নুসরত জাহান
মহিলাদের অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াইয়ে সামনের সারিতে এসে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী নুসরত জাহান। শোনালেন ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, ঘৃণার প্রবল বাণের মুখে দাঁড়িয়ে তাঁর জীবনের কথা, সিদ্ধান্তের কথা। অভিনেত্রী-সাংসদের কথায়, দাম্পত্য বিষাক্ত হতে শুরু করলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। তাঁর মতে, কেবলমাত্র সমাজের চোখরাঙানির ভয়ে প্রতিবাদ না করলে নিজে ভাল থাকা যাবে না। সম্প্রতি নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বললেন নুসরত।
নুসরত বললেন, ‘‘আমার লড়াই আমাকেই লড়তে হবে। কেউ কারও হয়ে গলা তুলবে না। এখন যদি লোককে দেখানোর জন্য ছলনার আশ্রয় নিয়ে মিথ্যে জীবন যাপন করি, স্বামী অত্যাচার করলেও সমাজের ভয়ে চুপ থাকি, লোকের সামনে স্বামীর ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য আওয়াজ না তুলি, তবে নিজের জীবনটা কোথাও যেন হারিয়ে যাবে। নিজেদের ক্ষতগুলোকে লুকিয়ে রাখতে রাখতে মহিলারা নিজস্বতা হারিয়ে ফেলবে।’’
জীবন একটাই, তাই সমস্ত মহিলাকে নুসরতের পরামর্শ, ‘‘মনের আনন্দে বাঁচুন সবাই।’’ যেই মহিলারা বিপদে রয়েছেন বা যাঁদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাঁরা যেন প্রশাসনের দ্বারস্থ হন, সেই পথও দেখালেন নুসরত। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সকলেই তাঁদের পাশে রয়েছি। শুধু একটু মুখ ফুটে বলতে হবে।’’
বিয়ে ও মাতৃত্ব নিয়েও নুসরত নিজের মতামত প্রকাশ করলেন। নিখিল জৈনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে (নুসরতের বিবৃতি অনুযায়ী, সহবাস), যশ দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গুঞ্জন এবং সন্তান ধারণ করার জন্য বিতর্কের ঝড়ের মাঝেও তিনি এই প্রসঙ্গকে এড়িয়ে গেলেন না। একটি গর্ভনিরোধক ওষুধের সংস্থার প্রচারের জন্য পরিচালক এবং প্রযোজক সুদেষ্ণা রায়ের সঙ্গে মাতৃত্ব ও মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় বসলেন নুসরত। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের অবস্থান, অস্তিত্ব সংকটকে দূর করার একটি প্রয়াস নিল সেই সংস্থা। ফেসবুক লাইভে নুসরত এবং সুদেষ্ণা এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সোচ্চার। তাঁরা নিজেদের জীবন নিয়েও কথা বললেন পরোক্ষ ভাবে।
নারী জন্ম মানেই যে মা হওয়া নয়, সেই কথাই বার বার উচ্চারণ করলেন দুই শিল্পী। অন্তঃসত্ত্বা নুসরত বললেন, ‘‘মাতৃত্ব আশীর্বাদ, সেটা অস্বীকার করার জায়গা নেই, কিন্তু নিজের শরীর ও মন প্রস্তুত না হলে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।’’
সুদেষ্ণা বললেন, ‘‘অনেকেই মনে করেন, মেয়েরা ছোট বয়স থেকে প্রেম করলে সেটা অন্যায়। সেটা বন্ধ করার জন্য বাবা মায়েরা বাল্য বিবাহ দিলে সেই পদক্ষেপকে তাঁরা সঠিক বলে মনে করেন।’’ উত্তরে নুসরত বললেন, ‘‘প্রেম করা মানেই বিয়ে নয়।’’ তাঁর কথায় সায় দিয়ে সুদেষ্ণা বললেন, ‘‘প্রেম করাটা অন্যায়ের নয়, তবে হ্যাঁ নিজেকে কোন পথে নিয়ে যাব, সেটা বিবেচনা করে দেখতে হবে। ১৬ বছর বয়সে কারও সঙ্গে পালিয়ে গেলে তাঁর জীবনটাও নষ্ট হয়ে যাবে।’’ সুদেষ্ণার পরামর্শ, আগে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিয়ে তার পর বিয়ে নিয়ে ভাবা উচিত।
সেই প্রসঙ্গেই উঠে এল পিতৃতান্ত্রিক সমাজের দায়ভারের কথা। নুসরতের মতে, পুরুষরা মহিলাদের সম্মান করবেন কিনা, তার প্রাথমিক শিক্ষা আসা উচিত পরিবার থেকে। মা-বাবারা যদি তাঁদের ছেলেদের এই শিক্ষা দেন, তা হলে সমাজে অনেক কিছুই সংশোধনের দিকে যাবে। তেমনই ভাবে অভিভাবকদেরকে নুসরতের পরামর্শ, কন্যাসন্তান হলে তাঁকে বোঝানো উচিত, সমাজের ভয়ে মাথা নত করা ঠিক নয়। সেই প্রসঙ্গে নুসরত বললেন, ‘‘আমার মেয়ে হলে তাঁকে আমি শেখাব, সে যেন কখনও মাথা নত না করে।’’
তা ছাড়া ব্যঙ্গ বিদ্রুপ নিয়ে সুদেষ্ণা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘তোমার জীবন নিয়ে অর্ধেক খবর জেনে মিথ্যে কথা রটানো বা কুমন্তব্য করা— এই সমস্তই চোখে পড়ে। কী ভাবে সামলাও এ সব?’’ অভিনেত্রীর সাফ জবাব, ‘‘সামলাই না তো। সামলানো বন্ধ করে দিয়েছি। মানুষের নেতিবাচকতাকে গায়ে মাখি না। তবে এইটুকু বলব, স্বল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী। তাই কোনও বিষয় নিয়ে না জেনে মন্তব্য করা উচিত নয়। সেটা কেবল আমার কথা বলছি না। সব ক্ষেত্রেই এই বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত।’’
লাইভ চলাকালীন একাধিক নেটাগরিক নুসরতের প্রতি তাঁদের ভালবাসা জানিয়েছেন। নেতিবাচক মন্তব্য, ঘৃণার মাঝেও নায়িকার অনুরাগী ও শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যা কম নয়। সে কথা ফের প্রমাণ হল লাইভে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy