Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Sex Education

Sex Education: যৌনতার চেনা ছক, নাকি আর একটু বেশি কিছু বলল ‘সেক্স এডুকেশন’?

নেটফ্লিক্সে প্রদর্শিত সিরিজ ‘সেক্স এডুকেশন’-এর সঙ্গে ‘দ্য ব্রেকফাস্ট ক্লাব’-এর পরম্পরার উত্তরাধিকার খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। তবুও দর্শক মনে আলাদা স্থান আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে ওটিস-মেইভ-এরিকরা।

হঠাৎ করে পরিণত হয়ে উঠেছে প্রথম সিজনগুলির সেই খামখেয়ালি কিশোর কিশোরীরা।

হঠাৎ করে পরিণত হয়ে উঠেছে প্রথম সিজনগুলির সেই খামখেয়ালি কিশোর কিশোরীরা।

শ্রয়ণ চন্দ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:১১
Share: Save:

হলিউডের সঙ্গে কৈশোরের স্কুলকেন্দ্রিক প্রেমের গল্পের সম্পর্ক বহুকালের। কৈশোরের টানাপড়েন এবং তার আনুষঙ্গিক যাবতীয় ঘাত-প্রতিঘাতের গল্প সেখানে বলা হয়েছিল। ‘দ্য ব্রেকফাস্ট ক্লাব’ থেকে শুরু করে বয়ঃসন্ধির এই সঙ্কটের কথা পাশ্চাত্যের ছবিতে উঠে এসেছে বার বার। নেটফ্লিক্সে প্রদর্শিত সিরিজ ‘সেক্স এডুকেশন’-এর সঙ্গে এই পরম্পরার উত্তরাধিকার খুঁজে পাওয়া স্বাভাবিক। সেই চিরাচরিত স্কুল, যেখানে সমস্ত কার্যকলাপই একটি পর্যায়ের পরে আরোপিত লাগে। বাস্তবের স্কুলের থেকে অনেকটাই আলাদা মনে হতে পারে এই সিরিজের ‘মুরডেল সেকেন্ডারি স্কুল’কে। কিন্তু পর্দায় এ রকম স্কুলের চিত্রায়ন দেখতে দর্শক অভ্যস্ত।

এর পরেও দর্শক মনে আলাদা স্থান আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে ‘সেক্স এডুকেশন’। সিরিজের তৃতীয় সিজনও শুরু হয় সেই পরিচিত স্কুলের গল্প নিয়ে। নতুন প্রধান শিক্ষিকা হোপ হ্যাডন এসেছেন স্কুলের হাল ধরতে। এসেই নিয়মকানুনের বেড়াজালে পড়ুয়াদের ঘিরে ফেলতে উদ্যত হন। যাঁরা ‘হ্যারি পটার’ কাহিনিমালার সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা ‘অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স’-এর প্রফেসর আমব্রিজের সঙ্গে এই চরিত্রের মিল পেতেই পারেন। যাবতীয় মুক্ত চিন্তার থেকে তাঁর ক্রমশ দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা এই সিরিজকে অন্য গভীরতায় নিয়ে যায়। আবার সিরিজের চরিত্র ওটিসের মায়ের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া, অ্যাডামের পরিণতমনস্ক হয়ে ওঠার যাত্রা, রুবির ব্যক্তিগত জীবনের টালমাটাল অবস্থা— এই সব কিছু যেন হঠাৎ করে প্রথম সিজনগুলির খামখেয়ালি কিশোর কিশোরীদের পরিণত করে তোলে। এই ছাপ তৃতীয় সিজন জুড়ে অত্যন্ত স্পষ্ট।

লরি নুন পরিচালিত এই সিরিজ সেই সব কথাই জোর গলায় সকলের সামনে এনে ফেলেছে, যেগুলি সমাজে ‘নিষিদ্ধ’ বা ফিসফিস করে বলতে হয়। কিশোর বয়সে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়াকে দেশ-কাল নির্বিশেষে ‘নিষিদ্ধ’ বলেই গণ্য করা হয়। কিন্তু কিশোর বয়সের মনস্তত্ত্বে যৌনতার অবস্থানকে তো এত সহজে চাপা দেওয়া যায় না! বরং যদি জোর করে চাপা দেওয়া হয়, পরে তা আরও বেশি আকারে ফুটে বার হয়। সম্পর্ক-যৌনসম্মতি-যৌন আত্মপরিচয়— এ সবের সঠিক ধারণা নিয়েই বার বার প্রসঙ্গ এসেছে সিরিজে। নামটি ‘সেক্স এডুকেশন’ হলেও, এই সিরিজে যৌনতার বিবিধ মাত্রাকেই দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতারা। এইখানেই এই সিরিজের সার্থকতা।
এই সিরিজে সে অর্থে কোনও মুখ্য চরিত্র নেই। অনেক মানুষের বিভিন্ন বর্ণালির সম্পর্কের কথা ফুটে উঠেছে গোটা সিরিজে। অভিভাবক-সন্তান, বন্ধুত্ব, প্রেম, শিক্ষক-পড়ুয়া এবং সর্বোপরি একজন কিশোর বা কিশোরীর নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া— সেই সব কিছুকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যত্নের সঙ্গে।

নজর কেড়েছে এরিক ও অ্যাডামের রসায়ন।

নজর কেড়েছে এরিক ও অ্যাডামের রসায়ন।

সিরিজের প্রথম থেকেই নিজের যৌন আত্মপরিচয় নিয়ে সঙ্কটের মুখে পড়ে এরিক । এমন আত্মপরিচয়ের জন্য নির্যাতিত হওয়া, নতুন করে ধর্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটা, এই সব গল্পের কেন্দ্র সে। তৃতীয় সিজনে এক সময়ে দেখা যায়, এরিক তার পরিবারের সঙ্গে নাইজেরিয়ায় ফিরে যায় কয়েক দিনের জন্য। নাইজেরিয়ায় সমকামিতা এখনও আইনত নিষিদ্ধ। এরিক তাই ইংল্যান্ড ছেড়ে যখন সে দেশে যায়, দুই সভ্যতার মধ্যেকার বিস্তর পার্থক্য তার চোখে পড়ে। এই সূত্রে অভিভাবক এবং সন্তানদের মধ্যেকার প্রজন্মগত দ্বন্দ্বকে ‘সেক্স এডুকেশন’ বার বার প্রকাশ্যে এনেছে।
যে কোনও সম্পর্কের সমীকরণেই যে উল্টো দিকের মানুষটির সম্মতি প্রয়োজন, সে কথা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে এই সিরিজে। এইমি এবং অলিভিয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সম্মতির বিষয়টি। দ্বিতীয় সিজনের শেষের দিকে যৌন নিগ্রহ এবং তার সূত্র ধরে মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় এইমি। স্বাভাবিক ভাবেই এই সিজনেও সেই বিপর্যস্ত পর্যায়ের রেশ রয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, সঙ্গমের সময়ে কন্ডোম ব্যবহার করতে চাওয়া-না চাওয়া নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে অলিভিয়ার বিবাদ হয়। এমন ঘটনা যে কোনও যুগলের ক্ষেত্রে ‘স্বাভাবিক’। কিন্তু তাকে প্রকাশ করতে পারে ক’জন?

রুবি তার খোলস থেকে বেরিয়ে এলেও সম্পূর্ণতা পেল না।

রুবি তার খোলস থেকে বেরিয়ে এলেও সম্পূর্ণতা পেল না।

প্রথম সিজন থেকেই ‘সেক্স থেরাপি’ সিরিজের সব চেয়ে জরুরি বিষয়। এই সিজনেও তার অন্যথা হয়নি। যাঁরা নিজেদের যৌন আত্মপরিচয় নিয়ে সংশয়ে থাকেন, তাঁদের যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত যেতে হয়, তা-ও এই সিরিজের মধ্যে রয়েছে। যৌন আত্মপরিচয় নিয়ে অনবরত ধন্দ ও নিজের ভিতরের দ্বন্দ্ব অত্যন্ত সূক্ষ্ম কিন্তু বলিষ্ঠ ভাবে ফুটে উঠেছে নতুন চরিত্র ক্যালের মধ্যে।

কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই সিজনেও ত্রুটি চোখ এড়িয়ে যেতে পারে নি। আগের দুই সিজনের অন্যতম নেতিবাচক চরিত্র রুবি তার খোলস থেকে বেরিয়ে এলেও সম্পূর্ণতা পায়নি। অন্য দিকে, নতুন প্রধান শিক্ষিকা হোপকেও কিছু ক্ষেত্রে একতরফা মনে হয়েছে। রূপকথার খলনায়িকার মতো একপেশে রঙে তাকে দেখিয়েছেন নির্মাতারা।

‘বেড়ে ওঠা’ অবশ্যই একটা যৌথ প্রচেষ্টা, বার বার এই বার্তা দিয়ে গেছে ‘সেক্স এডুকেশন’।

‘বেড়ে ওঠা’ অবশ্যই একটা যৌথ প্রচেষ্টা, বার বার এই বার্তা দিয়ে গেছে ‘সেক্স এডুকেশন’।

সিরিজ জুড়ে একাধিক অভিনেতা নজর কেড়েছেন। যেমন, অ্যাডামের চরিত্রে কনর সুইন্ডেলস, এরিকের চরিত্রে স্যুটি গাটওয়া, এবং জিন মিলবার্নের চরিত্রে জিলিয়ান অ্যান্ডারসন। সব থেকে নজর কাড়ে অ্যাডামই। প্রথম দুটি সিজনের সেই শিশুসুলভ চরিত্রগুলি এখন অনেকটাই অতীত। এরিকের মধ্যে সেই পরিণত হওয়ার ছাপ বিশেষ করে বোঝা যায়। কিন্তু এই সিরিজে যদি কাউকে কুর্নিশ জানাতে হয়, তাঁরা হলেন এই সিরিজের সঙ্গীত নির্মাতা। গোটা সিরিজকে একটি অদ্ভুত আমেজে জড়িয়ে রেখেছে আবহসঙ্গীত।

‘গ্রোথ ইজ আ গ্রুপ প্রজেক্ট’ – সিরিজের এক পোস্টারের উপরে লেখা ছিল এ কথা। ‘বেড়ে ওঠা’ অবশ্যই একটা যৌথ প্রচেষ্টা। সেই সচেতনতার বার্তা দেয় এই সিরিজ। তৃতীয় সিজন দেখার পর প্রশ্ন জাগতে পারে, আরও সিজন আসবে কি? কিন্তু কোথাও গিয়ে মনে হয়, এখানে ইতি টানলেও খুব একটা ক্ষতি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sex Education Netflix Web Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE