Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাথে বাবুয়ানি পাতে বিরিয়ানি

যব ছোড় চলে কলকাতা নগরী, কোথাওই আর বিরিয়ানির সেই কলকাত্তাই স্বাদটা পাই না। নেই সেই ডুমো ডুমো আলু, নেই সেই হাড়ে-মাসে লেগে থাকা মাংসের নরম-গরম টুকরো। মুখে দিলে গলে যায়, আহারে কী সৃষ্টি! হিল্লিদিল্লি-মগধ-অওয়ধ কোথাও এমন স্বাদটি খুঁজে পাবে নাকো তুমি। একে বিরিয়ানির বাঙালিকরণ বলব, নাকি বাঙালির বিরিয়ানিকরণ—কে জানে! লিখছেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়যব ছোড় চলে কলকাতা নগরী, কোথাওই আর বিরিয়ানির সেই কলকাত্তাই স্বাদটা পাই না। নেই সেই ডুমো ডুমো আলু, নেই সেই হাড়ে-মাসে লেগে থাকা মাংসের নরম-গরম টুকরো। মুখে দিলে গলে যায়, আহারে কী সৃষ্টি! হিল্লিদিল্লি-মগধ-অওয়ধ কোথাও এমন স্বাদটি খুঁজে পাবে নাকো তুমি। একে বিরিয়ানির বাঙালিকরণ বলব, নাকি বাঙালির বিরিয়ানিকরণ—কে জানে! লিখছেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

বিরিয়ানির অরিজিন অবশ্য সুদূর পারস্য দেশে। সেখান থেকে ইরানি পর্যটক ও বণিকদের হাত ধরে তার ভারতে আগমন। ভেড়া বা মুরগির মাংস সুগন্ধি সব মশলা ও ঘি মাখিয়ে, রাতভর ম্যারিনেট হয়ে, তবে তা আলিবাবাদের দেশে সার্ভ হত। এখন অবশ্য আর সেদিন নেই। তবু স্বাদে ও স্বতন্ত্রতায় বিরিয়ানি এখন বহুরূপে হাজির। নবাবের হায়দরাবাদের কিচেনে এক সময় শুনেছি, ঊনপঞ্চাশ রকম বিরিয়ানির চল ছিল। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল কাচ্চি আখনি বিরিয়ানি। কর্নাটকের ভাটকালি বিরিয়ানি আবার অন্য রকম। কার্ডামন, লবঙ্গ ও সিনামনের অনন্য ফ্লেভারে সুরভিত সেই বিরিয়ানিতে স্পষ্ট দক্ষিণী মেজাজ। হায়দরাবাদি বিরিয়ানির সঙ্গে ঢাকাই বিরিয়ানির মিল তার কাচ্চি স্টাইলে। অওয়ধি বিরিয়ানি ঠিক তার উল্টো অর্থাৎ পাক্কি বিরিয়ানি, যেখানে ভাত , মাংস সব আলাদা আলাদা রান্না হয়। পাকিস্তানের স্পেশালিটি সিন্ধি বিরিয়ানি। করাচি ও হায়দরাবাদ শহর সেই বিরিয়ানির কল্যাণেই স্বনামখ্যাত। কেরলের উপকূলবর্তী অঞ্চলের কোজিকোর বিরিয়ানি, বিশেষত সেই এলাকার মুসলিম অধিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত। অনেকটাই কম মশলাদার হাল্কা বিরিয়ানি যা অন্যান্য জায়গার বিরিয়ানির থেকে একেবারেই আলাদা। এছাড়াও রয়েছে বার্মিজ বিরিয়ানি ড্যানব্যক, থাই, মালয়েশিয়ান বা সিঙ্গাপুরি বিরিয়ানি, যার কিছু কিছুর স্বাদ চেখে দেখার সুযোগ এই অধম নবাবজাদার হয়েছে।

কিন্তু নেড়া যেমন বেলতলায় বারবার যায় না, আমারও তেমনই কলকাতার বিরিয়ানি ছাড়া অন্য বিরিয়ানি কিছুতেই মুখে রুচতে চায় না। দিল্লি কী হায়দরাবাদে বসে থাকলেও মনটা রয়েল-রয়েল করে ওঠে। ঘুমের মধ্যে চেঁচিয়ে উঠি রহমানিয়া-আর্সালান-নিজাম-আমিনিয়া বলে!

তাই যতই চাইনিজ-জাপানিজ-থাই-কন্টিনেন্টাল ইত্যাদির বন্দনা করি, বিরিয়ানির মতো এমন স্টেপল ফুড কিন্তু আর দুটো নেই। ভাবুন তো, কোনও স্টার্টার নেই, মেনকোর্স নেই, এমনকী ডেজার্টেরও জরুরি চাহিদা নেই (যদিও শেষ পাতে একটু ফিরনি হলে মন্দ হয় না)! বিরিয়ানি একক, একমেবাদ্বিতীয়ম! রীতিমতো সোলো পারফর্ম্যান্স। সেই জন্যই হয়তো আরও চ্যালেঞ্জিং, বাঙালি মেনুর হরেকরকমবা দিয়ে যা ম্যানেজ হওয়ার নয়।

তবে ইদানীং সব কিছুরই যে রকম কম্বো অফার আসছে, তাতে ভয় হয়, ওয়ান শোটা শেষ অবধি টিমটিমে না হয়ে যায়! আজকের কস্ট কনশাস কসমো বাঙালির পেট ভরলেও শুধু বিরিয়ানিতে আর মন ভরবে কি? নবাবি চালের এলাহি সিঙ্গল কোর্স তো কবেই টাইম মেশিনে চড়ে বসেছে।

তবু অনুরোধ, এ যুগের বং-বাঙালির সঙ্গে বাবুয়ানি থাক বা না-থাক, পাতে যেন তার বিরিয়ানিটা শেষ দিন অবধি থেকে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Biryani Kolkata Style
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE