Advertisement
E-Paper

মুভি রিভিউ: ‘মহালয়া’ ফিরে দেখার ছবি, ইতিহাসের উজ্জ্বল উদ্ধারও

মহালয়া আমার কাছে কোনও পুরাকালের ঘটনা নয়।

ঊর্মিমালা বসু

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ২০:৫২
উত্তমকুমারের ভূমিকায় অনবদ্য যিশু।

উত্তমকুমারের ভূমিকায় অনবদ্য যিশু।

পরিচালক: সৌমিক সেন

অভিনয়: প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক

বিষ্টি নেই, কিন্ত বিষ্টি পড়ছে।

মনে পড়ছে, ‘ঘরের কোণে মিটিমিটি আলো,/চারিদিকের দেওয়াল জুড়ে ছায়া কালো কালো।/বাইরে কেবল জলের শব্দ ঝু...প ঝু...প ঝু...প।/দস্যি ছেলে গল্প শুনে, একেবারে চুপ।’

এই ভরা বিকেলে মনটা চুপ করে এলিয়ে পড়ে আছে।

ছবির একটি বিশেষ দৃশ্যের মতো, শুধুমাত্র রেডিও সেট থেকে আসা আলোয়, ছায়া কালো কালো ঘরে কোলের ওপর একটি রেকাবিতে একমুঠো তিল নিয়ে বাবা তর্পণ করবেন বলে তিল বাছছি আমি, মায়ের হাতে উল কাঁটা, কোল ঘেঁসে পম্পা, বাবাই কম্বলের আসনে মাটিতে, বুবু বুয়া তক্তপোষে ঘুমচোখে বসে আছে, মহালয়া শুনছি আমরা। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, ‘মহালয়া’ ছবিটি দেখে আজ এই সব ব্যক্তিগত স্মৃতিমেদুরতা ঘিরে ধরেছে আমাকে।

আরও পড়ুন: ‘আমি বিয়ে করব না, কে আমাকে বিয়ে করে দেখি...’​

আমি মানুষটি, ইমারত ভাঙার খুব পক্ষপাতী নই। কাজেই ছবিটি দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে আমার দোনামনা ছিল। ছিল একটু আস্তিন গোটানো মনোভাবও, উত্তমকুমারের মহালয়া জমেনি, সেটা নিয়ে আবার ছবি করা কেন? ছবিটি দেখার পর আমি আমার সব অস্ত্র সমর্পণ করছি। এটি ফিরে দেখার ছবি, ইতিহাসের উজ্জ্বল উদ্ধারও।

মহালয়া আমার কাছে কোনও পুরাকালের ঘটনা নয়।

স্পষ্ট মনে আছে, সে বার মহালয়া সকালে ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’ বাজিয়ে শুরু হল না। পূর্বঘোষিত উত্তম কুমারের ‘দুর্গা দুর্গতিহারিণী’ শুনলুম। উত্তমকুমারের অন্ধ ভক্ত আমিও, ভাসতে পারলুম না। কী যেন নেই, কী যেন নেই। ছবির উত্তমকুমারের ভাষায় ‘আগমনীর আমেজ’ নেই কি? আমি তো ধর্মপ্রাণ কেউ নই, যে বলব আমার ভক্তিভাব এল না, কিন্ত পুজোর গন্ধ মায়ের গন্ধ হয়ে আসেনি সে বার, সকালটা অকারণ বেদনায় নীল কুণ্ডলী পাকালো না গলার ভেতরে। রাত্তিরে আমার বর জগন্নাথ বসু ফিরে বললেন, তর্পণ ফেরত গঙ্গা স্নানার্থীরা আকাশবাণীর বারান্দায় দেখতে পেয়ে ওদের পিতৃমাতৃকূল উদ্ধার করে দিয়েছেন। এমন কথাও শোনা গেছে, অসুর দমন করতে মা দুর্গার দরকার নেই, আকাশবাণীর দুর্গা দুর্গতিহারিণীই যথেষ্ট!

ইতিহাস তো শুধু ঘটনার সঙ্কলন নয়, সময়ের দলিল। যিনি সঙ্কলন করছেন, তাঁর চেতনার রঙে আঁকা। আমার সময়ের ঘটনা এক তরুণ পরিচালক তাঁর চোখ দিয়ে দেখে যে ভাবে নতুন আর পুরনোর সংঘাত আর উত্থানপতন দেখিয়েছেন তা জীবনেরই অঙ্গ। মহালয়ার সেই বিশেষ সকালে বীরেনদা যখন একইসঙ্গে বলছেন ‘মায়া উপড়ে ফেলতে নেই’ কিংবা ‘হাতের মুঠো আলগা করতে হয়’, তখন একই সঙ্গে জীবন একটি সম্পূর্ণ বৃত্ত হয়ে ধরা দেয়। যে মুন্সিয়ানায় সৌমিক কিংবদন্তিদের আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন, যে যত্ন এবং শ্রদ্ধা নিয়ে তা নবীন প্রবীণে বিরোধের কথা বলে না। বরং বলে ‘পুরনো মাঝে যা কিছু ছিল চিরকালের ধন, নূতন তুমি এনেছো তাহা করিয়া আহরণ।’

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চরিত্রে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: ‘পুলওয়ামা’ নিয়ে ছবির নাম নথিভুক্ত করাতে বলিউডে লম্বা লাইন!​

অভিনয় প্রসঙ্গে কিছু বলার নেই। প্রতিটি চরিত্রই সাবলীল। বীরেনদার চরিত্রে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, চেনা মানুষটির হাঁটাচলা, বেশভূষা, মায় নস্যি নেওয়ার ভঙ্গি নিয়ে এত সজীব যে মন খারাপ হয়ে যায়। যিশু সেনগুপ্তর উত্তমকুমার অবিশ্বাস্য ভাবে বিশ্বাসযোগ্য। বিশেষ ভাবে তাঁর শরীরী ভাষা, কথ্য ভঙ্গি, উত্তমকুমারও যে আমাদের নস্টালজিয়ার আর এক নাম! পঙ্কজ মল্লিকের ভূমিকায় শুভ চমৎকার। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রটি সাদা-কালোয় ধূসর একটি পূর্ণ মানুষ, অভিনয়ও সুন্দর। প্রসেনজিৎ ছকভাঙা অন্য রকম ভাল!

সব শেষে একটি কথা না বললেই নয়। জীবনের স্বাভাবিক নিয়মে শেষ জীবনটায় বীরেনদাকে অনাদৃত হতে দেখেছি, হেরে যাওয়া, ভিতু মানুষের মতো অবহেলিত হতে দেখেছি। এই ছবিটি যেন সেই সব অসম্মানের উত্তর। সিপিয়া রঙের আঁকিবুঁকিতে পরিচালক ‘হাওয়ায় তাজমহল’ নির্মাতা বীরেন ভদ্রকে সেই বাঞ্ছিত অমরত্বই দিলেন!

মনটা ভরে আছে অকাল মহালয়ার আলোর বেণুতে...

(মুভি ট্রেলার থেকে টাটকা মুভি রিভিউ - রুপোলি পর্দার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)

Movie Review Mahalaya Jissu Sengupta Uttam Kumar Tollywood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy