ছবির পোস্টারে বিবেক ওবেরয়।
হীরক রাজার দেশের চরণদাস গান থামাননি। থামাননি, কারণ সেটাই জগতের নিয়ম। রাত্রি যতই অন্ধকার হোক, থেমে থাকার উপায় নেই কবির। অন্ধকার সময়ে তিনি অন্ধকারেরই গান গাইবেন— ‘‘দেখো ভাল জনে রইল ভাঙা ঘরে / মন্দ যে সে সিংহাসনে চড়ে...।’’ কবি-গদ্যকারেরা তো লিখবেনই।
প্রবীণ কবি গুলজ়ার তাই কবিতাতেই চিঠি লিখলেন অনুজপ্রতিম কবি জাভেদ আখতারকে— ‘জাডু, তোমার পাশে আছি। কলম থামবে না। লেখা চলবে হৃদয়ের রক্ত নিংড়ে।’
ডাক দিয়েছিলেন জাভেদই। গত ১৬ মার্চ দিল্লির কবি সম্মেলনে পাঠ করেছিলেন নিজের অপ্রকাশিত কবিতা। তাতে লেখকদের উদ্দেশে ছিল কবির আহ্বান— ‘‘যে কথা বলতে ভয়, তুমি তা-ই লেখো, / আসেনি কখনও এমন আঁধার রাত... তুমি
লেখো / যে কলম গেয়েছে জয়গান এত দিন / ছুড়ে তা ফেলে দিয়ে... / লেখো সত্যি কলমের গান, হৃদয়ের রক্তে ভিজিয়ে...।’’
সব কিছু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেননি কবি। তবে মুখে তো বলেছেন বহু বার— ধর্ম আর রাজনীতির জটপাকানো অন্ধকার সময়ের কথা। গত কালই, নির্বাচনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর জীবন
অবলম্বনে তৈরি চলচ্চিত্রের পোস্টারে গীতিকার হিসেবে নিজের নাম দেখে চমকে উঠেছিলেন জাভেদ। বলেছিলেন, ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’ ছবির জন্য আদৌ কোনও গান তিনি লেখেননি! আজ সেই ছবির প্রযোজক সন্দীপ সিংহ বলেছেন, জাভেদের লেখা ‘১৯৪৭: আর্থ’ ছবির ‘ঈশ্বর আল্লা’ গানটা ব্যবহার করা হয়েছে ছবিতে। তাই পোস্টারে রয়েছে তাঁর নাম। যেমন রয়েছে ‘সুনো গওর সে দুনিয়াওয়ালো’-র গীতিকার সমীর, সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা গীতিকার প্রসূন জোশী-সহ আরও ছ’জনের নাম।
কপিরাইটের বালাই নেই! দেশভাগের পটভূমিকায় তৈরি এক ছবির গান অবলীলায় জুড়ে গেল গৈরিক রাজনীতির প্রচারে। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ সমীর আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘জাভেদজি ফোন করেছিলেন। বললাম, ওই ছবির জন্য আমি কোনও গান লিখিনি। আমার অনুমতি না নিয়ে, আমাকে না-জানিয়ে আমার নাম ছবির পোস্টারে ব্যবহারের সাহস ওঁদের হয় কী করে?’’
‘‘আমি কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়...।’’ যুক্তি নেই, ব্যাখ্যা নেই। এমন চাপ চাপ আঁধারের কথাই কি বলেছিলেন জাভেদ? যে আঁধারে রবীন্দ্রভক্ত গুলজ়ার দেখতে পান, নিলামে উঠছে সিংহাসন। তিনি লিখছেন, ‘জাভেদ আখতার কে নাম’—
‘‘জাডু, তোমার ডাক শুনেছি /শুনেছি তোমার কথা / একলা
নও তুমি / এ আহ্বান... শুনেছি
আমরাও / সিংহাসন বিক্রি ছিল কাল / দাম ধরা, নিলামের হাঁক, খোলা বাজারে... শুনেছি আমরা / হৃদয়ের রক্তে আঙুল ভিজিয়ে নিয়েছ তুমিও / আগেও তো কলমের ঝংকার
শুনেছি আমরা...।’’
ফৈজ় থেকে গালিব একাকার হয়ে যান রূপকে। জেগে থাকেন কবি।
‘‘এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy