Advertisement
E-Paper

ফিরে আসে কৈশোরের স্মৃতি

ইনিংস মসৃণ ভাবে শুরু করেও এ সবের ধাক্কায় মাঝে ঘেঁটে গিয়েছিল অনিন্দ্যর ব্যাটিং। কিন্তু শেষমেশ হারানো রাজপুত্রকে ফিরে পাওয়ার সিকোয়েন্সে এসে তিনি ভালই সামলে নিয়েছেন।

দেবাশিস চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
ভাঁড়ামো আর বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরসের মধ্যে চমৎকার ভারসাম্য রেখেছেন ব্রাত্য।

ভাঁড়ামো আর বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরসের মধ্যে চমৎকার ভারসাম্য রেখেছেন ব্রাত্য।

মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি

পরিচালনা: অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

অভিনয়: সৌমিত্র, সন্ধ্যা, আবীর, ব্রাত্য, রজতাভ, শিলাজিৎ, সোহাগ

৬/১০

সে ছিল এক দিন আমাদের কৈশোরের কলকাতা! তার চার দিক ঘিরে ছিল ফেলুদা, তোপসে, লালমোহনবাবু। ছিল অরণ্যদেব, গোয়েন্দা রিপ কার্বি। ছিল গোগোল, কাকাবাবু-সন্তু। আর ছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। যাঁর অদ্ভুতুড়ে গপ্পো নিয়ে যেত অলৌকিক এক জগতে। ভাল চোর, খ্যাপাটে কাকা বা জ্যাঠা, দুর্দান্ত বক্সার, উপকারি ভূত...

এমনই নানা অদ্ভুত চরিত্র নিয়ে যে গল্প প্রথম আমাদের চমকে দিয়েছিল, সেটি ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’। আনন্দমেলায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত সেই কাহিনি শুরু হয়েছিল এক অচেনা শিশুর ছবির সঙ্গে মনোজের সংলাপ দিয়ে। তার পর গুরুল নিয়ে কাক-বক তাড়ানো পিসিমা, বৈজ্ঞানিক কাকা, উবু হয়ে বসে সব প্রশ্নের ঝরঝরে জবাব দেওয়া মাস্টারমশাই, তালে ভুল করে গলায় দড়ি দিতে যাওয়া গানের শিক্ষক, নাটুকে বাজারু কাকা, মজার গোয়েন্দা, দুর্দান্ত গরু, হারিয়ে পাওয়া পিস্তল, শসা খাওয়া রাজামশাই, ঘুঁটে দেওয়া রানিমাকে নিয়ে জমজমাট আধুনিক রূপকথা। যার শেষে রয়েছে এক দল ডাকাত আর তাদের দলের মেজ সর্দার। এবং হারিয়ে যাওয়া রাজপুত্র।

অদ্ভুতুড়ে সব ঘটনাময় এই কাহিনিকে সেলুলয়েডে বন্দি করা চাট্টিখানি কথা নয়। সেই দুরূহ কাজটাই করেছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। কোথাও হয়তো তালও কেটেছে। কিন্তু কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ কঠিন ঘটনা চমৎকার ভাবে ছবিতে তুলে এনেছেন তিনি। যেমন, পিসিমাকে কাকের ঠোক্কর বা গোয়েন্দা বরদাচরণকে হ্যারিকেনের গুঁতো। নিজের মতো করে ঘটনা ও সংলাপে খানিক বদল এনেছেন, যেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানানসই হয়েছে। গানগুলিও জুতসই। বরদাচরণের সঙ্গে ফেলুদার ফোনালাপ, যেখানে ‘সোনার কেল্লা’র অনুষঙ্গ এসেছে, সেটাও ভাল। যে সময়ে এই কাহিনি প্রকাশিত হয়, তত দিনে ‘সোনার কেল্লা’ সেলুলয়েডে চলে এসেছে।

পটভূমি বা সময় সবটাই পুরনো। তার সঙ্গে নতুনের পাঞ্চও মন্দ নয়। যেমন, বাতিল হয়ে যাওয়া নোটের কথায় ডিমনিটাইজেশনের অনুষঙ্গ বা পাবলিক বুথ থেকে বরদাচরণের ফোন করা।

তবে পছন্দ হল না গোরিমানকে। বৈজ্ঞানিক হারাধনের চরিত্রও বড্ড পানসে। নড়বড়ে রাজার ভাগ্নে কৌস্তভ। বরদাচরণের সহকারী চাক্কুর মুখে আধো বুলি কেন দিতে হল, তা-ও বুঝলাম না। ইনিংস মসৃণ ভাবে শুরু করেও এ সবের ধাক্কায় মাঝে ঘেঁটে গিয়েছিল অনিন্দ্যর ব্যাটিং। কিন্তু শেষমেশ হারানো রাজপুত্রকে ফিরে পাওয়ার সিকোয়েন্সে এসে তিনি ভালই সামলে নিয়েছেন।

রাজা-রানির জুটিতে বেশ ভাল সৌমিত্র-সন্ধ্যা। ভজ বাজারু, গানের শিক্ষক এবং পড়ার মাস্টারমশাই, রাখোবাবু, ডাকাত সর্দার, পিসিমা বা ঠাকুরঝি, ঠাকুরমা, রামু, মনোজ-সরোজ— সকলেই সাবলীল। মেজ সর্দার আবীরের বিশেষ কিছু করার ছিল না। তবে বরদাচরণের ভূমিকায় ব্রাত্য অনবদ্য। ভাঁড়ামো আর বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরসের মধ্যে চমৎকার ভারসাম্য রেখেছেন তিনি।

সব কিছু মিলিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টার এই ছবি ফিরিয়ে দিল কৈশোরের স্মৃতি। আর লেখকের উপসংহার তো ছোট্ট, কিন্তু সুন্দর চমক।

Manojder Adbhut Bari মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy