Advertisement
E-Paper

শ্রীজাতের জীবনে আমি আর লেখা যেন মেজবৌ-সেজবৌ! কবিতাই ওর প্রথম প্রেম

“কটাক্ষের শিকার হতে হতে এমন দশা যে এখন এ সব খুব ভাল সামলাতে পারে। নিজের দায়িত্বে অটল। ফলাফলের চিন্তা করে। বাকি সময় আলসেমি আর গানে ডুব।”

দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:২৬
শ্রীজাতের সঙ্গে দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শ্রীজাতের সঙ্গে দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রচণ্ড অলস, কুঁড়ে বলতে যা বোঝায়, কবি হলেন তা-ই। সুযোগ পেলেই গান শুনতে বসে যান। মনের মতো লোক পেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা। আপ্যায়নের দায়িত্বও তখন নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি।

তবে এটুকুই নয়। পরিবারের কারও সমস্যা হলে তখনই তাঁর পাশে। প্রথম প্রেম— অবশ্যই লেখালিখি। শ্রীজাতের কাছে লেখালিখি আর আমি যেন মেজবৌ-সেজবৌ! দু’জনকেই দরকার। দু’জনেরই সমান গুরুত্ব, দু’জনেরই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কবির জীবনে। কবি স্বামীর জন্মদিনে লিখতে বসে এই গুলোই মনে পড়ল সবার আগে।

আসলে শ্রীজাতকে কোনও বাঁধা ছকে ফেলা যায় না। অবসরে যে মারাত্মক আলসে, কাজের ভার পড়লে সেই মানুষটাই ভোর পাঁচটায় উঠে পড়ে। লিখতে বসে যায়। দরকারে মাঝরাত পর্যন্ত সেই লেখা চলে। ‘পুষ্পা ২’-এর কথাই ধরা যাক। যখনই ডেকেছে তখনই চেন্নাই চলে গিয়েছে। কলকাতা থেকেও রাতের পর রাত জেগে ছবির প্রযোজনা সংস্থার নির্দেশ পালন করেছে। আমি তো দেখেছি, দক্ষিণী ছবির মূল ভাবনা ধরে রেখে তাকে বাংলায় লেখা কী শক্ত! সেটা করার পর বাংলায় যখন আর ছবিটি মুক্তি পেল না তখন কিন্তু শ্রীজাত-র মধ্যে আর কোনও হেলদোল দেখা গেল না। নিজের চারপাশে অদ্ভুত নিরাসক্তির বলয় তৈরি করে নিয়েছে। না, আগে এটা পারত না। যতটা নন্দিত, ততটাই নিন্দিত কবি। প্রথম প্রথম প্রতিক্রিয়া দিত। ক্রমে নিজেকে সইয়ে নিয়েছে। বুঝতে শিখেছে, এটা খ্যাতিরই অঙ্গ। তাই এখন ভীষণ নির্লিপ্ত, শুধু কাজটুকু করে যায়।

একান্তে শ্রীজাত-দূর্বা।

একান্তে শ্রীজাত-দূর্বা। ছবি: দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও কত উল্টোপাল্টা ব্যাপার ওর মধ্যে আছে। খুব ভাল প্রেমের কবিতা লেখে। কিন্তু প্রেমিক হিসেবে ততটাও রোম্যান্টিক নয়! অনেকে ভাবেন, স্বামী কবি মানেই স্ত্রীর উদ্দেশে ঝুড়ি ঝুড়ি কবিতা! একেবারেই না। হয়তো দেখা গেল, স্ত্রী নয় পছন্দের অন্য একাধিক নারীকে নিয়ে কবিতা লিখছে শ্রীজাত। তবে হ্যাঁ, আমাকে নিয়ে একেবারে কিছু লেখেনি তা নয়। আমায় আদরের নামে ডেকে লিখেছে কিছু লেখা। কিন্তু এখনই সেগুলি প্রকাশ্যে আনতে রাজি নয় ও। আমি বুঝি এ সব। বিষয়টি নিয়ে ততটাও মাথা ঘামাই না। জানি, মানুষ মাত্রেই বহুগামী। একাধিক প্রেম থাকাটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি, মানুষ বলেই আমরা নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারাই না। আমার আর শ্রীজাতর মধ্যে তাই বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া, আর আদানপ্রদান। সব মিলিয়ে চরম ভাল আছি। শ্রীজাতকে প্রচুর জন প্রচুর প্রেম নিবেদন করেন। কবিরও মাঝেমধ্যে কাউকে কাউকে মনে ধরে যায়। তাই নিয়ে পরে আমরা আলোচনা, হাসাহাসি— সবই করি।

আর একটা ইতিবাচক দিক শ্রীজাতের। একদম ঝগড়া করতে পারে না। আমি একা রেগে যাই। নিজেই চেঁচিয়ে মরি। নিজে নিজেই থেমে যাই! কবির কোনও হেলদোলই নেই। অথচ, এই মানুষটিই পরিবারের প্রতি দায়িত্ববান। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে সব সময় সেখানে উপস্থিত। মনের মতো কোনও অতিথি আসবেন, শ্রীজাত নিজের কাঁধে তাঁকে আপ্যায়নের দায়িত্ব নিয়ে ফেলল। সঙ্গী অবশ্যই আমি। দু’জনে মিলে পানাহারের তালিকা বানাই। তবে দরদাম করে বাজারহাট করার বেলায় তার আর দেখা পাওয়া যায় না। বিদেশে গেলে আমার জন্য টুকটাক উপহার আনে। আর হ্যাঁ, বয়স বাড়ছে বলেই বোধহয় ওর কলম আরও পরিণত।

যাঁরা ভাবেন, কবির সঙ্গে ঘর করা কতই না রোম্যান্টিক, তাঁরা এ বার বুঝতে পারলেন তো?

Srijato Durba Bandyopadhyay birthday wish
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy