Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

যদিও নাম মীর, খাব না একা ক্ষীর

টিম গেমে বিশ্বাসী। কারণ, তিনি সেলেব নন। গ্যাস খাওয়ার বান্দা নন মীর পশ্চিমবঙ্গে তাঁকে আলাদা করে চিনিয়ে দেওয়ার দরকার হয় না। নামটাই যথেষ্ট। যদিও সেটা তাঁর আসল নাম নয়। আজিমগঞ্জের আফসর আলি নিজের নাম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন পরিবারিক নাম ‘মীর’।

অরিজিৎ চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে তাঁকে আলাদা করে চিনিয়ে দেওয়ার দরকার হয় না। নামটাই যথেষ্ট। যদিও সেটা তাঁর আসল নাম নয়। আজিমগঞ্জের আফসর আলি নিজের নাম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন পরিবারিক নাম ‘মীর’। রেডিয়ো, টিভি, গান, সিনেমা...সবেতেই তিনি। কী কী করেননি, সেই তালিকাটা বরং ছোট হবে। হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘ক্রিকেটটাই যা খেলিনি।’’

মু-ম-সেক্সুয়াল

অনেক কিছুই তো করেছেন, কিন্তু কোন রোলে নিজে সবথেকে স্বচ্ছন্দ? ‘‘বয়স হয়েছে তো, মাটন খেলে সহ্য হয় না। চিকেন খেলে নিজেকে কেমন মুরগি-মুরগি মনে হয়। আর এখন কী সব প্লাস্টিকের ডিম বেরিয়েছে, এগরোলও তাই খাচ্ছি না। আমার জন্য রেডিয়ো জকির রোলই বেস্ট,’’ স্বভাবসিদ্ধ উত্তর মীরের। নিজেকে নিয়েও মজা করতে ছাড়েন না। বলছিলেন, তাঁকে দেখতে এত খারাপ, তাই চান লোকে তাঁকে ‘শুনুক বেশি, দেখুক কম’। তবে শোনাতে গিয়ে বিতর্কেও জড়ান। ঋতুপর্ণ ঘোষের মিমিক্রি থেকে টলিউডের কিছু অভিনেত্রীকে ‘ঝিঙ্কু মামণি’ বলা। বিতর্কে ভয় হয় না? ‘‘আমি তো মু-ম-সেক্সুয়াল। মুখে যেটা বলি, মনেও সেটাই,’’ বলেন তিনি।

গ্যাস আর আধার

ডিপ্লোমেসিরও ধার ধারেন না তিনি। কপিল শর্মা আর সুনীর গ্রোভার বিতর্কে স্পষ্ট জানালেন, তাঁর পাল্লা ঝুঁকে সুনীলের দিকে। বললেন, ‘‘কপিল নিঃসন্দেহে ট্যালেন্টেড। কিন্তু সুনীলের ব্যাপ্তি অনেক বড়।’’ একটু থেমে যোগ করেন, ‘‘কপিলেরও দোষ নয়। আসলে কেউ সফল হলেই চারপাশের লোক এমন গ্যাস খাওয়াতে থাকে যে, নিজেকে কনট্রোল করা মুশকিল।’’ কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে তো এমনটা হয়নি। ‘মীরাক্কেল’ মানেও তো তিনি! ‘‘টিম গেমে বিশ্বাস করি ভাই। যদিও নাম মীর, খাব না একা ক্ষীর। দু’ঘণ্টা অন্তর খাই। পেটে গ্যাস জমতেই দিই না। চারপাশের লোকদের বলে দিয়েছি, আমার আধার নেই, প্লিজ গ্যাস দিও না,’’ বলেন মীর।

ফণীভূষণের ফেসবুক

কিছু দিন আগেও তিনি সব সময় ‘অনলাইন’। সেই মীর হঠাৎ ‘সন্ন্যাস’ নিয়েছেন ফেসবুক থেকে! ‘‘ভীষণ টায়ার্ড লাগছিল। ডিজিটালি সর্বক্ষণ কানেক্টেড থাকতেই হবে, এটা আর ভাল লাগছিল না। আমার হাতে চব্বিশ ঘণ্টা ফোন দেখে বাড়ির লোক তো ফণীভূষণ বলে ডাকছিল। আর ডেটা ফুরিয়ে যাওয়া? নিজের সিক্স প্যাক হল না, ও দিকে ফোনে বুস্টার প্যাক নিতে হচ্ছে,’’ মজা করেন মীর। বিরক্তির আর একটা কারণ, গত বড়দিনে তাঁর একটা ফেসবুক পোস্টও। স্ত্রী-কন্যার ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ওঁরাই তাঁর সান্টা। ব্যস, শুরু হয় ‘ট্রোলিং’। ‘অন্য ধর্মের পার্বণ তিনি কেন পালন করবেন’ জাতীয় প্রশ্নে ভরে যায় তাঁর ফেসবুক-ওয়াল। দেওয়ালে যাতে কেউ যা খুশি ‘করে’ যেতে না-পারে, তাই দেওয়ালটাই আর রাখছেন না।

বসে কেন, শুয়ে দেখুন

তিনি বা তাঁর শো যতই জনপ্রিয় হোক, সমালোচনাও কিন্তু কম শুনতে হয়নি। অনেকে বলেন, এমন অনেক জোক ‘মীরাক্কেল’-এ বলা হয়, যা পরিবারের সঙ্গে বসে দেখা যায় না। ‘‘বসে দেখবেন কেন? শুয়ে দেখুন,’’ উত্তর আসতে দু’সেকেন্ডও দেরি হল না। বললেন, ‘‘ফোনে যেখানে দেদারে পর্ন দেখা চলছে। হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে অশ্লীল জোকস। সেখানে এই দু’মুখো ন্যাকামিটা আমার সহ্য হয় না।’’ আর অসহ্য লাগে তাঁকে ‘সেলেব’ বললে। কারণ, ‘‘সব কাজে সময়ে পৌঁছই। ফিল্ম পার্টির থেকে বন্ধুদের সঙ্গে দাঁতকপাটি করতে বেশি ভাল লাগে।’’ কিন্তু সময় বের করতে পারেন? ‘‘সময়কে কম্পার্টমেন্টে ভাগ করে নিয়েছি। যখন যে কাজটা করি শুধু সেটাতেই মন দিই,’’ সমাধান তাঁর। আগে যে রোজ সকালে ট্যাক্সি করে অফিস যেতেন, সেটা কি আর হয়? ‘‘উবেরে যাই তো। সকালে দশ মিনিট যায় লোকেশন বোঝাতে। উপরওয়ালা সব জানেন, উবেরওয়ালা কিচ্ছু জানে না,’’ হাসতে হাসতে বলেন মীর।

আরও পড়ুন:মাতৃত্বের গুজব ওড়ালেন অনন্যা

অন্যের জমিতে জনমজুরি

যে মুখচোরা ছেলে মঞ্চে ওঠার ভয়ে অন্যদের ডিবেটের স্ক্রিপ্ট লিখে দিত, সে কি ভেবেছিল একদিন কথার ফুলঝুরি ছোটাবে? ‘‘জানেন, রিপন স্ট্রিটে সিঁড়ির তলায় একটা সার্ভেন্টস কোয়াটারে থাকতাম। ঘরে ঢুকতে-বেরোতে মাথা নিচু করতে হত। এখন যে সব জায়গায় যাই, মাথা উঁচু করে যাই। এটাই আমার অ্যাচিভমেন্ট,’’ গলায় গর্বের ছোঁয়া। এ বছর পাঁচটা ফিচার ছবিতে অভিনয় করছেন। সামনে মুক্তি পাবে সত্রাজিৎ সেনের ‘মাইকেল’। শর্ট ফিল্মও করছেন। পুরোপুরি সিনেমায় আসবেন নাকি? ‘‘এটা নিজের জমি কেনার আগে অন্যের জমিতে জনমজুরি দেওয়া,’’ বলেন মীর। জানালেন, পরের বছর নিজের একটা গল্প থেকে ছবি বানাতে চান, এটা তার প্রস্তুতি।

এপ্রিলের কলকাতার আবহাওয়া তাঁকেও সর্দি ধরিয়েছে। তাঁর কাজ তো মূলত গলার। সেটা আটকে যাওয়ার ভয় হয় না? লাফিয়ে উঠে বললেন, ‘‘হয় না মানে! পাঁচ বছর আগে একবার ভাঙ খেয়ে দু’ঘণ্টা কেঁদেছি আর বলেছি, যদি আর কথা বলতে না পারি! রাতে দুঃস্বপ্নে দেখি, আমার গলা থেকে আওয়াজ বেরোচ্ছে না।’’ নিজের গলা দিয়ে আওয়াজ না বেরোলে কী করবেন? প্ল্যান বি আছে? ‘‘মিমিক্রি পারি তো। অন্যের গলায় কথা বলব,’’ স্বভাবসিদ্ধ মজায় ফেরত আসেন মীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mir Team work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE