Advertisement
E-Paper

ছোট পরদার তিন হার্টথ্রবের গল্প...

তিন জনের মধ্যে দু’জন ইঞ্জিনিয়ার, আর এক জন এমবিএ। ধারাবাহিকের জনপ্রিয় তিন নায়কের ব্যক্তিগত জীবনের খোঁজ নিল আনন্দ প্লাসমায়ের কথা শুনেই আপনার এমবিএ করা। তার মানে নীল মাম্মাজ বয়? (হাসতে-হাসতে) ‘‘সে রকম কিছু না। তবে মায়ের কথা শুনতে ভাল লাগে, মা-বাবার সঙ্গে থাকতে ভালবাসি। আমি একা থাকায় বিশ্বাসী নই। বারোটা-একটা-দুটো যখনই ফিরি, মা দরজা খুলে দেবে, খেতে দেবে, সেটা আমার ভীষণ ভাল লাগে।’’

পারমিতা সাহা, মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০১:০৮
নীল ভট্টাচার্য, সোমরাজ মাইতি, রোহিত সামন্ত।

নীল ভট্টাচার্য, সোমরাজ মাইতি, রোহিত সামন্ত।

নীল ভট্টাচার্য

সাউথ পয়েন্টে তাঁর পড়াশোনা, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক। আর তার পর এমবিএ। কিন্তু এত সব ডিগ্রি লাভের পর চাকরি নয়, অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নিলেন নীল ভট্টাচার্য। আসলে অভিনয়ের পোকাটা ছোট থেকেই মাথায় ছিল নীলের। স্কুলে, কলেজে নাটকে অভিনয়। গ্রুপ থিয়েটার। খেলাধুলোতেও তুখড় নীল। বাস্কেটবল, ক্রিকেট, ফুটবল... গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর মা তাঁকে শর্ত দেন, মিনিমাম এমবিএ করলে, ছেলের অভিনয়ে গ্রিন সিগনাল দেবেন। ‘‘তাই মায়ের জন্য এমবিএ করা। তার পর ‘চিত্রা’ বলে একটা ছবি করেছিলাম। কিন্তু সেটা ওয়র্কআউট করেনি। এর পর ‘ঠিক যেন লাভস্টোরি’। এই সিরিয়ালের ‘আদি’ চরিত্রটা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। দ্বিতীয় সিরিয়াল ‘স্ত্রী’।’’

মায়ের কথা শুনেই আপনার এমবিএ করা। তার মানে নীল মাম্মাজ বয়? (হাসতে-হাসতে) ‘‘সে রকম কিছু না। তবে মায়ের কথা শুনতে ভাল লাগে, মা-বাবার সঙ্গে থাকতে ভালবাসি। আমি একা থাকায় বিশ্বাসী নই। বারোটা-একটা-দুটো যখনই ফিরি, মা দরজা খুলে দেবে, খেতে দেবে, সেটা আমার ভীষণ ভাল লাগে।’’ নীলের বাবা ডাক্তার এবং মা স্কুল টিচার। তাঁরা তিনজন ছাড়াও বাড়ির চতুর্থ সদস্য একটি ছোট্ট বিড়াল, পুসু। ‘‘ওর ট্রিটমেন্ট কিন্তু ছোট ছেলের মতো।’’

নীলের পরবর্তী লক্ষ্য কিন্তু এখন থেকেই স্থির। ‘‘কিছু দিনের মধ্যেই আমি মার্শাল আর্টস, ডান্সের এক্সটেনসিভ ট্রেনিং নিতে যাচ্ছি। সিরিয়াল চলতে-চলতে এগুলো করা খুব ডিফিকাল্ট। তাই এই সিরিয়ালের কাজ শেষ হলে, ট্রেনিং নেব। তার পর মুম্বই চলে যাব বা এখানেই বড় পরদায় কাজ করব। আসলে আমার আগেই মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু যে দিন যাব, সে দিনই এই সিরিয়ালের অফারটা পাই। তবে মুম্বইয়ে ছবি নয়, ভাল কোনও সিরিয়াল করতে চাই। সম্প্রতি বেনি দয়ালের একটা মিউজিক ভিডিয়ো করেছি। ৩০ জুন এটা রিলিজ করবে। তবে আমি যেটুকু সাফল্য পেয়েছি, তার জন্য মা-বাবা ও আমার কয়েকজন টিচারের কাছে খুব কৃতজ্ঞ।’’

তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, নীলের আসল নাম কিন্তু অভিজিৎ। নাম পরিবর্তনের কারণটা কী? ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগে মা বলেছিল, ‘এন’ দিয়ে আমার নাম হলে নাকি আমি বেশি সাকসেসফুল হব। তাই...’’

নীল স্বীকার করুন বা না-করুন, তিনি কিন্তু সত্যিই মাম্মাজ বয়!

সোমরাজ মাইতি

বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনা শেষ করে জিআরই-এর প্রস্তুতির জন্য কলকাতায় ফিরেছিলেন ‘ঠিক যেন লভ স্টোরি’-র তূণীর, মানে আপনাদের প্রিয় সোমরাজ। যোগাযোগ বাড়ানোর জন্যই ছবি পাঠিয়েছিলেন ১৯ ২০ গ্ল্যাম হান্টে। খেতাবটাও জিতলেন। আর তার পরই আসতে লাগল পরপর ধারাবাহিকের প্রস্তাব। ‘ঠিক যেন লভ স্টোরি’, ‘গৌরীদান’, ‘এই ছেলেটা ভেলভেলেটা’ আর হালফিলে জি সিনেমা অরিজিনালস প্রযোজিত ছবি ‘চলো লেট্স লিভ’।

বিদেশে অনেকটা সময় কাটালেও সোমরাজ কিন্তু ষোলোআনা বাঙালি। কোনও বাংলা ছবি দেখতে বাদ রাখেন না। এমনকী ব্রিটেনে থাকতেও ইউটিউবে যা পাওয়া যেত, সব বাংলা ছবি দেখতেন। ছবি দেখার পর পছন্দের চরিত্র নিজে ঘরে অভিনয়ও করেন। ‘‘হস্টেলের ঘরে যাঁদের ছবি লাগানো থাকত, তাঁদের সঙ্গে এখন কথা বলি। এটা ঠিক স্বপ্নের মতো,’’ সোমরাজের কণ্ঠে নস্ট্যালজিয়ার ছোঁয়া। নেটফ্লিক্সের ওয়েব সিরিজ এখন সপ্তাহান্তের ছুটির সঙ্গী ব্যস্ত অভিনেতার। প্রিয় সিরিজ ‘হাউজ অব কার্ডস’। আর বাকি সময়টা গার্লফ্রেন্ড আয়োশীর জন্য। অভিনয়ের ক্ষেত্রে সোমরাজের অনুপ্রেরণা রণবীর কপূর। ক্রাশ দীপিকা পাড়ুকোন।

তূণীর, আবীর, অর্জুনের মধ্যে ব্যক্তি সোমরাজের সঙ্গে বেশি মিল কোন চরিত্রের? বললেন, ‘‘অর্জুন পুরোটাই সোমরাজ।’’ আপাতত সিরিয়ালে থাকলেও ছবিতে অভিনয়ের বিশেষ ইচ্ছের কথা জানালেন সোমরাজ। ‘‘হলে শো চলুক, বড় বড় পোস্টার পড়ুক, এই ইচ্ছে তো সকলের থাকে। আমারও আছে,’’ স্বপ্ন সত্যি করার দৃপ্ততা ফুটে উঠল তাঁর গলায়।

সোমরাজের ফ্যান লিস্ট নেহাত ছোট নয়! তবে তাঁর কথায়, ‘‘আমার ইমেজটা পাশের বাড়ির ছেলের মতো। তাই মেয়েরা প্রেমে পড়ে কম, কানেক্ট করে বেশি।’’

যদি অভিনেতা না হতেন, তা হলে কি ইঞ্জিনিয়ারই থাকতেন? ‘‘ইঞ্জিনিয়ার হতাম। কিন্তু কোনও কোম্পানিতে চাকরি করতাম না। স্টার্ট আপ করতাম,’’ স্পষ্ট জবাব সোমরাজের।

রোহিত সামন্ত

তখন ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনাল ইয়ারের ফোর্থ সেমেস্টার চলছে। ‘গানের ওপারে’ ধারাবাহিকের প্রযোজকের তরফে ডাক পেলেন রোহিত। অভিনেতা হওয়ার কোনও পরিকল্পনা কিন্তু ছিল না ভাবী ইঞ্জিনিয়ারের। তবে যা হওয়ার তা তো হবেই! প্রথম বার শ্যুটিং সেটে গিয়ে রোহিত ভালবেসে ফেললেন অভিনয়। স্থির করলেন অভিনয়কেই পেশা বানাবেন।

তবে পাঁচটি মেগা সিরিয়ালে অভিনয় করার পরও স্টারডম নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন না রোহিত। আর তাই বোধহয়, অনায়াসেই নিজের ইমেজ ভাঙার ঝুঁকি নিতে পারেন। ‘সিঁদুরখেলা’-র নেগেটিভ চরিত্র, ‘বয়েই গেল’-র বাঙাল ছেলে, ‘চোখের বালি’-র ক্লাসিক মহেন্দ্র বা ‘অগ্নিজল’-এর প্রেমিক রাজা দেব দক্ষ, সব চরিত্রেই সমান সাবলীল তিনি। তবে ‘বয়েই গেল’ তাঁর কাছে খুব স্পেশ্যাল। রোহিতের কথায়, ‘‘স্ক্রিপ্টটা শুনেই যাকে বলে লভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট! বুঝেছিলাম, এটা আমাকে করতেই হবে।’’

অভিনয়ের পাশাপাশি রোহিতের প্যাশন ফোটোগ্রাফি। সুযোগ পেলেই কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। গত মে মাসেই ঘুরে এসেছেন সিকিম। আর বরাবরের প্যাশনটাকে ইদানীং প্রফেশন করার কথাও ভাবছেন তিনি।

এক বার রোহিতের জন্মদিনে ওঁর ফ্যানেরা বেশ বড়সড় সারপ্রাইজ দিয়েছিলেন। কেক নিয়ে সটান পৌঁছে গিয়েছিলেন ওঁর বাড়ি। সেই ভক্তদের দলে কয়েক জন বাংলাদেশিও ছিলেন। তবে রোহিত সেই মুহূর্তে বাড়ি না থাকায় রোহিতের মা খানিক ঘাবড়ে গিয়ে সেই ভক্তদের ফেরত পাঠিয়ে দেন। পরে অবশ্য তাঁরা রোহিতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এক মহিলা ফ্যান তো রোহিতের ভোটার কার্ডও দেখতে চেয়েছিলেন। রোহিতের গার্লফ্রেন্ড কিন্তু টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিরই। রোহিতের ফেসবুকে উঁকি মারলে ওঁদের একসঙ্গে ছবি দেখতে পারেন। আর পারফেক্ট ডেট মানে ‘‘একসঙ্গে সময় কাটানো। সেখানে দিন-তারিখ-জায়গা কিচ্ছু ম্যাটার করে না,’’ বললেন রোহিত।

Neel Bhattacharya Somraj Maiti Rohit Samanta bengali serial Tollywood নীল ভট্টাচার্য রোহিত সামন্ত সোমরাজ মাইতি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy