Advertisement
E-Paper

Rashmi Rocket: ফিল্মি চলনে ধাক্কা খেল বাস্তব সমস্যা

জেন্ডার টেস্ট নিয়ে যে তথ্য ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে, তা-ও যেন চিত্রনাট্যকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১ ০৮:০২

রশ্মি রকেট
পরিচালক: আকর্ষ খুরানা
অভিনয়: তাপসী, প্রিয়াংশু, অভিষেক, বরুণ, সুপ্রিয়া
৫.৫/১০

বলিউডে আরও একটি স্পোর্টস ড্রামা! আরও একবার এক সাধারণ মেয়ের অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প। ‘রশ্মি রকেট’ ছবির প্রথম দৃশ্য এই ধারণাগুলো ভেঙে দেয়। ‘ছেলে’ হওয়ার অভিযোগে মহিলাদের হস্টেলে পুলিশ ঢুকে জবরদস্তি তুলে নিয়ে যায় রশ্মিকে (তাপসী পান্নু)। রশ্মি কি আসলে ছেলে? দর্শকের কৌতূহল তৈরি করার জন্য শুরুটা মন্দ ছিল না। কিন্তু দু’ঘণ্টার এই ছবিতে যে পথে মহিলা খেলোয়াড়দের একটি বাস্তব সমস্যাকে প্রতিষ্ঠা করা হল, তা নিয়ে আক্ষেপ রইল। কারণ স্পোর্টস ড্রামার মোড়কে হলেও ছক ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন পরিচালক আকর্ষ খুরানা। জেন্ডার টেস্টের (মহিলাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পরিমাপের পরীক্ষা) নামে যে প্রহসনের মধ্য দিয়ে প্রতিভাধর খেলোয়াড়দের যেতে হয়, তা নিয়ে হিন্দিতে সে ভাবে ছবি হয়নি। তাই ছবির প্লট হিসেবে সম্ভাবনা ছিল ‘রশ্মি রকেট’-এর। নামভূমিকায় তাপসীর মতো বলিষ্ঠ অভিনেত্রী। কিন্তু বিনোদন ও বাস্তবতার ছন্দ মেলাতে পারলেন না পরিচালক।

ভারতীয় স্‌প্রিন্টার দ্যুতি চাঁদ এবং অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার তরজা এখনও দেশবাসীর স্মৃতিতে উজ্জ্বল। হাইপারঅ্যান্ড্রোজেনিজ়ম অর্থাৎ মহিলাদের শরীরে স্বাভাবিক নিয়মে উচ্চ টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ নিয়ে কয়েক দশক ধরে উত্তাল ছিল খেলার দুনিয়া। দ্যুতির উপরে চাপানো নিষেধাজ্ঞা পরে তুলে নেওয়া হয়। ‘রশ্মি রকেট’ বায়োপিক নয়। সমস্যাটি দ্যুতির হলেও, দ্যুতি এবং রশ্মির জীবনধারা আলাদা। ছবিতে কোনও বাস্তব চরিত্রের ঋণ স্বীকার করা হয়নি। তবে দ্যুতি যে ছবির অনুপ্রেরণা, তা বুঝতে অসুবিধে হয় না।

রশ্মি প্রেমে পড়ে ক্যাপ্টেন গগন ঠাকুরের (প্রিয়াংশু পাইনুলি)। বলা যায়, গ্রামে ‘রশ্মি রকেট’ নামে পরিচিত সম্ভাবনাময় তরুণীকে ট্র্যাকে দাঁড় করায় তার প্রেমিকই। প্রথাগত তালিম ছাড়াই রশ্মির প্রতিভা তাক লাগিয়ে দেয় তাবড় ব্যক্তিত্বদের। পরে গগনের উৎসাহেই সে যোগ দেয় প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমিতে। ছবির এই পর্বটি বেশ টানটান। রশ্মির এগিয়ে যাওয়ার পথে কাঁটা ছড়িয়ে দেয় অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তি দিলীপ চোপড়া (বরুণ বডোলা)। জেন্ডার টেস্টে অসফল রশ্মির কেরিয়ারে বসে যায় বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন। এর পরে রশ্মির জার্নির সঙ্গী আইনজীবী ইশিত (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়)। কোর্টরুম ড্রামার পথ ধরে গল্পের ইতি।

শরীরী ভাষায় একজন দাপুটে খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তুলে ধরেছেন তাপসী। তাঁর অভিনয় ছবির সম্পদ। প্রিয়াংশুর অভিনয় মন্দ নয়। তবে তাপসীর পুরুষালি চেহারার জন্য হয়তো তাঁর ও প্রিয়াংশুর জুটি ছবিতে ততটা নজর কাড়েনি। অভিনেতা হিসেবে অভিষেক দিনে দিনে পরিণত হচ্ছেন। তাপসীর মায়ের চরিত্রে সুপ্রিয়া পাঠক এবং বিচারপতির চরিত্রে সুপ্রিয়া পিলগাঁওকর বেশ ভাল। অনেক দিন পরে বড় পর্দায় দেখতে ভাল লেগেছে বরুণ বডোলাকে। অমিত ত্রিবেদীর সঙ্গীত গুজরাতের গ্রামের সুর তুলে ধরেছে। তবে এ ছবিতে গান যে গল্পকে এগিয়ে দিয়েছে, তেমনটা কিন্তু নয়।

রশ্মিকে যে কারণে জেন্ডার টেস্ট এবং পরে পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়তে হয়, সেই কারণটি একেবারে গতে বাঁধা বলিউডের ফর্মুলা। সেই ‘তত্ত্ব’ই ছবিকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, খেলার দুনিয়ায় লিঙ্গসমতা নিয়ে যেখানে প্রশ্ন তোলা হয়, সেখানে গর্ভবতী রশ্মিকে দেখানো ছবির নিরিখেও খুবই সহজলভ্য সমাধান। জেন্ডার টেস্ট নিয়ে যে তথ্য ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে, তা-ও যেন চিত্রনাট্যকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। ইশিতের চরিত্রটি যেন হঠাৎ করে ছবির বৃত্তে ঢুকে পড়ে।

ছবির মুখ্য উদ্দেশ্য বিনোদন। সে কথা মাথায় রেখেও বলা যায়, কিছু ছবি তার বিষয়ের জন্যই বিনোদনের ঊর্ধ্বে উঠতে চায়। ফিল্মি অলিগলিতে না গিয়ে, বাস্তবের দরজায় আঘাত হানতে চায়। ‘রশ্মি রকেট’ সে পথে দু’কদম হাঁটলেও, দূরের পথ পেরোতে পারেনি।

review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy