E-Paper

হাওয়া ভরা প্যাকেটে কুড়মুড়ে অ্যাকশন

সিনেমা শুরু হল বোমা বিস্ফোরণ দিয়ে। দিল্লির জনবহুল কয়েকটি জায়গায় বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ও ঠিক সময়ে খবর পাওয়ায় কিছু বোমা নিষ্ক্রিয় করে শহরবাসীর প্রাণ বাঁচিয়ে দিল্লি পুলিশের অভিযান শুরু।

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৯
Review of the hindi web series Indian Police Force relaesed on Amazon Prime Video

‘ইন্ডিয়ান পুলিশ ফোর্স’-এর একটি দৃশ্যে সিদ্ধার্থ মলহোত্র ও বিবেক ওবেরয়। ছবি: সংগৃহীত।

শীতের দুপুর। সোফার উপরে কম্বলে গুটিসুটি হাতে রিমোট ধরে শুরু হল রোহিত শেট্টির ‘ইন্ডিয়ান পুলিশ ফোর্স’। শীতশহরে সন্ধে নামার মুখে মুখে নিশ্চয়ই উষ্ণতা বাড়িয়ে দেবে রোহিতের দিল্লি পুলিশবাহিনীর অভিযান। ঝাঁ-চকচকে গাড়িতে কেতাদুরস্ত পুলিশরাও এলেন। কিন্তু তাতে কি দর্শকের মন ভরল?

সিনেমা শুরু হল বোমা বিস্ফোরণ দিয়ে। দিল্লির জনবহুল কয়েকটি জায়গায় বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ও ঠিক সময়ে খবর পাওয়ায় কিছু বোমা নিষ্ক্রিয় করে শহরবাসীর প্রাণ বাঁচিয়ে দিল্লি পুলিশের অভিযান শুরু। সেই অভিযানের মুখ্য দু’জন, ডিসিপি কবীর মালিক (সিদ্ধার্থ মলহোত্র) ও সিপি সিদ্ধার্থ বকশি (বিবেক ওবেরয়)। ছবির গোড়াতেই খলনায়কের মুখোশও খুলে দিয়েছেন পরিচালক। ফলে জ়রার বা হায়দারের চরিত্রে রোহিতের বহু ছবির সহ-পরিচালক ময়াঙ্ক টন্ডনও চলে এসেছেন দর্শকের সামনে। কিন্তু দিল্লি পুলিশের হাত ফসকে পালিয়ে যায় এই মাস্টারমাইন্ড জ়রার, যাকে ধরতে দিল্লি পুলিশের অভিযানে শামিল হয় গুজরাট এটিএস চিফ তারা শেট্টি (শিল্পা শেট্টি)। ছবির এই চার স্তম্ভই মোটামুটি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে সিরিজ়।

দিল্লির পীতমপুরা থেকে রাজস্থানের গোলাপি শহর ছুঁয়ে, গোয়ার সমুদ্রসৈকত হয়ে, সুন্দরবন পেরিয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত চলে গিয়েছে সেই অভিযান। যোগ্য সঙ্গত করেছে বিবেক-সিদ্ধার্থের অ্যাকশন। অনেক দিন বাদে বিবেকের সেই ঝাঁজ দেখা গেল। দিল্লি বাজারের মধ্যে পুরনো বাড়ির সিঁড়ি ভেঙে পুলিশবাহিনী নিয়ে বিবেকের আক্রমণ করার দৃশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছিল ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’র দৃশ্য, যদিও এই সিরিজ়ে তাঁর চরিত্রায়ণ কয়েনের উল্টো পিঠে। ‘কোম্পানি’র রাউডি বিবেকের ছবি ভেসে উঠছিল চোখের সামনে। তবে বিবেকের ঝাঁজ দর্শক অবধি পৌঁছতে না পৌঁছতেই ইতি। সিরিজ়ে শিল্পা ‘প্রেজ়েন্ট প্লিজ়’-এর ভূমিকায়। তারা চরিত্রটি না থাকলেও তেমন ক্ষতি হত না। মহিলা পুলিশ চরিত্র রাখার তাগিদেই যেন তাঁর চরিত্রের অবতারণা। মহিলা পুলিশ চরিত্র যদি শুধু ‘কভার’ করার জন্যই এখনও সিরিজ়ে জায়গা পায়, তা হলে সে জায়গা না দেওয়াই ভাল।

তবে ছবিতে সবচেয়ে প্রাধান্য পেয়েছেন সিদ্ধার্থ ও ময়াঙ্ক। স্ক্রিনটাইমের সদ্ব্যবহারও করেছেন সিদ্ধার্থ। প্রত্যেক দৃশ্যে তাঁর ধোপদুরস্ত চেহারা নজর ফেরাতে দেয়নি। এমন অ্যাকশন করতেও আগে খুব বেশি দেখা যায়নি অভিনেতাকে। সিদ্ধার্থের সঙ্গে দর্শকেরও দুর্ভাগ্য যে, ‘শেরশাহ’ ও ‘ইন্ডিয়ান পুলিশ ফোর্স’ দু’টিই ওটিটির পর্দায় সীমাবদ্ধ।

জ়রার চরিত্রটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন রোহিত। কিন্তু ময়াঙ্কের অভিব্যক্তিহীন চাহনি দর্শকমনে আঁচড় কাটতে অক্ষম। এমন প্রেমিক, উদাসী সন্ত্রাসবাদী এর আগে দেখা যায়নি। বরং ছোট চরিত্রে ভয় ধরায় শ্রুতি পানোয়ার। মন ছুঁয়ে যায় নাফিসার চরিত্রে মিষ্টি বৈদেহী।

ছবির অ্যাকশনে পরিচালক যতটা মন দিয়েছেন, গল্প বলায় তার ছিঁটেফোটাও নেই। ‘দ্য ফ্যামিলিম্যান’, ‘ফ্রিলান্সার’-এর মতো সিরিজ় এখন দর্শকের আঙুলের ডগায়। সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধজগতের শিকড় অবধি যেখানে দর্শককে নিয়ে গিয়েছেন নির্মাতারা, সেখানে রোহিতের এই কপ ইউনিভার্স মাটিও স্পর্শ করেনি, শিকড় তো দূরস্থান। কেতাদুরস্ত পুলিশ ও তাদের কায়দার অ্যাকশন দেখার জন্যই গোটা সিরিজ় শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা যায়। যে মাপের অ্যাকশন ও ক্যামেরার কাজ... তাকে সঙ্গত করার মতো চিত্রনাট্যের জোর নেই। ওটিটিতে এই সিরিজ় ছোট্ট শিশিতে চেপে চেপে ক্যান্ডিফ্লস ঢোকানোর শামিল। ক্যান্ডিফ্লস চুপসে শেষমেশ আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Review Film Review Movie Review Rohit Shetty

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy