আবেগের কাছে হেরে গেল বাস্তবতা।
ব্রেকটা যে কোথায় চাপতে হবে, সেটা খেয়াল না রাখলেই কেলেঙ্কারি! তখন পাহাড়ে ওঠার পরেও গাড়ি গড়িয়ে যেতে পারে খাদের দিকে।
এ ছবির ক্ষেত্রেও ঘটেছে তেমনটাই। বিদেশি লোকেশন, বাবা-মেয়ের সম্পর্ক, মেয়ের মারণ ব্যাধি আর দুর্গাপুজো— উপাদানের ডালিতে অভাব ছিল না কিছুরই। কিন্তু ওই যে, ব্রেকটা ঠিক জায়গায় চাপা হল না। ফলে স্বপ্নপূরণের গল্প হয়ে গেল পরিচালকের ইচ্ছেপূরণের এক ‘ম্যাগনাম ওপাস’। বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠার সমস্ত শর্তকে যা হেলায় ছক্কা মেরে পাঠিয়ে দিল বাউন্ডারির বাইরে। আবেগের কাছে গো-হারান হেরে গেল বাস্তবতা।
গল্পের শুরু সুইৎজারল্যান্ডের কোনও অসামান্য সুন্দর জায়গায়। ছোট্ট উমা (সারা সেনগুপ্ত) সেখানে থাকে তার বাবা হিমাদ্রির সঙ্গে। হিমাদ্রি ঘ্যামা কোনও চাকরি করেন। প্রচুর টাকা তাঁর। দামি গাড়ি, বড় বাড়ি, মেয়ের গভর্নেস, সেক্রেটারি— জীবন একেবারে কানায় কানায় পূর্ণ। শুধু স্ত্রী নেই। তিনি অনেক আগেই ছেড়ে গিয়েছিলেন তাঁকে। মেয়ের তখন দু’বছর বয়স।
উমা কোনও এক মারণব্যাধিতে আক্রান্ত। হাতে রয়েছে মাত্র কয়েক মাস। ডাক্তারের কাছে এ কথা শুনে পাগলের মতো হয়ে ওঠেন হিমাদ্রি। কী করবেন, ভেবে পান না। উমা দুর্গাপুজো দেখেনি কখনও। কিন্তু দুর্গার গল্প তার মুখস্থ। বহু বার শুনেছে হিমাদ্রির কাছে। হিমাদ্রি ঠিক করলেন, উমাকে কলকাতায় নিয়ে যাবেন এবং বসন্তকালেই সেখানে শহর জুড়ে তৈরি করবেন নকল দুর্গাপুজো। যেমন বলা, তেমন কাজ। হিমাদ্রি কলকাতায় এলেন। এবং দিন দশেকের মধ্যে সমস্ত ব্যবস্থাও করে ফেললেন। ব্রহ্মানন্দ চক্রবর্তী নামে বদমেজাজি এক পরিচালক (অঞ্জন দত্ত) রাজিও হয়ে গেলেন গোটা কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব নিতে।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘হামি’ দেখিয়ে দিল আমরা আদ্যোপান্ত ক্লিশে
কলকাতায় এসে একটি বার মাকে দেখতে চায় উমা। তাই উমার জন্য নকল মা-ও (শ্রাবন্তী) জোগাড় করে ফেললেন ব্রহ্মানন্দ। ঠিক হল, একটি বড় আবাসনের ভিতরে নকল পুজোর সেট তৈরি হবে। আর সেই আবাসনেরই একটি ফ্ল্যাটে আসল বাবার সঙ্গে এসে নকল মায়ের সঙ্গে থাকবে উমা। গল্প এ পর্যন্ত ঠিকঠাক, মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য ছিল। কিন্তু উমা কলকাতায় এসেই বায়না ধরে, সে ম্যাডক্স স্কোয়ার, দেশপ্রিয় পার্ক, একডালিয়া, মহম্মদ আলি পার্ক-সহ বড় বড় পুজোও দেখতে চায়। পরিচালক ব্রহ্মানন্দ চ্যালেঞ্জটা নিলেন আর তিন দিনের মধ্যে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে খান পাঁচ-ছয় থিম পুজো দাঁড় করিয়ে দিলেন। ব্যস, গল্পের গরু বাঁই করে একেবারে মগডালে উঠে পড়ল।
চোখের ভাষায় অনবদ্য অভিনয় করতে পারে সারা।
ওই আবাসনেই আবার থাকেন হিন্দুত্ববাদী মহীতোষ শূর (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)। তিলক কেটে, গেরুয়া পাঞ্জাবি পরে একেবারে ‘জয় শ্রীরাম’ টাইপ। তিনি এই অকালে পুজোর ঘোর বিরোধী। অকালবোধন-টোধন জাতীয় তত্ত্বকেও হেলায় উড়িয়ে দিলেন। ওই পুজো তিনি বন্ধ করেই ছাড়বেন বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন। পুলিশের কাছে গিয়েও কাজ না হওয়ায় মহীতোষ গেলেন এক বিহারি গুন্ডার (বাবুল সুপ্রিয়) কাছে। সেই গুন্ডা আবার লোকলস্কর নিয়ে যিশুকে চমকাতে এসেই উমার দিকে তাকিয়ে গলে জল। কেঁদেকেটে একশা হয়ে ফিরে গেলেন বেচারা।
উমার ঘটনার কথা জানতে পেরে এক দিন কেঁদে ভাসালেন মহীতোষও। অতএব, এত কান্নাকাটির পরে উমার স্বপ্নপূরণে যে আর কোনও বাধা থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য। ব্রহ্মানন্দের অনুরোধে গোটা টলিউডও এসে দাঁড়ায় উমার পাশে। গল্পের যা মতিগতি, তাতে আশঙ্কা হচ্ছিল, এই বুঝি উমার মাথায় হাত বোলাতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যপালও এসে দাঁড়িয়ে পড়বেন!
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘রেনবো জেলি’র ঘোতন আসলে ভগবান, মাক্কালি!
এ ছবিতে সকন্যা অবতীর্ণ হয়েছেন যিশু সেনগুপ্ত। নামভূমিকায় থাকা খুদে সারা সেনগুপ্তের এটাই আত্মপ্রকাশ। বাঙ্ময় আর উজ্জ্বল চোখের মেয়েটি এই ছবির অন্যতম বড় প্রাপ্তি। চোখের ভাষায় অনবদ্য অভিনয় করতে পারে সে। আর যে দু’জনের কথা না বললে অন্যায় হবে, তাঁরা হলেন অঞ্জন দত্ত ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অঞ্জন এই ছবিতে সম্ভবত জীবনের সেরা অভিনয়টা করেছেন। প্রতিটি দৃশ্যেই তিনি অসামান্য। অনির্বাণের কথা নতুন করে কিছু বলার নেই। তিনি যে জাত অভিনেতা, তা এর আগেই বেশ কয়েক বার প্রমাণ করেছেন। আবারও করলেন। অনুপম আর নীল দত্তের সুরে কয়েকটি গানও বেশ ভাল। আবহসঙ্গীতও চমৎকার।
সব শেষে একটাই কথা বলার, যে বিদেশি ঘটনার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ ছবি তৈরি হয়েছে, সেখানে ছোট্ট ইভান লেভারসেজের জন্য তৈরি হয়েছিল নকল বড়দিন। যার মাস দু’য়েকের মধ্যেই মারা যায় শিশুটি। সৃজিতকে ধন্যবাদ, তিনি উমার পরিণতিটা সরাসরি ইভানের মতো হতে দেননি। বরং ছেড়ে দিয়েছেন ভবিষ্যতের হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy