রবি ওঝার সেই ‘এক আকাশের নীচে’র পরিবার, যা বদলে দিয়েছিল বাংলা টেলিভিশন
মঙ্গলবার সকাল। পেপারটা দরজার সামনে থেকে উঠিয়ে সবে খুলেছি, দেখি ফোন বাজছে।
ফোনের ও দিকে অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘অপু, রবিদা আজ সকালে মারা গিয়েছেন।’’ দু’-একটা এ দিক-ও দিক কথা বলে ফোনটা রেখে সোফায় গিয়ে বসলাম।
চোখ বন্ধ। এক মুহূর্তের জন্য পৌঁছে গেলাম মানিকতলার অরোরা স্টুডিয়োয়। ‘এক আকাশের নীচে’র সেটে।
সেই সিরিয়াল, যার পরিচালক ছিল রবি ওঝা। এবং অনেকের মতে ওই সিরিয়ালের হাত ধরেই বাংলা টেলিভিশনের ভাষাটা বদলে দিয়েছিল রবি।
তার আগে যদি কেউ বাংলা টেলিভিশন বদলেছিলেন, তিনি জোছন দস্তিদার। তার পরে রবি।
কী না করেছিল রবি সেই সময় টেলিভিশন সিরিয়াল নিয়ে। আদিনাথ দাসের মতো ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে প্রথম হ্যান্ডহেল্ড ক্রেন ঢুকিয়েছিল সেট-য়ে। এক একটা সিন আজও কবিতার মতো মনে আছে লোকের।
শুধু কি তাই! ‘এক আকাশের নীচে’ ছিল রবির স্কুল। ওই স্কুল থেকে পাস করেই তার পরের পনেরো বছর বাংলা সিরিয়াল কাঁপিয়েছে এক গুচ্ছ অভিনেতা।
নাম জানতে চান?
রবি ওঝা
রজতাভ, সুদীপা, ভাস্বর, খরাজ, অদিতি, কনীনিকা, সুনীতা, শান্তিলাল, অপরাজিতা, পুষ্পিতা, সমতা, কমলিকা এবং আমি নিজে। এমনকী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম বড় ব্রেক ‘এক আকাশের নীচে’।
তার বহু বছর পর একাধিক জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সিনেমা বানিয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু অনেকেই জানেন না ‘এক আকাশের নীচে’র সেই বিখ্যাত টাইটেল সং কৌশিকের লেখা। সেই সময় রবির মধ্যে দূরদর্শিতা ছিল ট্যালেন্ট খুঁজে বের করার।
তবে আজকে যখন জানি মানুষটা নেই, খালি মনে হচ্ছে রবি বেঁচে গেল।
না, আমি শুধু এত দিন দীর্ঘ রোগভোগের জন্য কথাটা বলছি না, বলছি কারণ এই বদলে যাওয়া বাংলা টেলিভিশনে উনি আর খাপ খাওয়াতে পারতেন না।
সেই সময় একটা সিরিয়ালের সিন পড়ার সময় হাজির থাকতেন সব অভিনেতা, ক্যামেরাম্যান, সাউন্ড রেকর্ডিস্ট। এমনকী সেটে চা দিত যে হারু, তাকেও বসিয়ে দিত রবি। সবাই মিলে আমরা সিন লিখতাম। সেই সিনের রিহার্সাল হতো আধবেলা জুড়ে। তারপর ফার্স্ট টেক। সেকেন্ড টেক। থার্ড টেক। শেষে হাসতে হাসতে রবি বলত, ‘‘ফার্স্টওয়ালা ঠিক থা।’’
এটা আমি সিরিয়ালের শ্যুটিং বলছি কিন্তু, সিনেমার নয়। এই মানসিকতায় যিনি কাজ করেছেন, তিনি আজকের সিরিয়ালের পৃথিবী দেখলে হয়তো কেঁদেই ফেলতেন। আমাদের গুরু ছিলেন রবি। কিন্তু আমরাও সেই রকম ছাত্র ছিলাম যারা গালাগালি খেয়েও দাঁড়িয়ে থাকতাম সেটে। খুব দুঃখের সঙ্গেই বলছি, আজকে কিন্তু এই নতুন জেনারেশন এটা করবে না।
না, রবি ভালই হয়েছে তুমি চলে গেছো।
অনেকেই জানে না, যখন রবি ওর সিনেমা ‘আবার আসব ফিরে’ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল, ‘এক আকাশ সিরিয়াল’টা আমি প্রায় ন’মাস পরিচালনাও করেছি।
ফিরে তাকালে মনে হয়, মানিকতলার ওই স্টুডিয়োটা আমাদের অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো ছিল। যে স্বপ্ন বদলে দিয়েছিল অনেকের জীবন, যে স্বপ্ন বদলে দিয়েছিল বাংলা টেলিভিশন।
এবং সেই স্বপ্নের রূপকার ছিল রবি।
আর সিন শেষে রবির একটা কথা আজকে সারাদিন কানে বাজছে। হাসতে হাসতে রবি বলত, ‘‘জিতনা ভি কোশিস করু, সিন খারাবই নেহি হোতা।’’ যতই চেষ্টা করি, কিছুতেই খারাপ সিন হচ্ছে না।
ভালো থেকো রবি।
নতুন সিরিয়ালের প্ল্যান করো শান্তিতে।
আজকে নীচে নয়, ‘আকাশ’য়ের খুব কাছাকাছি তুমি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy