বেলগাছিয়ায় শ্যুট শেষ করেই পার্ক স্ট্রিট। ফ্লুরিজ-এ প্রেস কনফারেন্স। দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই পোশাক পাল্টানোর সময় হয়নি। বসার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের প্লেট সামনে। ‘‘আপনারা কী লাকি! কত খাবারের অপশন কলকাতায়! কোনটা আগে খাব?’’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই রাম বল-এ কামড় দিলেন পরিনীতি চোপড়া...
দু’বছর পর শ্যুট করছেন। ভয় করছে?
নাহ্, মাঝে অনেক শো করেছি তো। ভয় ঠিক না। তবে টেনশন আছে...
টেনশন কাটাতে দিদি (প্রিয়ঙ্কা চোপড়া) কী টিপস দিলেন?
টিপস বলতে যা বোঝায় সেটা ও দেয় না। এমনিতে প্রায়ই কথা হয় দিদির সঙ্গে। সমস্যায় পড়লে দিদি তো আছেই। আসলে, ওর জীবনের নানা গল্প বলে। সেগুলোই এত ইন্সপায়ারিং যে, আর টিপস লাগে না। এই যেমন সে দিন ফোন করে বলল, ‘‘আমার ছবি টাইম-এর কভারে যাচ্ছে।’’ আমি তো হা হয়ে গেলাম। ‘কোয়ান্টিকো’র আগে বলেছিল, ‘‘অ্যাই, আমি না একটা আমেরিকান টিভি সিরিজে অভিনয় করছি।’’ আমার মুখ থেকে শুধু বেরোয়, ‘ওহ, রিয়েলি! ওহ, রিয়েলি’। আর কী বলব! দেখুন না, এটা বলতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
কলকাতায় শ্যুটিংয়ে তো প্রথমবার এলেন?
হ্যাঁ, প্রথমবার। তবে অনেক গল্প শুনেছি অর্জুন (কপূর)-এর কাছে। চায়না টাউনের কথা বলেছে সুজয় (ঘোষ)। শ্যুটিংয়ের চাপ একটু কমলেই একদিন চায়না টাউন যাব।
আপনি বেশ ফুডি, না?
ওহ, প্রচণ্ড। ফিটনেস-টিটনেস নিয়ে আমার কোনও ইন্টারেস্ট নেই। করতে হয়, তাই করা। ইনফ্যাক্ট গত দু’বছরে সেটা বেশ ক্ষতিই করেছিল। ওজন বেড়ে গিয়েছিল সাংঘাতিক। অভিনেত্রী তো দূরের কথা, ২৫-২৬ বছরের যে কোনও ছেলে-মেয়েও ওই চেহারা দেখলে আঁতকে উঠবে। একদিন ঠিক করলাম, অনেক হয়েছে। এ বারে ওজন ঝরাতেই হবে। সত্যি বলছি, আমার তো মেক আপ-হেয়ার স্টাইলিং এ সবও অসহ্য লাগে। বাড়িতে শর্টস-টিশার্টেই আমি বেশি স্বচ্ছন্দ।
এই প্রথম তো গানও গাইলেন। এটাও কি দিদির অনুপ্রেরণায়?
(হেসে) না, না, অনুপ্রেরণা না। তবে গান গাওয়ার অফারটা পেয়েই দিদিকে কল করেছিলাম। ও বলল, ‘‘ওয়াও, দারুণ খবর তো।’’ টিপস দেয়নি। তবে, কয়েকটা টেকনিক্যাল জিনিস শেখাল। অটো টিউনে না যাওয়ার কথাও বলল। সমস্যায় পড়লে, জানি, দিদি তো আছে। বোম্বে ফিরে রেকর্ডিং হয়ে গেলে, আবার ওকে ফোন করব।
কেকেআর ম্যাচে ইডেনে দেখলাম তো আপনাকে?
হ্যাঁ, গেছিলাম। শাহরুখ বলেছিল, কলকাতা থাকলে যেন জানাই। রবিবার শ্যুটও তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। সেটা জানিয়ে মেসেজ করেছিলাম শাহরুখকে। ও বলল চলে আসতে। এমনিতে আব্রামের (শাহরুখের ছেলে) সঙ্গে আমার হেব্বি জমে। কেকেআর-আব্রাম সব মিলিয়ে দারুণ সময় কাটিয়েছি। আর ইডেন গার্ডেন্স! অ্যাটমোস্ফিয়ার দেখে আমি তো পুরো প্রেমে পড়ে গেছি। শুনলাম, ওই দিনই নাকি কলকাতায় প্রথম বৃষ্টি হল। ইউনিটের সবাই বলছিল, আমি নাকি বৃষ্টি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি (হাসি)।
ইডেন ছাড়া কলকাতার আর কী কী ভাল লাগল?
(আঙুল গুনে) এক, খাবার। দুই, মানুষ। এত আন্তরিক শহর আমি আর কোথাও দেখিনি। তিন, আর্কিটেকচার। আর চার, শপিং...
কী কী খারাপ লাগল?
হুমমম... ট্র্যাফিক। খুব খারাপ। (একটু ভেবে) তবে বোম্বেতেও তো তাই। এটা বোধহয়, সব মেগাসিটিরই সমস্যা। আর গরম! এখনও খুব বেশি আউটডোর করতে হয়নি, এই রক্ষে। তবে কাল থেকে আবার আউটডোরের শিডিউল আছে। বাব্বা, যেন বৃষ্টি হয় সকালে।
আচ্ছা, আয়ুষ্মানের সঙ্গে তো এই প্রথম জুটি। ওঁকে কেমন লাগল?
আয়ুষ ভীষণ সুইট গাই। ও তো আমাকে মাঝে মাঝে কলকাতায় কী করব, কী করব না — তার টু ডু লিস্ট দিয়ে যাচ্ছে। আসলে আমরা তো কাছাকাছি জায়গার লোক। ও চণ্ডীগড়ে আর আমি বড় হয়েছি আম্বালায়। তাই দু’জনের পছন্দ-অপছন্দ অনেকটাই মেলে। এই তো ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’র লোকেশন থেকে এখানে আসার সময় গাড়িতে দু’জনে আর ডি বর্মন শুনতে শুনতে আসছিলাম।
ছবিতে আপনার চরিত্রও কি বাঙালি?
নাহ নাহ, তামিল। বিন্দু শঙ্কর আইয়ার। তবে অনেক দিন বাংলায় আছে। তাই কিছুটা বাঙালি হয়ে গিয়েছে। (হেসে) বাংলায় থাকলে এটাই হয়, সবাই কিছু দিন পর বাঙালি হয়ে যায়।
আচ্ছা, শেষ প্রশ্ন। দিদির থেকে পাওয়া টিপসের মধ্যে সেরা কোনটা?
(একটু ভেবে) অনেক দিন আগে একটা কথা বলেছিল, ‘‘জাস্ট বি ইয়োরসেল্ফ। নিজের মতো হও। লোকে কে কী বলল, তাতে মাথা ঘামিও না।’’ আমি সেটাই করি।
(অন্য সাংবাদিকদের টেবিলে যাওয়ার জন্য উঠলেন। আর উঠতে উঠতে ওয়েটারকে চেঁচিয়ে বললেন, ‘‘খাবারের প্লেটটা একটু এই টেবিলে নিয়ে আসুন না।’’)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy