Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Anirban Bhattacharya

Mukhosh: প্রচেষ্টা সৎ, থ্রিলার কি সুবিচার পেল?

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২১ ০৭:৩০
Share: Save:

সিনেমা হলে বাংলা ছবির তুলনায় অক্ষয়কুমারের ছবি বেশি লোক টানবে, এই সত্যিটা বাংলার নির্মাতা-ডিস্ট্রিবিউটর এমনকি দর্শকও এত দিনে জেনে গিয়েছেন। শেষোক্ত শ্রেণি এ-ও জেনে গিয়েছেন, অপেক্ষা করলে ওটিটি-তেই ছবি দেখে নেওয়া যায়, তাতে বড় পর্দার মজা না থাকলেও। ‘হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখুন’ এমন আবেদনে সত্যিই কি চিঁড়ে ভিজবে? বিশেষ করে অতিমারি-পরবর্তী সময়ে?

বহুদিন পরে সম্পূর্ণ ফাঁকা মাল্টিপ্লেক্সে বসে বাংলা ছবি দেখতে দেখতে এমন ভাবনাই মাথায় ঘুরছিল। সপ্তাহান্তে হয়তো এ দৃশ্য খানিক বদলাবে। তবে বাংলায় থ্রিলার তৈরির ঘরানায় ‘মুখোশ’ একটি সৎ প্রচেষ্টা। মলয়ালম ছবির এই অফিশিয়াল রিমেকে পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তের ভাবনার মৌলিকত্বের জায়গা না থাকলেও, নির্মাণে তিনি নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন। ফাঁকফোকর সত্ত্বেও এই হুডানইটের উত্তেজনা বেশ ধরে রাখা গিয়েছে। তার একটা কারণ, ছবির দৈর্ঘ্য খুব বেশি নয়। বাইবেলের ভার্স, মুখোশের রূপক এবং ক্রিমিনাল সাইকোলজিকে মিলিয়ে রহস্যের জাল বোনা ও ছাড়ানো হয়েছে। বোনার অংশটি টানটান হলেও, জট ছাড়াতে গিয়ে খানিক হড়কেছে চিত্রনাট্য।

এ ছবির প্রচারে মুখ হিসেবে দেখা গিয়েছে দুই অনির্বাণ (ভট্টাচার্য ও চক্রবর্তী), চান্দ্রেয়ী ঘোষ, কৌশিক সেন প্রমুখকে। এঁরা ছাড়াও আরও বাঘা চরিত্ররা রয়েছেন, যাঁরা ছবির স্বার্থেই আড়ালে রয়েছেন। অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে একের পর এক পুলিশের রহস্যমৃত্যুর তদন্তে সাহায্য করতে আসে ক্রিমিনোলজিস্ট কিংশুক রায় (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)। যোগ দেয় আইপিএস কাবেরী বসু (চান্দ্রেয়ী) এবং অফিসার অদ্রীশ বর্মণের (অনির্বাণ চক্রবর্তী) টিমে। তবে বেশির ভাগ সময়টাই কন্ট্রোল রুমে বসে ট্রাফিক সিগনালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আর উস্কোখুস্কো চুলের হ্যাকারের সাহায্যে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হয়। মৃতদেহের পাশে রেখে যাওয়া ক্রসে খোদাই করা সই দেখে হ্যাকার ক্রসটির শিল্পীর নাম-ধাম পর্যন্ত জেনে ফেলে! গল্প গিয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গে।

মুখোশ
পরিচালক: বিরসা দাশগুপ্ত
অভিনয়: অনির্বাণ ভট্টাচার্য, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, অনির্বাণ চক্রবর্তী
৫.৫/১০

ছবির গতিকে ব্যাহত করেছে ধারাবাহিকতার কিছু সমস্যা। যেমন, এক জায়গায় কলকাতার বাড়ি থেকে ফোন ধরে ‘এখনই আসছি’ বলার পরের দৃশ্যেই কিংশুক হাজির হয় উত্তরবঙ্গে, শিল্পীর বাড়ির বৈঠকখানায়! শিক্ষকের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্যে কিংশুকের ছাত্রাবস্থা ও বর্তমান অবস্থার ফারাক বোঝা যায় না। ছাত্র-শিক্ষকের বয়সের ফারাক তো নয়ই। তাদের মধ্যে ব্যোমকেশ-ফেলুদা নিয়ে করা মজাটিও ক্লিশে! শেষে হত্যারহস্যের সম্পূর্ণ নেপথ্য কাহিনিটি যে ভাবে গল্পচ্ছলে একনাগাড়ে বলে দেওয়া হয়, থ্রিলারের উত্তেজনাও সেখানেই রিভেঞ্জ ড্রামার ফর্মুলার কাছে নতি স্বীকার করে।

দুই অনির্বাণের পাশাপাশি এ ছবি চান্দ্রেয়ীরও। আইপিএস কাবেরী বসুর চরিত্রে তাঁকে মানিয়েছে ভাল। তদন্তের ক্ষেত্রে যদিও কাবেরীকে কিঞ্চিৎ অসহায় করে রেখেছে চিত্রনাট্য। অনির্বাণ ভট্টাচার্য পূর্ণ পরিসর না পেলেও বরাবরের মতোই ভাল। তাঁর সঙ্গে পায়েল দের রসায়নও মন্দ লাগেনি। অদ্রীশ বর্মণরূপে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য অনির্বাণ চক্রবর্তী। এ ধরনের ছবিতে আবহসঙ্গীতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে নবারুণ বসু ভাল কাজ করেছেন। শুভঙ্কর ভড়ের সিনেম্যাটোগ্রাফিও মনোগ্রাহী।

‘আনজাম পাথিরা’র সফল রিমেক হল কি না, তার চেয়েও জরুরি প্রশ্ন, ‘মুখোশ’ থ্রিলার হিসেবে কতটা সফল। উত্তর দিতে খোলা প্রেক্ষাগৃহের দরজা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anirban Bhattacharya Birsa Dasgupta cinema
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE