বাংলা-বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সমাজমাধ্যমে তাঁর বার্তা ছিল, এক নিকট বন্ধু তাঁকে এবং তাঁর স্বামী কুণাল বর্মাকে পথে বসিয়েছেন। বন্ধুকে বিশ্বাস করে তাঁরা সর্বস্বান্ত। জানেন না, কী করে হারানো অর্থ ফিরে পাবেন। বন্ধুবেশী প্রতারকের কথা জানালেও তাঁর নাম সেই সময় তাঁরা প্রকাশ্যে আনেননি। আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করলে পূজা জানান, নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরা সব জানাবেন। শুক্রবার অবশেষে মুখ খোলেন অভিনেতা দম্পতি।
সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁরা কাঠগড়ায় দাঁড় করান বাংলা ছবির প্রযোজক শ্যামসুন্দর দে-কে। পূজা-কুণালের কথায়, “বিশ্বাস করে লগ্নি করেছিলাম। মুম্বইয়ে প্রথম সারির প্রযোজক, পরিবেশকদের সঙ্গে যোগাযোগও করিয়ে দিয়েছিলাম। বিশ্বাস করেছিলাম শ্যামসুন্দরদাকে। তিনিই আমাদের অর্থ আত্মসাৎ করে পথে বসিয়েছেন।”
অভিনেতা দম্পতি যখন শ্যামসুন্দরের নাম গোপন রেখে তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছিলেন তখনই প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টা অভিযোগ করেন প্রযোজক। একাধিক তথ্য-প্রমাণ-সহ বলেন, “অবশ্যই আমাদের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। অবশ্যই ওঁদের সঙ্গে আমি ব্যবসায়িক দিক থেকে জড়িত। তা বলে দেয় অর্থ আদায়ের জন্য ওঁরা আমায় অপহরণ করবেন? আটকে রেখে মারধর করবেন?”
পূজা-কুণাল প্রকাশ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে ফের আনন্দবাজার ডট কমের কাছে তোপ দেগেছেন প্রযোজক। শ্যামসুন্দরের প্রশ্ন, “ওঁরা প্রথমে প্রসঙ্গ তুলেছেন। সত্যিই যদি আমি দোষী হই তা হলে শুরুতেই কেন আমার নাম নিলেন না? আমার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে এত সময় নিলেন কেন?”
এ দিকে পূজা বলেছেন, “ঘটনার আকস্মিকতায় এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি যে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না। সেই সময়েও বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকৃত ঘটনা জানতে চেয়েছিল। প্রত্যেককে একই কথা জানিয়েছি, সময় এলে বলব। অবশেষে সেই সময় এসেছে।” তিনি এ-ও জানান, শ্যামসুন্দরের একটি ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নায়িকা হয়েছিলেন পূজা। তিন বছর পরেও সেই ছবির পুরো পারিশ্রমিক নায়িকা পাননি বলে দাবি তাঁর।
কুণাল বলেন, “শ্যামসুন্দরদা আমাদের পরিবারের একজন হয়ে গিয়েছিলেন। নানা ধরনের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ছিল তাঁর। যা আমাদের জানিয়ে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এই সঙ্গে আমাদেরও কিছু লভ্যাংশ দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। আমরাও মুম্বইয়ের প্রথম সারির অভিনেতা নির্বাচক-প্রযোজক-পরিবেশক যেমন, মুকেশ ছাবড়া, রমেশ তৌরাণির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। প্রত্যেককে আমরা অনুরোধ জানাই, শ্যামসুন্দরদার সঙ্গে ওঁরা যেন কাজ করেন।”
আরও পড়ুন:
পূজা-কুণালের এ-ও দাবি, তাঁরা বাড়ি, সোনা বন্ধক রেখে শ্যামসুন্দরকে অর্থ দিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁরা তা ফেরত পাননি। বলেন, “এ বার সন্তান নিয়ে পথে বসতে হবে। শ্যামসুন্দরদা এ ভাবে আমাদের সর্বস্বান্ত করবেন বুঝতে পারিনি।”
পূজা-কুণালের ভিডিয়ো-বার্তা শ্যামসুন্দরের কাছেও পৌঁছেছে। বার্তার বিপক্ষে তাঁরও একাধিক পাল্টা বক্তব্য। প্রযোজকের কথায়, “ছাড়া পাওয়ার পরেই গোয়ার স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। গোয়া পুলিশ আমায় একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করছে, সেই ফুটেজ প্রশাসনের কাছে আছে। এ ছাড়া, আমার স্ত্রী কিছু তথ্যপ্রমাণ ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে এনেছেন। প্রয়োজনে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে আরও জানানো হবে।” সে ক্ষেত্রে প্রযোজকের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে অভিনেতা দম্পতির দেড় মাস সময় লাগল?
দেব-রুক্মিণী অভিনীত ‘দুর্গ রহস্য’-এর প্রযোজকের দাবি, “আমার বিরুদ্ধে অর্থ ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ। ওঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অপহরণ, শারীরিক হেনস্থার। পূজা-কুণাল বুঝতে পারছেন, কোন অভিযোগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজেদের বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ভুল বক্তব্যে বাকিদের ভোলাতে চাইছেন।”