Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Film review

রহস্যের আড়ালে জরুরি প্রশ্ন: শিরোনাম

মুক্তি পেতে সময় লেগেছে বলেই হয়তো ছবির কিছু অনুষঙ্গ একটু সেকেলে।

সীমন্তিনী গুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

কোন খবরকে শিরোনাম বানানো হবে, তা কি ঠিক হবে খবরের সত্যতা ও তার গুণাগুণ বিচার করে? না কি মুখরোচক, কিংবা অসত্য খবরকেও বানিয়ে দেওয়া হবে ‘শিরোনাম’? কোনও অসত্যের সামনে ‘সম্ভবত’ বসিয়ে দিলেই কি খবর ‘তৈরি’ করা যায়? এ ভাবে কি খবর তৈরি করা উচিত?

এই রকম একগুচ্ছ প্রশ্ন দর্শকের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন পরিচালক ইন্দ্রনীল ঘোষ, তাঁর প্রথম ছবি ‘শিরোনাম’-এ। ছবিটি তৈরি হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। এর মধ্যে বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসবে দেখানো হয়ে গিয়েছে ছবিটি। জিতে নিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কারও।

মুক্তি পেতে সময় লেগেছে বলেই হয়তো ছবির কিছু অনুষঙ্গ একটু সেকেলে। যেমন শুরুর গানে ‘হোক কলরব’ শব্দবন্ধটির ব্যবহার। যা মুহূর্তে দর্শককে ২০১৪-র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিক্ষোভের সেই দিনগুলোয় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তা ছাড়া, টিভির পর্দায় ২০১১-র খবরে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুসংবাদ একটু বেশিই পুরনো ঠেকে। আর গত পাঁচ বছরে ছবির কলাকুশলীর বয়সটাও তো বেড়েছে! সেটাও প্রথম প্রথম একটু চোখে ঠেকে বইকি।

শিরোনাম
পরিচালনা: ইন্দ্রনীল ঘোষ অভিনয়: শাশ্বত, যিশু, স্বস্তিকা শান্তিলাল, অঞ্জন
৭/১০

কিন্তু সেই অস্বস্তি নেহাতই ক্ষণস্থায়ী। পর্দায় যখন শ্বাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় ও অঞ্জন দত্তের তুখোড় অভিনয়, তখন এই কয়েক বছরে কে কতটা বুড়োটে হয়েছেন, অত আর খেয়াল থাকে না। মন কাড়ে অঙ্কিতা চক্রবর্তীর অভিনয়। পর্দায় অল্প সময়ের জন্য উপস্থিতি থাকলেও, তিনি অনবদ্য।

এঁদের সঙ্গত করেছে ছবির চিত্রনাট্য, সংলাপ ও ক্যামেরার কাজ। ফ্ল্যাশব্যাকের চমৎকার ব্যবহার ও টানটান কাহিনি শেষ পর্যন্ত দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখে। জঙ্গি-উপদ্রুত এলাকায় ‘স্পেশ্যাল স্টোরি’র খোঁজে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল চিত্র-সাংবাদিক অভিন রায় (যিশু সেনগুপ্ত)। চ্যানেলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে, শুধু টিআরপি বাড়ানোর লোভে, খবরের চ্যানেলের কর্তা রজত (অঞ্জন দত্ত) মুহূর্ত বিলম্ব না-করে ব্রেকিং নিউজ় চালিয়ে দেয়— সাংবাদিক অপহৃত। চ্যানেল থেকেই সেই খবর পেয়ে মুহূর্তে চুরমার হয়ে যায় অভিনের স্ত্রী আনন্দীর (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) ছকে বাঁধা জীবন। এক দিকে নিজের বাড়িতে অভিনের ‘খবরের’ খোঁজে আসা সংবাদমাধ্যমের ভিড়, অন্য দিকে পাহাড়প্রমাণ দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কের বোঝা, আনন্দী ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকে এক ঘোর অনিশ্চয়তায়। কিন্তু সত্যিই কি অপহরণ করা হয়েছে অভিনকে? সেই রহস্য উদঘাটন হয় একটু পরেই। কিন্তু রহস্যের শেষ তো এখানেই নয়। একটির খোলসে লুকিয়ে আছে আরও এক রহস্য। যেমন খবরের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অন্য কোনও খবর।

ঋতুপর্ণ ঘোষের ভাই, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্প নির্দেশক ইন্দ্রনীল ঘোষকে ধন্যবাদ কয়েকটা জরুরি প্রশ্ন ও টানটান গল্পের ‘শিরোনাম’-এর জন্য। দ্বিতীয় ছবির অপেক্ষায় রইলাম। আশা, প্রতীক্ষা এত দীর্ঘ হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Film Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE