আসলে আমাদের সমাজটা দুষ্টু লোকেদের হাতে। সেটা জানত সোনার কেল্লার মুকুল। আর জানে রেনবো জেলি’র ঘোতন। ঘোতনের মামা গন্ডারিয়া এক জন দুষ্টুলোক। খালি মারে। বাড়ির কাজ করায়। পাড়ার বন্ধুরা ঘোতনকে বলে কাজের লোক। খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসেও। খুব কষ্ট পায় ঘোতন। কান্না আসে। বাবা-মা তো আকাশে থাকে। তাই, রাত্রে ছাদে শোয় ঘোতন। তারা হয়ে যাওয়া বাবা-মা কে সব বলে। তার পর কখন যে ঘুম চলে আসে!
সৌকর্য ঘোষাল বড় মায়া দিয়ে বানিয়েছেন ‘রেনবো জেলি’। লীলা মজুমদারকে উৎসর্গ করা এ ছবি ছোটদের। আর তাই আদৌ ছোটদের নয়। বরং বেশি রকম বড়দের গালে থাপ্পর। ঘোতন স্পেশ্যাল চাইল্ড। তার প্রতি অবহেলা আর ভালবাসার ফিল্টারে চার পাশের সমাজের নগ্নতা নিষ্ঠুর ভাবে দেখিয়েছেন সৌকর্য। ছোটদের জন্য আমরা সব ভালবাসা দিই। কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের এম্প্যাথি নেই। কমপ্যাশন নেই। আদ্যন্ত অবদমিত একটা সমাজ। নিজেদের না পারার বোঝা চাপাই তাদের ঘাড়ে। তাদের নাম দিই পাগল। যেমন, ঘোতনের মা-কেও অপয়া বলা হয়েছিল। তার পর তাঁকে মেরে ফেলা হয়। এ ছবির শেষেও ঘোতনকে তাই বলা হয় অপয়া। বলে পাড়ার লোকেরা। ঘোতন কিন্তু জেতে। বাবা-মার স্বপ্ন সত্যিও করে। কী ভাবে সেটা দেখতেই আপনাকে যেতে হবে হলে।
নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্রকার সৌকর্য। ইন্ডাস্ট্রি সেট-আপের ভেতরে থেকে প্রথম ছবি পেণ্ডুলাম থেকেই অন্য ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ইলাস্ট্রেশনের প্রতি বিশেষ আগ্রহের ছাপ এ ছবিতেও স্পষ্ট দেখা যায়। ছবির অ্যানিমেশনের কাজ তারই করা। এ ছবি দেখতে দেখতে মনে পড়বে ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর কথা। মনে পড়বে, তারে জামিন পর-এর কথা। পুরনো কলকাতার বাড়ি, কালীঘাটের স্কাইলাইন, নস্টালজিয়া ফিরে ফিরে আসে এ ছবিতে। সেই ঘরানাতেই সচেতন ভাবে থাকতে চান তিনি। কিন্তু বার বারই এ সব কিছু ছাপিয়ে এ ছবি হয়ে ওঠে ঘোতনের ছবি। বড় ভাল অভিনয় করেছে ছোট ছেলেটি। ভাল লেগেছে দামিনী বসুর অভিনয়ও। আর জমিয়ে দেন পরিপিসি শ্রীলেখা মিত্র।