পরিচালক অনুরাগ সিংহের এটি চতুর্থ ছবি।
‘কেশরী’ আসলে তেমনই একটি ছবি, যা আপনি আগেও দেখেছেন। হ্যা, ‘লগান’ বা ‘বর্ডার’-এর মতো ছবিগুলি দেখতে দেখতে আপনার যেমন মনে হয়েছে, তেমনই একটি ছবি ‘কেশরী’। এক কথায়, ভুলে যাওয়া ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা যুদ্ধের ছবি। ‘ওয়ার ফিল্ম’। বসন্তকালে আর একবার যা নতুন করে দেখতে পারেন।
দেশ শব্দটা বড় সমস্যার। ‘গোরা’ উপন্যাসে রবি ঠাকুর এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন কিছুটা। দেশ তো আসলে তাই, যা বুকের ভেতর অনুভব করি। গোটা ব্রহ্মাণ্ড যেখানে টের পাই। তাই তো আসলে দেশ। ধর্ম।
এ ছবি দেখতে দেখতে কথাগুলো আবার মনে পড়ছিল। পড়ছিল, কারণ সাম্প্রতিক অতীতে যুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক তর্জা দেখল ভারতবাসী। যে দেশে এখনও ৬০ শতাংশ মানুষ একবেলা খেতে পান না, সে দেশে, যুদ্ধ করে লাভ কী! গুপি গাইন ছবির হাল্লা রাজার মতোই বলতে ইচ্ছে করে, যুদ্ধ করে করবি কি তা বল? প্রতিদিন সীমান্তের মানু্ষের প্রাণ হারানোর খবর। অন্যদিকে যুদ্ধ জয়ের গান। আনন্দ। উৎসব। এই তৈরি করা ফ্রেমের সঙ্গে কি দেশাত্মবোধের কোনও মিল আছে?
‘কেশরী’ ছবিতে অক্ষয়কুমারকে দেখতে দেখতে এই প্রশ্নই চাগাড় দিচ্ছিল। তাঁর মাথার পাগড়ির জন্য তিনি প্রাণ দিতেও পারেন। তিনি দায়বদ্ধ তার স্বজাতির প্রতি। দায়বদ্ধ, শত্রু আফগানদের সাথে কোনও আপোষ না করার রাস্তায়। দায়বদ্ধ, ইংরেজরা প্রভু হলেও, মাটির অপমান মেনে না নেওয়াতে।
আরও পড়ুন, আমি এখনও সফল নই, বলছেন রাধিকা
পার্বত্য এলাকা আর যুদ্ধ দেখার ঘোরে এ ছবি দেখে যাওয়া যায়। মাঝে মাঝে হিউমার দেখতেও বেশ লাগে। যুদ্ধ করতে করতে এক সৈন্যের আকস্মিক বাতকর্ম বা পরিণীতি চোপড়া ও অক্ষয় কুমারের প্রেমের মুহূর্তগুলো খুবই সুন্দর। আচমকামনে হয়, বাইরে পলাশ ফুটেছে গাছে। তাই বুঝি এত প্রেম! তায় আবার দোলের মরসুম, পরের মুহূর্তেই জাম্প কাটে যুদ্ধের স্পেক্ট্যাকল। সুবিশাল সৈন্যবাহিনী দেখে মনে হয়, এই বিশালতা কতকটা বাহুবলীর মতোই। ইতিহাস অবশ্যই আছে এখানে, সরঘড়ির ইতিহাস, ২১জন শিখের আমরণ লড়াই ১০ হাজার আফগানের বিরুদ্ধে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি আছে মিথ বানানোর আখ্যান। অক্ষয় যখন তার সেনাবাহিনীকে যিনি জল দেন, তাকে বলেন, "যুদ্ধের সময় আপনার কাজ, জল দেওয়া, গুলি চালানো না। যদি বিরোধী সেনা পরাস্ত হয়ে জল চায়, তাকে তা দেওয়া আপনার কর্তব্য।’’বস্তুত এ সংলাপে, বেজে ওঠে শিখ ধর্মের পরম। বাজে, জাত যোদ্ধার দ্রোহ। যা পরাস্ত হতে শেখেনি। মাথা নিচু করতে শেখেনি।
যুদ্ধের ভিএফএক্সগুলি আর একটু ভেবে ব্যবহার করা যেত বলে মনে হয়েছে।
পরিশেষে যদিও তাকে এক রকম পরাস্ত হতে হয়, কিন্তু কীভাবে ও কেন, তা জানতে এ ছবিটি দেখতে হবে।
ভিএফএক্সগুলি আর একটু ভেবে ব্যবহার করা যেত বলে মনে হয়েছে যুদ্ধের। অকারণ যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাবের বদলে আর একটু প্রেম ও হিউমার এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে গান রাখা যেতে পারত। এ লেখার গোড়ায় যে ছবিগুলির নাম করা হল, তাতে তো তার কমতি ছিল না। বরং আরও কম্প্যক্ট হয়েছে তাতে ছবি। এখানে তার অভাব বোঝা যায়।
আরও পড়ুন, তৈমুরের লাইমলাইটে থাকা নিয়ে কী বললেন শর্মিলা?
তবু, সব মিলে এই উগ্র জাতীয়তাবাদী সময়ে ইতিহাসের নাড়িতে হাত রেখে আর একবার আত্মসম্মানের গল্প বলল কেশরী। বলল, আত্মসচেতন হতে। বলল, স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারী হওয়া নয়। বাইরে মানুষ যেমন রং নিয়ে যুদ্ধ করছে, সে ভালবাসার যুদ্ধ বরং অনেক ভাল এই সব বোকা-বোকা যুদ্ধের থেকে। পরিণীতি বারবার যেভাবে অক্ষয়কে মনে করিয়ে দেন তার ঘরের কথা, মা-র কথা, তাতে মায়া হয়। ভাল লাগে তাদের দেখতে। আরও কিছুটা দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পরমুহূর্তেই যুদ্ধ ফিরে আসে। আর কিছুটা ক্লান্ত করে।
পরিচালক অনুরাগ সিংহের এটি চতুর্থ ছবি। আগের ছবিগুলিতেও নানা ভাবে পাঞ্জাবি সম্প্রদায়ের আত্মসম্মানের কথাই বলেছেন তিনি। এ ছবিও সে ধারাবাহিকতায় অটুট। মাত্র জনা কয়েক শিখ, কীভাবে অপমানের শোধ নিলেন, আর কীভাবে প্রতি মুহূর্তে আমরা স্বজাতির সম্মান সঁপে দিচ্ছিবিদেশি পুঁজির হাতে, তা থেকে কিছু শেখা গেলেও যেতে পারে। তাই পরিচালককে ধন্যবাদ।
(মুভি ট্রেলার থেকে টাটকা মুভি রিভিউ - রুপোলি পর্দার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy