Advertisement
E-Paper

মুভি রিভিউ: পিতা-পুত্রের অমলিন কথকতা

ছবির শুরুতে ১০২ বছরের বাবাকে (অমিতাভ বচ্চন)জীবন নিয়ে মেতে থাকতে দেখা যায়। অথচ, ৭৫ বছরের ছেলে (ঋষি কপূর) ঠিক তাঁর বিপরীত।

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৮ ১৭:৫১
১০২ নট আউট।

১০২ নট আউট।

এরকমটা আজকাল প্রায়ই হয়। নিজের ভাষার ছবিতে যা খুঁজে বেড়াচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না, তা এসে দিয়ে যায় অন্যভাষার ছবি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক হিন্দি ছবিতে সেই নাগরিক উচ্চারণ পাই। পাই আধুনিকতা। যে আধুনিকতা পাওয়া যেত ’৭০-’৮০-র মূলধারার ছবিতেও।সে ‘বসন্তবিলাপ’ হোক আর ‘দেয়া-নেওয়া’। এত কথা বলছি, ‘১০২ নটআউট’ ছবিটি দেখে। সেন্স অফ হিউমার আর স্মার্টনেসের মিশেল আর তাঁর সঙ্গে সারল্য সিনেমাকে এই জটিলতম যুগেও কোথাও পৌঁছে দিতে পারে, তা এ ছবি আর একবার প্রমাণ করল। পরিচালক উমেশ শুক্ল পিতা-পুত্রের এমন আখ্যান কতটা মায়ায় যে বাধলেন, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

এ আর এক সমাপতন। এ ছবি যখন বলে ১০২ বছরের বাবা আর তাঁর ৭৫ বছর বয়সী ছেলের গল্প, ঠিক তখনই এ শহরে এক প্রেমিক যুগলকে মারতে আসে বয়স্ক নাগরিকেরা। তার প্রতিবাদে প্রবীণদের কোণঠাসা করে ফেসবুকে নবীনরা, এমন চালচিত্রেই মুক্তি পায় ‘১০২ নটআউট’। আর বলে, ঠিক কোন সুরে এবং দায়বদ্ধতায় বাঁধা থাকতে পারে পিতা-পুত্র।

ছবির শুরুতে ১০২ বছরের বাবাকে (অমিতাভ বচ্চন)জীবন নিয়ে মেতে থাকতে দেখা যায়। অথচ, ৭৫ বছরের ছেলে (ঋষি কপূর) ঠিক তাঁর বিপরীত। তিনি চান আরও দায়িত্ববান হতে। কারণ, সত্যিই তাঁর বয়স হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে, এই বুড়োমি কিছুতে মেনে নেন না ১০২ বছরের বাবা। আরও কিছু বছর দিব্য বাঁচতে চান তিনি। বাড়িতে যৌবনের ফুরফুরে আমেজ বজায় রেখে। তাই, মতান্তর হওয়ায় ছেলেকে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেতে বলেন। তাতে আরও জটিলতা বাড়ে। ছেলে কিছুতে যাবেন না তাঁর বাড়ি ছেড়ে। বাধ্য হয়ে বুড়ো হয়ে যাওয়া ছেলেকে জীবনের পথে ফেরাতে উঠে-পড়ে লাগেনশরীরে ১০২, কিন্তু মনে ২৬-এর বাবা।ছেলেকে নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিয়ে যান তিনি। ছবির এই অংশটা ভারি মজার। কখনও প্রেমপত্র লেখা তো কখনও মুম্বই ঘুরতে বেরনো। ক্রমশ জীবনের প্রতি টান ফিরে পান ছেলে। নিজের ছেলেবেলা মনে পড়ে। মনে পড়ে জীবনের সারল্য। বাবা হেসে ওঠেন, বলেন, যত দিন বাঁচছ, একদিনও না মরে বাঁচো।

আরও পড়ুন: ‘হারিয়ে যাওয়ার গান’ নিয়ে এল ‘উমা’

আরও পড়ুন: ‘পুরস্কারের জন্য আমি কাউকে বোতল দিতে পারব না’

কিন্তু ইন্টারভালের পর থেকে এ ছবি অন্য মোড় নেয়। জানা যায়, মনমরা হয়ে থাকা ৭৫ বছরের ছেলের বিষণ্ণতার কারণ, তাঁর বিদেশবাসী পুত্র। আমেরিকায় সেই পুত্রকে সেটল করার ব্যাপারে সব উজাড় করে দিয়েছেন ঋষি কপূর। কিন্তু নিজেরটা গুছিয়ে নিয়ে বাবার আর খোঁজ রাখেনি সেই প্রবাসী। হঠাত্ সে চিঠি লিখে জানায়, বাবার কথা মনে পড়ায় সে ফিরছে। ৭৫ বছরের বাবার চোখে জল আসে এই খবরে। কিন্তু ১০২ বছরের বাবা বাধা হয়ে দাঁড়ান। বারবার মনে করিয়ে দেন, কীভাবে তাঁকে একা ফেলে চলে গিয়েছিল প্রবাসী পুত্র। এবং আজ কেবল সম্পত্তির টানে কেমন ফিরে আসছে।

ছবির শেষে ছেলেকে বাড়ি লিখে দেবে কি না বা প্রতিবাদ জানাবেন বাবা, তা দর্শকের জন্য সাসপেন্স থাক। আমি শুধু দেখছিলাম, কতটা মায়া নিয়ে ফের পিতা-পুত্র দৃশ্য আঁকলেন পরিচালক। আর তা সম্পাদনা করলেন বোধাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। একটুকু বাড়িয়ে বলছি না, কিছু কিছু দৃশ্যে‘গল্প হলেও সত্যি’রপিতা-পুত্রকে মনে পড়ছিল। চারপাশে যখন পান থেকে চুন খসলে সম্পর্ক ভাঙার জন্য সভ্য-আধুনিকেরা উঠে পড়ে লাগছে, তখন এ ছবি আর একবার মনে করিয়ে দেয় মানুষের মূল্যবোধের কথা। আদত সম্পর্কের কথা। বলে, অতীতকে নিয়েই ভবিষ্যতের দিকে চলতে হয়। নয়তো বড় বেজন্মা হয়ে ওঠে চারপাশ। ঠিক আজ যেমন বড় বেরঙিন সব কিছু!

102 not out movie
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy