জীতু কমল-দিতিপ্রিয়া রায়ের কলহ নাকি মিটল না? তার জেরে ধারাবাহিক ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারেন অভিনেতা, শোনা যাচ্ছে এমনই। ‘আর্য সিংহ রায়’-এর জায়গায় আসবেন নতুন নায়ক। অর্থাৎ, ধারাবাহিক ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
ধারাবাহিকে নয়, বাস্তবে এখানেই ‘টুইস্ট’। জ়ি বাংলার এই ধারাবাহিক দেখানো হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায়। একই সময়ে স্টার জলসায় দেখানো হয় পরিচালক সৌমেন হালদারের ‘লক্ষ্মী ঝাঁপি’। রেটিং চার্টে প্রমাণিত, ‘স্লট লিডার’ হওয়া নিয়ে দুই ধারাবাহিকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এ ছাড়া, সৌমেন এর আগে জীতুকে পরিচালনা করেছেন ‘মিলন তিথি’ ধারাবাহিকে।
সকলেই কমবেশি জানেন, জনপ্রিয় জুটি ভেঙে গেলে অথবা নতুন নায়ক এলে তার ছাপ ধারাবাহিকে এবং রেটিং চার্টে ভালই পড়ে। নতুন নায়ক কতটা গ্রহণযোগ্য হবেন, তিনি নিজেকে চরিত্রের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবেন কি না— এ সবে অনেকটা সময় চলে যায়। আপাতত তাই কি ফাঁকে মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ পাবে ‘লক্ষ্মী ঝাঁপি’? দুই ধারাবাহিকের মধ্যে প্রতিযোগিতা কি একটু হলেও কমল?
আনন্দবাজার প্রশ্ন করেছিল পরিচালক সৌমেনকে। তিনি মেনে নিয়েছেন সে কথা। তাঁর মতে, “আগের সেই প্রতিযোগিতা একটু হলেও কমল। কারণ, জীতু-দিতিপ্রিয়ার রসায়ন ওই ধারাবাহিকের প্রাণভোমরা। ওঁদের অভিনয় দেখবেন বলে দর্শক মুখিয়ে থাকেন। জীতু চলে গেলে সেই আগ্রহ কিছুটা হলেও কমবে।” সেই জায়গা থেকেই তাঁর আফসোস, বিপরীতে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে আপনা থেকেই কাজ ভাল হয়। সেটা আর হবে না। একই সঙ্গে এ ভাবে একচ্ছত্র রাজত্ব চালাতেও আপত্তি তাঁর। সৌমেনের কথায়, “আমি প্রতিযোগিতায় জিতব বলে বিপরীতে যে থাকবে তার ক্ষতি চাইব, এ রকম কোনও দিন মনে আসেনি। দিনের শেষে আমরা একটাই ইন্ডাস্ট্রি। আমরা যা করি ইন্ডাস্ট্রির উন্নতির জন্য করি।”
কথায় কথায় উঠেছে ‘মিলন তিথি’ প্রসঙ্গও। সৌমেন জানিয়েছেন, “জীতুর বরাবর প্রশ্ন বেশি। নিজের চরিত্র নিয়ে কৌতূহল বেশি। প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার করে ফেলে পরিচালককে। এটা ওর ভাল গুণ।” তার বাইরে আর কারও সঙ্গে এমন কিছু অভিনেতা করেননি, যা পরিচালকের চোখে দৃষ্টিকটু!
একই কথা বলেছেন ওই ধারাবাহিকেরই আর এক পরিচালক রাজেন্দ্রপ্রসাদ দাস। ওঁর ধারাবাহিক ‘রাণী রাসমণি’ দিয়ে ছোটপর্দায় দিতিপ্রিয়া রায়ের নায়িকা রূপে উত্থান। রাজেনের কথায়, “ওঁরা দুজনেই ভীষণ ভাল অভিনেতা এবং পেশাদার। পরিশ্রমী, কাজের প্রতি মনোযোগী। নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন।” উভয় অভিনেতার কারও মধ্যেই তিনি ‘আপত্তিজনক’ কিছু দেখেননি কখনও। এর বাইরে তাঁর আর কিছুই বলার নেই।
অতীতে যে শোনা গিয়েছে, জীতু নাকি ‘এনওসি’ দিয়ে ‘মিলন তিথি’ ধারাবাহিক ছেড়ে দিয়েছিলেন? নেপথ্যে অভিনেত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য এবং পর্দায় দ্বিতীয় নায়কের প্রাধান্য?
এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ধারাবাহিকের প্রযোজক স্নিগ্ধা বসু। তিনি সাফ বলেছেন, “জীতু এমন কিছু করেনি, যার জেরে সেটে কোনও অশান্তি তৈরি হয়েছে। এটা ঠিক, ও একটু বেশি খুঁতখুঁতে।” এ-ও জানিয়েছেন, দ্বিতীয় নায়কের প্রাধান্যের কারণে নয়, ওর চরিত্র গল্পের কারণে ইতিবাচক থেকে নেতিবাচক হয়ে উঠছিল। এতে জীতু আপত্তি জানিয়েছিলেন। “ও শুরু থেকে বলেছিল, নেতিবাচক চরিত্র করবে না। তাই ‘এনওসি’ দিয়ে বেরিয়ে যায়।” নায়ক প্রসঙ্গে স্নিগ্ধার আরও দাবি, “জীতু যথেষ্ট সংযত বলেই আমাদের আর একটি ধারাবাহিক ‘অর্ধ্বাঙ্গিনী’রও নায়ক ছিল ও। বিপরীতে নবনীতা দাস। ওর প্রাক্তন স্ত্রী। আমাদের ধারাবাহিক করতে করতেই তো ওদের বিয়ে!”
পরিচালক অনীক দত্তের ছবি ‘অপরাজিত’। বড়পর্দায় ‘সত্যজিৎ রায়’ জীতু। নিন্দকদের দাবি, এর পর থেকেই নাকি হাবভাবে বড় বদল অভিনেতার!
সত্যি নাকি? জীতুর সহ-অভিনেত্রী সাংসদ সায়নী ঘোষের সাফ জবাব, “সারা ক্ষণ নিজের চরিত্রে ডুবে থাকত। কথাই বলত না কারও সঙ্গে! বললেও সেটা ছবি সংক্রান্ত কথা।” তার উপরে তিনি জীতুর থেকে বয়সে বড়। “আমাদের মধ্যে বা সেটে তাই হয়তো কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি।” তবে মনোমালিন্যের কারণে জনপ্রিয় ধারাবাহিক থেকে নায়ক বা নায়িকার সরে যাওয়াকে সমর্থন করেন না সায়নী। তাঁর মতে, সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি— এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর।
‘অপরাজিত’র আগে জীতু ব্যস্ত ছিলেন আকাশ আটের ধারাবাহিক ‘শুধু তোমার জন্য’তে। ওই ধারাবাহিকে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছেন চৈতি ঘোষাল। কী বলছেন তিনি? চৈতি জীতুর পাশাপাশি দিতিপ্রিয়াকেও চেনেন। তিনিও উভয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বলেছেন, “দিতিপ্রিয়া অনেক ছোট থেকে কাজ করছে। ইন্ডাস্ট্রিতেই বড় হয়েছে। খুবই মিষ্টি মেয়ে।” একই ভাবে জীতু ভীষণ সিরিয়াস, কাজে বুঁদ হয়ে থাকা এক অভিনেতা। তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য হচ্ছে শুনে চৈতি অবাক। পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছেন, তিনিও কোনও দিন অভিনেতার আচরণে আপত্তিকর কিছু খুঁজে পাননি।
জীতু যেমন প্রযোজক স্নিগ্ধার একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন, তেমনই নায়িকা টুম্পা ঘোষের বিপরীতে একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ আর ‘রাগে অনুরাগে’— এই দুটো ধারাবাহিকে দেখা গিয়েছে তাঁদের। তাঁর অভিজ্ঞতাও কি দিতিপ্রিয়ার মতোই? প্রশ্ন রাখতেই টুম্পার জবাব, “প্রথমত, অভিনয়ের বাইরে বাকিদের সঙ্গে খুবই কম কথা বলি। অন্য কোনও বিষয়ে মাথাও ঘামাই না। দ্বিতীয়ত, দৃশ্য শেষ হয়ে গেলে আমাদের মধ্যে খুব কম কথা হত।” এ ছাড়া, সেটেও তাঁরা চরিত্র, অভিনয়, সংলাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ফলে, অন্য রকম কিছু ঘটার সুযোগই ঘটেনি।
বদলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে। আফসোস করেছেন, “নায়ক-নায়িকার মনোমালিন্য যদি ধারাবাহিকের উপরে কুপ্রভাব ফেলে, তা হলে তার থেকে দুঃখের ঘটনা আর কিছুই হতে পারে না।”