Advertisement
১০ মে ২০২৪
Abar Bibaho Obhijaan Review

জনপ্রিয় ত্রয়ী এ বার তাইল্যান্ডে, কেমন হল ‘আবার বিবাহ অভিযান’? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

বাংলায় এখন হাতেগোনা বাণিজ্যিক ছবি তৈরি হয়। ‘আবার বিবাহ অভিযান’ কি এই ঘরানায় নতুন কিছু সংযোজন করতে পারল?

Anirban Bhattacharya, Rudranil Ghosh and Ankush Hazra

আবার বিবাহ অভিযান’ দেখতে হলে ‘যুক্তি’ সরিয়ে রেখে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করা উচিত। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ ১৯:২২
Share: Save:

প্রথমেই কতগুলো জিনিস মনে করিয়ে দেওয়া ভাল। বিগত কয়েক বছরে বাংলা ছবি তার দিক পরিবর্তন করেছে। ফলে অনেকেরই অভিযোগ, বাণিজ্যিক ছবি নাকি এখন কোণঠাসা। ২০১৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল বাণিজ্যসফল ছবি ‘বিবাহ অভিযান’। এ বার সেই প্রতীক্ষিত ছবির সিক্যুয়েল ‘আবার বিবাহ অভিযান’ মুক্তি পেল জামাইষষ্ঠীতে। ছবিটি ভাল, না কি বসে দেখা যায় না, এই নিয়ে সমাজমাধ্যমে আলোচনা চলতেই থাকবে। সে দিকে মনোনিবেশ করা উচিত হবে না, বাংলা ছবির স্বার্থেই।

যাঁরা প্রথম ছবিটি দেখেছেন, মূল গল্প সম্পর্কে তাঁদের একটা ধারণা রয়েছে। প্রথম যাঁরা দেখবেন তাঁদের জন্য একটু গৌরচন্দ্রিকা করাই যায়। বুলেট সিংহ ওরফে গণেশ মাইতির (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) খপ্পরে অনুপম (অঙ্কুশ) এবং রজতের (রুদ্রনীল ঘোষ) পড়ে যাওয়া। বৈবাহিক জীবনে নিজেদের স্ত্রীদের ভূমিকায় যথেষ্ট বিরক্ত দুই বন্ধুর সঙ্গেই আবার বুলেটের দেখা। এ বারে রয়েছে একশো কোটি টাকার সম্পত্তির প্রলোভন। সেই সম্পত্তি উদ্ধার করতেই ত্রয়ী পাড়ি দেয় তাইল্যান্ডে। সত্য জানাজানি হওয়ার পর সেখানে তাঁদের স্ত্রীরাও হাজির হয়। ফলে শুরু হয় প্যান্ডেমোনিয়াম।

Priyanka Sarkar, Sohini Sarkar and Nusrat Faria

ছবির তিন অভিনেত্রীর তিন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির অন্যতম আকর্ষণ। ছবি: সংগৃহীত।

সত্যি বলতে, এই ছবি দেখতে ‘যুক্তি’কে সরিয়ে রেখেই প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করা উচিত। সেই ভাবনা থেকেই নির্মাতারা ছবিটি তৈরি করেছেন। সামাজিক ‘বার্তা’র ভিড়ে বাংলা ছবি ন্যুব্জ। সেখানে দমফাটা হাসির এক-আধটা ছবি তৈরি হলে ক্ষতি কী! থাকুক না দৃশ্যের কন্টিনিউটির সমস্যা। থাকুক না একটু চড়া দাগের অভিনয়। ছোটখাটো গলদ না হয় রইল চিত্রনাট্যে। বলিউড বা দক্ষিণী মশালা ছবি দেখতে যখন যুক্তি-তর্ককে সরিয়ে রাখা যায়, তখন সেই বাঙালিই না হয় একটু বাংলা ছবির পাশে দাঁড়াক!

‘ননসেন্স কমেডি’ বলতে যা বোঝায়, এই ছবির গল্পও কিছুটা সেই ধাঁচের। বলিউডে ‘নো এন্ট্রি’, ‘ওয়েলকাম’ ঘরানার ছবির কথা মনে পড়তেই পারে। গত বার বিরসা দাশগুপ্ত ছিলেন পরিচালনার দায়িত্বে। এ বারে সেই আসনে সিনেমাটোগ্রাফার তথা পরিচালক সৌমিক হালদার। এটাই তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবিও বটে। রুদ্রনীল ঘোষ এবং সোমনাথ রায়ের চিত্রনাট্যে শুধুই যে অযৌক্তিক হাসির খোরাক রয়েছে তা নয়। সেখানে বর্তমান রাজনীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু নিয়েও রয়েছে বুদ্ধিদীপ্ত টিপ্পনী। যেমন ‘‘নকুলদানা মানে চড়াম চড়াম’’-এর মতো সংলাপে দর্শক হাসবেন। তবে সাংসারিক সমস্যা থেকে শুরু করে পুরুষতন্ত্র নিয়ে হাস্যরস সেই ভাবে গভীরতা ছুঁতে পারেনি।

Sourav das, Rudranil Ghosh and Ankush Hazra

সৌরভের কথা বলার ভঙ্গি এবং কৃষ্ণবেশে রুদ্রনীল দর্শক হাসিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত।

অনেক দিন পর আবার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্বমহিমায়। কয়েক বছর আগের মূল ধারার বাংলা বাণিজ্যিক ছবির ধাঁচেই তৈরি করেছেন ছবির গান। ‘সবই মায়া’ বা ‘মন বাজারে’ আপাতত বাজার মাতিয়ে রাখবে বলেই মনে হয়। অনিমেষ ঘোড়ুইয়ের ক্যামেরা বিদেশি লোকেশনে অনেক বেশি সপ্রতিভ। ছবির প্রথমার্ধে গল্প বাঁধতে অহেতুক সময় নষ্ট করা হয়েছে। সেই দুঃখ অবশ্য জমজমাট দ্বিতীয় ভাগ অনেকটাই মিটিয়ে দেয়।

অনির্বাণকে নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। যে পাত্রে ঢালা হবে, তিনি তার আকার নেবেন তা আগেই প্রমাণিত। তাঁর বিশেষ সংলাপ বলার কায়দা এই ছবির অন্যতম ইউএসপি। ছবিতে দিব্যি কোমর দোলাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। রুদ্রনীল স্বমহিমায়, মেজাজে অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে কৃষ্ণবেশে তাঁর কমেডি প্রশংসনীয়। কমিক টাইমিং ভাল হওয়া সত্ত্বেও তুলনায় অঙ্কুশকে কিছুটা কোণঠাসা মনে হয়েছে। এ বারের ছবিতে বেশ কিছু চরিত্র জুড়েছে। রয়েছেন বিদেশি অভিনেতারাও। মাইকেলের চরিত্রে সৌরভ দাস বেমানান পরচুলায় দিব্যি ‘রাশিয়ান’ বলে দর্শক হাসিয়েছেন। অন্য দিকে, ছবির তিন অভিনেত্রীর তিন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির অন্যতম আকর্ষণ। সোহিনী আলাদা করে নজর কেড়েছেন। প্রিয়াঙ্কা সরকার এবং নুসরত ফারিয়া যথাযথ।

মজার বিষয়, দর্শকের পাতে ক্রমাগত ‘সিরিয়াস’ ছবি পরিবেশন করতে করতে তাঁদেরও দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। কিন্তু এমন ছবিও তো দরকার, যেটা শুধুই বার্তামূলক না হয়ে উঠবে ‘টাইমপাস’। নিছক বিনোদনের খোরাক। এই অভিযানের পরতে পরতে রয়েছে তার সন্ধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE