি খুব পছন্দ করতেন বাঙালি দর্শক। আমার এ বার সত্যি এখনকার কাজ দেখা উচিত।

প্রশ্ন: সদ্য নারী দিবস গেল। কী মনে করেন, এত বছরে বলিউডে কি নারীদের অবস্থানগত বদল হয়েছে আদৌ?

কিটু: তেমন কোনও বদল হয়নি। ৩৫ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি অভিনেত্রী হিসেবে। অনেক পরিণত হয়েছি, কিন্তু যতটা কাজ পাওয়া আমার উচিত ছিল, ততটা পাচ্ছি না। আমি শুধু নায়ক-নায়িকার মা হওয়ার কাজ পাই। কিন্তু সরাসরি নাকচ করে দিই। এ ধরনের কাজ বড্ড একঘেয়ে লাগে। মহিলা চরিত্রকেন্দ্রিক সিনেমার অবস্থা খুব খারাপ। বরং ওটিটির পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাল। কারণ, সংখ্যা বেশি। তা বলে ভাববেন না, মহিলাদের নিয়ে ভীষণ কিছু ভাবা হচ্ছে, কিংবা তাঁদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু লেখা হচ্ছে! আসলে ভারতে এখনও পিতৃতন্ত্রকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। মহিলাদের আরও বেশি করে সুযোগ পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। বেশি বয়সের অভিনেত্রীদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত। আমরা তো বেঁচে আছি এখনও।

প্রশ্ন: আপনার সমসাময়িক পল্লবী জোশী, মিতা বশিষ্ঠ, রেণুকা শহাণের মতো অভিনেত্রীরা প্রায় হারিয়ে গেলেন...

কিটু: এর দায় পুরুষদের। তাঁরাই নারীদের চরিত্র লেখেন। তাঁদেরই তো ভাবতে হবে, তাই না? সারা ক্ষণ পুলিশ কিংবা আর্মি। এ সব নায়কসর্বস্ব চরিত্রের বাইরে বেরিয়ে ভাবতে হবে তাঁদের। এগুলো দেখতেও ভাল লাগে না আর। তাই তাঁরা যদি আমাদের নিয়ে না ভাবেন, আমরা কী-ই বা করতে পারি! সম্প্রতি নীনা গুপ্ত কাজ পাচ্ছেন অল্পস্বল্প। কিন্তু আমরা কোথায় যাব? অভিনয়কে আমরা সারাটা জীবন দিয়ে দিলাম, কিন্তু সুযোগ পাচ্ছি কই! আমাদের তো ধাক্কা দিয়ে আরও পিছনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ওটিটি একটা কাজের ক্ষেত্র হিসেবে সামনে এলেও এখন সেখানেও তারকাদের প্রভাব। তাই ওটিটির কাজও হাত ছাড়া হচ্ছে আমাদের।

প্রশ্ন: কিন্তু একতা কপূর, জ়োয়া আখতারের মতো পরিচালকরা তো আছেন?

কিটু: তাঁরা একেবারেই মহিলাদের নিয়ে ভাবিত নন। সকলে পর্দায় সুন্দরী তন্বী চান।

প্রশ্ন: চল্লিশের পর অভিনেত্রীদের বলিউডে চরিত্র পাওয়া কি কঠিন?

কিটু: হ্যাঁ, বেশি বয়সি মহিলারা চরিত্র পান না এখানে।

প্রশ্ন: ধারাবাহিকের মাধ্যমে আপনার আত্মপ্রকাশ, সেখান থেকে খ্যাতি। বর্তমানে ফের ধারাবাহিকে কাজ করছেন। পার্থক্য চোখে পড়ে কিছু?

কিটু: আমার আগে কাজ করতে বেশি ভাল লাগত। কারণ এখন টেলিভিশনে যে সব কাজের প্রস্তাব পাই ঘুরেফিরে সেই শাশুড়ি-বৌমার গল্প। আজকাল টেলিভিশনে কাজের প্রস্তাব এলে হাসি পায়। তাঁরা বলবেন, গল্প একেবারে আলাদা। কিন্তু শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ওই একই গল্প। খুব লজ্জাজনক ব্যাপারটা।

প্রশ্ন: কেন এমন হচ্ছে?

কিটু: এরা বৌদ্ধিক ভাবে এতটাই নিঃস্ব যে, এদের কাছে ভাল কোনও গল্প নেই! ধারাবাহিকে অভিনয় করতে রাজি হলে কোনও অভিযোগের জায়গা রাখা উচিত নয়। কারণ আপনি জানবেন, সব গল্পই ওই একই সুতোয় গাঁথা।

প্রশ্ন: বলিউডে তা হলে মননের জায়গাটা খালি হয়ে যাচ্ছে?

কিটু: এখন আর কোনও ভাল গল্পে কাজ হয় না। সবাই ‘ধান্দা’ করতে নেমেছেন। টাকা দ্বারা চালিত সব কিছু। কারণ ওই ধরনের শাশুড়ি-বৌমার গল্প বিক্রি করেই টাকা আসছে। সিস্টেম তো বদলাতে পারবেন না!

প্রশ্ন: এ সব দেখে অভিনেতা হিসাবে কষ্ট হয়?

কিটু: খুবই কষ্টকর। পশ্চিমের দেশগুলিকে দেখলে হিংসে হয়। ব্রিটেনে বেশি বয়সি মহিলাদের নিয়ে যে ভাবে ভাবা হচ্ছে, তা সত্যিই ঈর্ষা করার মতো। একজন পেশিবহুল পুরুষ কোনও জটিল সমস্যার সমাধান করেছেন, এটা দেখার থেকে একজন মহিলা কী ভাবে ভাবছেন, কী ভাবে কথা বলছেন, সেটা দেখতে দর্শকও উৎসাহী হবেন। আমার তো তা-ই মনে হয়। আমাদের এখনকার মানুষ খুব ভিতু। কারণ তাঁদের টাকার প্রয়োজন।

প্রশ্ন: তা হলে বলছেন বলিউড টাকাসর্বস্ব?

কিটু: হ্যাঁ। অথচ, প্রচুর টাকা যে উপার্জন হচ্ছে, তেমনও নয়। আসলে একটা স্থবির অবস্থা। এরা বুঝতেই পারছে না কী করবে! শুধু পুরুষসর্বস্ব গল্পের উপর কাজ করবে। অথচ, সে জন্যও প্রয়োজনীয় গল্পের জোগান নেই।

প্রশ্ন: আপনার ভিতরে অনেকটা ক্ষোভ জমা হয়েছে?

কিটু: অভিযোগ করছি না, আমি অনেক বছর কাজ করেছি ইন্ডাস্ট্রিতে। নতুন ছেলেমেয়েরা সুযোগ পাক, সেটাই চাইব। আমি অনেক কাজ করেছি। আমি এখন তেমন ধরনের চরিত্রই করব, যে চরিত্রের যথার্থতা রাখতে পারব।

প্রশ্ন: ম্যাডাম ড্রাইভারছবিটার প্রস্তাব গ্রহণ করলেন কেন?

কিটু: এখানে যে ভাবে চরিত্রায়ণ করা হয়েছে, সেটা ভাল লেগেছে। এই চরিত্রটি আমার বয়সের তুলনায় অনেকটাই বড় দেখতে। একজন অভিনেতা তো বিভিন্ন ধরনের চরিত্রই করতে চান।

প্রশ্ন: আপনাকে বেশির ভাগ সময় উচ্চবিত্ত সমাজের নারীর চরিত্রেই দেখা গিয়েছে। কী মনে হয় ‘টাইপকাস্ট’ হয়েছেন?

কিটু: হ্যাঁ হয়েছি তো। একই ধরনের চরিত্রেই পরিচালকরা ভেবেছেন। জানি, গ্রামের মেয়ে হিসাবে কেউ নেবে না আমাকে। তাই এখন ভিন্ন ধরনের চরিত্র করতে চাই।

প্রশ্ন: আপনি আমির খান, মনোজ বাজপেয়ী, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। কাকে দেখে মোটেও তারকাসুলভ মনে হয়নি?

কিটু: অবশ্যই আমির। তেমন কোনও হাবভাব নেই। প্রিয়ঙ্কা ভীষণ পেশাদার। আমির আমার বন্ধু নয়, তবে খুবই ভাল মানুষ। ‘আর্থ’ ছবিতে আমার কাজ ওর খুব ভাল লাগে। তার পর ‘ধোবি ঘাট’ ছবিতে কাজ করি। শুধু আমির নন, কিরণও দারুণ মানুষ।

প্রশ্ন: মনোজ বাজপেয়ীর কথা এড়িয়ে গেলেন?

কিটু: না, আসলে ওঁর সঙ্গে কখনও তেমন কথা হয়নি, যোগাযোগও নেই। এক ধারাবাহিকে কাজ করেছি এতটুকুই।

প্রশ্ন: আমিরের সঙ্গে হোলিছবিতে চুম্বনের দৃশ্যটা বর্তমান সময় হলে আরও কী কঠিন হত, না কি সহজ?

কিটু: আমিরের সঙ্গে কয়েক সেকেন্ডের একটা চুমু। দু’জনেই পেশাদার অভিনেতা। তখনও কোনও অস্বস্তি ছিল না, এখনও হত না। আসলে আমাদের কাজটা সততার সঙ্গে করে যেতে হবে। সমাজ বা সমাজমাধ্যমে কে কী বলল, পাত্তা দেওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন: গত কয়েক বছরে ভারত কতটা বদলেছে বলে মনে হয়?

কিটু: সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, শিল্পের দিকে কারও মন নেই, টাকার পিছনে ছুটছে সবাই। তাই শিল্পের প্রতি সততা কমেছে। লোকে দেখে একটা ছবিতে ক’জন তারকা কাজ করছেন, ক’টা গান আছে— এই সব। ভাল কাজের দিকে মন নেই কারও। আজকাল মনে হয় কী যেন একটা হারিয়ে গিয়েছে!

প্রশ্ন: বলিউডে চরিত্রাভিনেতা হয়ে টিকে থাকা কি খুব কঠিন?

কিটু: আসলে সবটাই ভাগ্যের খেলা। আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী।

প্রশ্ন: নাসিরুদ্দিন শাহের প্রভাব আপনার জীবনে কতটা?

কিটু: নাসিরুদ্দিন শিক্ষক হিসবে দুর্দান্ত। এটা বলতে পারি, উনি বেঁচে থাকেন থিয়েটারের জন্য। প্রায় পাঁচটা নাটক করেছি। ওঁর সঙ্গে কাজ করলে পরিবারের মধ্যে থাকার অনুভূতি পাওয়া যায়। যদিও এখন আর আমাদের যোগাযোগ নেই। ওঁর কাজের সংখ্যা কত দেখুন , আমি সেখানেই কী-ই এমন!

প্রশ্ন: একা থাকার স্বাধীনতা, না কি বিয়ে করে সংসারী হওয়া— কোনটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ?

কিটু: আমি একা থাকতে ভালবাসি। আমি নিজের কাজের প্রতি যত্নশীল, নিজের ভাল লাগাকে গুরুত্ব দিই। জীবনে বিয়ে করার খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। নিজেকে বোঝা, নিজের মনকে বোঝা দরকার। নিজের জীবনে শান্তি থাকাটা দরকার। তা না হলে ভাল কাজ করবেন কী ভাবে জীবনে? ঘুরে বেড়ান, বিভিন্ন জায়গা দেখুন, এই সমাজের জন্য কিছু করুন। বিয়েই সব নয়।

Kitu Gidwani Bollywood Actress Aamir Khan Bollywood Controversy

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}