দেবশ্রী রায় থেকে মিমি চক্রবর্তী— একসময় তাঁকে ছাড়া চলতে পারতেন না টলিপাড়ার তাবড় নায়িকারা। কোন নায়িকাকে কী পোশাক পরলে মানাবে, নায়কের চুলের কায়দা কেমন হলে তাঁকে ভাল লাগবে, সবটাই নির্ভর করত ‘স্টাইলিস্ট’ সন্দীপ ঘোষালের ভাবনার উপর। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই তাঁকে ‘স্যান্ডি’ নামেই ডাকেন। তিন বছরে টলিপাড়ায় সেই স্যান্ডির আনাগোনা কমেছে। কেন?
২০২২ সালের মাঝের সময়। মস্তিষ্কে যক্ষ্মা ধরা পড়ে তাঁর। তার পর থেকে শুরু এক কঠিন সময়। কয়েক দিনে টলিপাড়ার আলোচিত তাঁর বিভিন্ন ধরনের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দেখেছে দর্শক। সন্দীপের নিত্যদিনের ভিডিয়ো ভাগ করে নেন বন্ধু বিয়াস বসু। কী ভাবে এই অবস্থা হল নামী স্টাইলিস্ট-এর?
বিয়াস জানিয়েছেন, সন্দীপ এবং তাঁর বাড়ি প্রায় কাছাকাছি। একদিন আচমকাই দেখেন, বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গে সন্দীপ রাস্তায় ঘুরছে। তখনই বিয়াস প্রশ্ন করেন সেই পরিচারিকাকে। সন্দীপের পাড়ার কিছু লোকের সঙ্গেও কথা বলেন। প্রত্যেকেই জানিয়েছিলেন, সন্দীপ নাকি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে।
বিয়াস বলেন, “অনেকের থেকেই শুনেছি সন্দীপের যৌনরোগ হয়েছিল। সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে বলতে পারি, ও শারীরিক ভাবে এখন সুস্থ। ব্রেন টিবি বেশ কিছু কোষ নিষ্ক্রিয় করে দেয়, যার ফলে এই অবস্থা। তবে এখন অনেকটাই সুস্থ। মানসিক সমস্যা রয়েছে। মনোবিদের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করা হচ্ছে সুস্থ করে তোলার। ব্রেন টিবি এখন সেরে গিয়েছে। এখন একটাই সমস্যা, ‘শর্ট টাইম মেমরি লস’। কলেজজীবনের পর থেকে আর কিছু মনে নেই ওর।”
একসময় মিমি, নুসরত জাহান-সহ বহু নায়িকার ছায়াসঙ্গী ছিলেন সন্দীপ। তাঁদের কথা কি মনে পড়ে? বিয়াস বললেন, “মনে না করিয়ে দিলে কারও কথা বলে না ও। আগে তো নাকি খালি কান্নাকাটি করত। বলত পাগল হয়ে গিয়েছে। এখন ডিজ়াইন নিয়ে কথা বললে শান্ত হয়ে জবাব দেয়। না হলে নাচতে থাকে, পাগলামি করতে থাকে।”
পরিবার বলতে সন্দীপের যত্ন নিচ্ছেন তাঁর মেসোমশাই এবং মাসতুতো ভাই। বাবার মৃত্যুর পরে মা আর সন্দীপই থাকতেন। কিন্তু মা এখন খুবই অসুস্থ। হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁর মা ক্যানসার আক্রান্ত। তার মধ্যে হাত ভেঙে শয্যাশায়ী।
বিয়াস মডেলিং থেকে এখন ছোটপর্দার অভিনেত্রী। ‘ফুলকি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। এখন ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন তিনি। বিয়াস ঠিক করেছেন, ধারাবাহিকে তাঁর চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা শেষ হলে তিনি ছ’মাসের ছুটি নেবেন। পুরো সময়টাই দেবেন সন্দীপকে,যাতে তিনি আবার মূলস্রোতে ফিরে আসতে পারেন। বিয়াস বলেন, “এর মধ্যে সন্দীপ যোগাযোগ করেছিল ওর পুরনো মানুষদের সঙ্গে, যারা ওর পোশাক তৈরি করে দিত। যেখান থেকে পোশাকের সবটা কিনে আনত। ওকে যারা সাহায্য করত। কেউই উত্তর দেয়নি ওর ফোনের। নতুন মানুষেরা এগিয়ে আসবেন আশা করি।”
একসময়ের তাঁর প্রিয় নায়িকা বন্ধুদের কেউ এখনও যোগাযোগ করেছেন বলে জানা নেই বিয়াসের। তবে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত খোঁজ নিতে ফোন করেছিলেন। এমনকি, সন্দীপকে গিয়ে দেখেও এসেছেন।