এক জন তেষট্টি। আর এক জন বাষট্টি।
এক সময়ে সেলুলয়েড থেকে ক্রিকেট দুনিয়া মেতেছিল এঁদের প্রেমকাহিনি নিয়ে।
একজন তাঁর জন্মদিনে বলেছিলেন আবার বিয়ে করতে চান। অপর জন ২০১৫-র গোড়াতেই বিয়ে করলেন রেহাম খান-কে।
প্রথম জন প্রাক্তন গ্ল্যামার কুইন জিনাত আমন। আর দ্বিতীয় জন ইমরান খান।
তামাম দুনিয়ায় ভূরি ভূরি নমুনা আছে যেখানে কমবয়েসি মেয়েকেই বেশি বয়সের পুরুষ পছন্দ করে বিয়ে করেছেন। উডি অ্যালেন ছাপ্পান্ন বছরে উনিশের পরভিনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। একত্রিশে পা দিয়ে ক্যাথরিন জিটা জোনস্ ছাপ্পান্নর মাইকেল ডগলাসের প্রেমে পড়েন। রুশদির সঙ্গে বিয়ের পর পদ্মালক্ষ্মীকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তেইশ বছরের বড় একজন পুরুষকে তিনি কেন বিয়ে করছেন? তখন পদ্মালক্ষ্মী সহাস্যে জানান রুশদির মতো অমন বুদ্ধিদীপ্ত ফ্লার্ট করতে আর কোনও পুরুষকে তিনি দেখেননি। বিয়ে না টিকলেও রুশদির সঙ্গে কাটানো প্রেমের মুহূর্তগুলোই পদ্মালক্ষ্মীর দাম্পত্যের শেষ কথা ছিল।
নবদম্পতি: ইমরান ও রেহাম খান
তসলিমা নাসরিন যদিও ইমরান খানের এই অসমবয়সী বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। “ইমরান খান কত দিন পর্যন্ত ভায়াগ্রা নিয়ে রেহামের যৌন খিদে মেটাবেন? একদিন এই বিয়ে নিয়ে রেহাম নিশ্চয়ই হতাশ হবেন এবং অন্য পুরুষ বন্ধু খুঁজতে বাধ্য হবেন,” নিশ্চিত তসলিমা। বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে। যদি তাই হত তাহলে ৫৩ বছরের জর্জ ক্লুনির সন্তানের মা হতেন না তাঁর সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আমাল আলামুদ্দিন। স্বাগত ষাট। কে বলেছে ষাট পেরলেই আপনি একা? সঙ্গী শুধু প্রেসক্রিপশন, বুড়োটে একঘেয়ে মান্ধাতা আমলের জামাকাপড় আর নস্টালজিয়া?
ধারণাটা কিন্তু এক্কেবারে বদলে গিয়েছে।
সেক্স ইন দ্য সিক্সটি ট্রেডমিল করা, বোটক্স ট্রিটমেন্টের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ষাটোর্ধ্ব জেন এক্স এখন রোম্যান্সের জোরেই নস্যাৎ করছেন যৌনতা নিয়ে আদ্যিকালের ধ্যানধারণা। বিয়ে আর সম্পর্ক নিয়ে নাজেহাল জেন ওয়াইকে যেন তুড়ি মেরে বেঁচে থাকার আসল স্বাদ কেমন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে হয়, তা শিখিয়ে দিচ্ছেন ষাটের ‘তরুণরা’। ষাট-সত্তরেও কী সুন্দর জিনস্ গলিয়ে, চুল রং করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা তরুণীদের হৃদ-মাঝারে! ফেসবুক থেকে
সেকেন্ড ম্যারেজ ডট কম-এ আড্ডা এখন তাঁদের রোজের রুটিন। হুটহাট লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়া বা ওয়াইন চুমুকের সন্ধে, সঙ্গে হট্ সুন্দরীর রাত আর কী চাই? নবনীতা দেব সেন পরিণত বয়সের বিয়ে নিয়ে খুবই উৎসাহিত। কথায় কথায় বললেন তিনি, “মাতৃত্বের বয়স আছে। কিন্তু পুরুষদের সে সবের ঝামেলা নেই। তাঁদের দীর্ঘকাল প্রজনন ক্ষমতা থাকে।তাই পুরুষরা খুব সহজে ষাটেও বিয়ে করতে পারেন। দ্বিতীয় বিয়েতে প্রেম যৌনতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। আর এখন তো এমনিতেই মানুষের আয়ু বাড়ছে। বাড়ছে জীবনতৃষ্ণাও।”
এমন একটা দিনের অপেক্ষায় আছেন তিনি যখন অসম, পরিণত বিয়েটা আর আলাদা করে কোনও খবর হবে না। সেটাই হবে ‘ওয়ে অব লাইফ’... দিন গুনছেন নবনীতা।
মা বলেছিল আমি খুব শিগগিরি বিধবা হব
মনোবিদরা বলছেন চল্লিশেই জীবনের শুরু। কিন্তু পরিণত বয়সের বিয়ের সম্পর্ক যৌন তাড়নার প্রেক্ষিতে তৈরি হয় না। কারণ যৌন তাড়নাই যৌনতার শেষ কথা নয়। শুধু সেলিব্রিটিরাই নয়। খোদ কলকাতাতেই ছড়িয়ে আছে এমন সব উদাহরণ। মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির প্রাক্তন কর্মী সত্রাজিৎ বসু (৬৯) সদ্য বিয়ে করেছেন পঁয়ত্রিশের বাসবদত্তাকে। সত্রাজিৎ জানালেন তাঁদের বিয়েতে পরিবারের কোনও সমর্থন ছিল না। এমনকী বন্ধুরাও ‘মিডলাইফ ক্রাইসিস’ বলে দূরে চলে গিয়েছিল। হাসতে হাসতে বললেন, “রোজ সকালে বাসবদত্তার মুখ ভেসে উঠতেই জিমে ট্রেডমিলের স্পিড বেড়ে যায় আমার।”
মনোবিদরা বলছেন, পঞ্চাশের পর থেকে পুরুষরা বাড়ির আড্ডায় ওয়াইন চুমুকে রাত মাতাতে চান। আর মহিলারা চান বাড়ির বাইরে কারও সঙ্গে আউটিংয়ে যেতে। নির্ভর করতে চান সচ্ছল, স্থিতধী ব্যক্তিত্বের ওপর। “আমি যখন অরুণাংশুকে বিয়ে করি, তখন ওর বয়স ৭০ আর আমার ৩২। ও আমার বাবার চেয়েও বড় ছিল। আমার বিয়ের কথা শুনে মা বলেছিল আমি খুব শিগগিরি বিধবা হব। হতেও পারে। কিন্তু ওর সঙ্গে সকালে প্রথম চায়ের কাপের আড্ডায় যে উষ্ণতা আমি খুঁজে পেয়েছি, তা পোশাকি যৌনতার চেয়ে ঢের ভাল,” আবেগতাড়িত গলায় বললেন অনুত্তমা মজুমদার। একা থাকার প্ল্যান করে হঠাৎই আর্মি অফিসার অরুণাংশু মিত্রর প্রেমে পড়ে যান তিনি।
বাবার বিয়েতে খুশি
অরুণাংশুর মেয়ে সুনয়নার কাছে বাবার দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাবা বিয়ে করে খুশি নিজের জগতে। আমিও তাই খুশি। আমাকে দেখভালের দায়িত্ব তো নিতে হচ্ছে না।”
আয়ু যাবে বেড়ে জেন্ডার স্টাডিজের ছাত্রী অর্ণা রায় বললেন, “যদি কোনও মহিলা বেশি বয়সের পুরুষকে বিয়ে করার জন্য দশ বার ভাবেন, সেখানে পুরুষটি হয়তো একবারই ভাববেন।” মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন আমাদের সমাজে পুরুষরা নিজেদের যৌনতার দাবি যে ভাবে প্রকাশ্যে আনতে পারেন মহিলারা সেটা আজও পারেন না।
তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রিমা মুখোপাধ্যায় পরিণত পুরুষের বিয়ের চাহিদাকে অন্য চোখে দেখছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে ‘ভাল থাকা’ আর দীর্ঘ আয়ুর সম্ভাবনাকে মেনে নিলেও একজন মেয়েকে পরিণত বয়সের বিয়ে যে ভাল থাকার জীবনে নিয়ে যাবে এমনটা মানতে নারাজ তিনি।
মনে উত্তেজনা শরীর সতেজ
ষাটের পরে পুরুষের হরমোন নিঃসরণ কমতে থাকে। তবে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য মনে যে এক ধরনের পজিটিভ এনার্জি তৈরি হয় তা নিঃসন্দেহে শারীরিক ক্রিয়াকেও বাড়িয়ে তোলে বলে জানাচ্ছেন ডা. দেবর্ষি রায়। একাকীত্ব বা একঘেয়ে জীবন থেকে নিজেকে বের করে আনলে তবেই মন ফুরফুরে হয়। ‘‘দ্বিতীয় বিয়ে বা পরিণত বয়সের বিয়ে ছাড়া মানুষ নতুন উন্মাদনায় জীবনকে জানবে কেমন করে?
এটাই তো একাকীত্বর একমাত্র ওষুধ! প্রেম এলে শরীর নিজে থেকেই কথা বলে উঠবে,” বলছেন সমরেশ মজুমদার। প্রেমিক পুরুষ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কি কখনও দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভেবেছিলেন? “সুনীল বলত আমিই নাকি ওকে ৭৯৪ বার ডিভোর্স করার কথা বলেছি। ভাল লাগার সঙ্গী তো সুনীলের অনেকই ছিল, কিন্তু ও আমায় দ্বিতীয় বিয়ের করার কথা কখনও বলেনি,” বললেন স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। তবে কোনও পুরুষ বা মহিলা ষাটের পর বিয়ে করে খুশি থাকলে তার সেটাই করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এখন শুধু অপেক্ষা। হঠাৎ এক দমকা হাওয়া কখন কার মনের দেওয়ালে ‘সাইন ইন’ করে যাবে, কেউ জানে না।
ষাটের আবেদন কেন
• এই বয়সি পুরুষরা অনেক পরিণত মনের। সেখানেই তাঁদের সেক্স অ্যাপিল
• এঁদের ধৈর্য তরুণ-তুর্কিদের চেয়ে অনেক বেশি
• বেশি বয়সি পুরুষ বিয়ে করলে তাঁর চোখে আপনি সবসময়ই তরুণী থাকবেন। আপনার থেকে তাঁর মনোযোগ কখনও সরবে না
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy