Advertisement
E-Paper

রাতের শহরে জীবনের দিক বদল, রহস্য রোমাঞ্চে টানটান কঙ্কনার স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘রি-রুটিং’

মাত্র রাতের ঘটনা। কতটুকুই বা তার পরিসর? ঘুমিয়েই তো কেটে যাওয়ার কথা! কিন্তু যে জেগে আছে, তার কাছে এই সময়, বড় কম নয়।

দেবত্রী ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০১
Review of the short film rerouting staring Barun Chanda Pradeep Bhattacharya directed by Kankana Chakraborty

কঙ্কনা চক্রবর্তী পরিচালিত এ ছবিতে দেখা যায় অভিনেতা বরুণ চন্দ এবং প্রদীপ ভট্টাচার্যকে। ছবি: সংগৃহীত।

সময় বড় অদ্ভুত— কারও জন্য থেমে থাকে না। কেউ তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারল, কি পারল না, তার তোয়াক্কাও করে না সময়। তাই সময় এগোয়, আর মানুষকেও তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হয়। তবেই মুক্তি মেলে। সময় থেকে সময়ান্তরে।

এ ছবিতে রয়েছে একটি মাত্র রাতের ঘটনা। কতটুকুই বা তার পরিসর? ঘুমিয়েই তো কেটে যাওয়ার কথা! কিন্তু যে জেগে আছে, তার কাছে এই সময়, বড় কম নয়। এই এক রাতের মধ্যে কত কিছু ঘটে যায় এক শহরে, কত মানুষের জীবনে কী কী বদলে যায়, তার ধারণা করা প্রায় অসম্ভব।

পরিচালক কঙ্কনা চক্রবর্তীর স্বল্প দৈর্ঘের ছবি ‘রি-রুটিং’ তেমনই এক রাতের গল্প বলে। বলে দু’টি মানুষের কথা, যাদের জীবন খানিকটা হলেও বদলায়, ওই একটি রাতের পর। সেই বদলের খবর আর কেউ পাক বা না পাক, জানতে পারে তাদের শহর। আর রাত জেগে থাকা সেই মানুষটি, যে শহরের গল্প এক জায়গায় জড়ো করে তার ঝুলি পূর্ণ করছে।

কলকাতায় জন্ম আর খানিকটা পড়াশোনা হলেও, পরিচালক কঙ্কনা মূলত লস-অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা। সেখানেই তিনি অভিনয়, লেখালিখি ও পরিচালনার কাজ করে থাকেন। অবশ্য এর আগে ভারতে ‘উইমেন প্রেড অ্যান্ড প্রেইড আপন’ আর ‘মিরর ইমেজ’-এর মতো ছবি করেছেন। বাংলায় অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনা ‘প্রেমটেম’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে এর আগে।

‘রি-রুটিং’ ছবিতে পরিচালনা ও অভিনয় দুই-ই করেছেন তিনি। গল্পও তাঁর লেখা। গুয়াহাটি শহরের প্রেক্ষাপটে সাজিয়েছেন— অবিনাশ আর কুহুর গল্প। বড় শহরে পড়তে আসা কুহু, মাঝেমধ্যেই রাতের শহরে ‘ক্যাব’ বা ভাড়ার গাড়ি চালায়। উদ্দেশ্য কিছু বাড়তি রোজগার। কারণ শহরে থাকলে বন্ধুবান্ধব হয়, এমন এক জীবন যাপন করতে হয়, যার খরচ আছে। বাবার নিষেধ থাকলেও সে লুকিয়ে রাতে গাড়ি চালায়। উঠতি যৌবনে অনেকেই মা-বাবার কথা শুনতে চায় না। একবার বাড়ি ছাড়লে সহজে ফিরতে চায় না। কুহুর সামনে বড় শহরের অমোঘ আকর্ষণ, মুক্তির আস্বাদ।

এমনই এক রাতে তার দেখা হয় অবিনাশের সঙ্গে। অভিনয়ে বরুণ চন্দ। কুহুর গাড়িতে যাত্রী হতে চায় সে। তার গন্তব্য ভূতনাথ ঘাট। মুখে বলে, বোনের অস্থি বিসর্জন দিতে সেখানে যাচ্ছে সে।

গাড়ি এগোয় জিপিএস ধরে, ঘাটের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই রাস্তা ঘাটে গিয়েই শেষ হয় কি? কী অপেক্ষা করে আছে কুহুর জন্য এই যাত্রার অপর প্রান্তে?

৩৫ মিনিটের এই ছবি একটি ‘সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার’। জীবন আমরা যেমন চালাতে চাই, তেমন চলে না। হঠাৎ হঠাৎ বাঁক নেয় নিজের মতো। সে কি ‘রং-রুট’ ধরে? নাকি পথ বুঝে ‘রি-রুট’ খোঁজে? পরিচালক এই ছবিতে দুই মূল চরিত্রের মাধ্যমে মানুষের আত্মকেন্দ্রিক, আবদ্ধ আধুনিক জীবনকে যেমন তুলে ধরতে চেয়েছেন, তেমনই বলতে চেয়েছেন বাধা কাটিয়ে ব্যক্তি জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। কারণ সময় থেমে থাকে না। প্রজন্মকে সেতু দিয়ে বাঁধতে হয়। তবেই পরিবর্তন আসে, জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রসদ খুঁজে পাওয়া যায়।

Review of the short film rerouting staring Barun Chanda Pradeep Bhattacharya directed by Kankana Chakraborty

বরুণ চন্দ এই ছবির সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তাঁর দুই চোখ এতটাই বাঙ্ময় যে অবিনাশের প্রতি মুহূর্তের বদল তাতে ধরা পড়ে। কঙ্কনা নিজেও অভিনেত্রী হিসাবে স্বতঃস্ফূর্ত। কোন সংলাপ ছাড়াই প্রদীপ ভট্টাচার্য তাঁর অভিনয়ের ছাপ রেখে যান।

ছবিটি পুরোটাই সাদাকালো। পরিচালকের কথায়, মানুষের চরিত্রের ধূসর দিকটি তুলে ধরতেই এই প্রয়াস। তবে এই ছবির চিত্রনাট্য আরও একটু সাবলীল হতে পারত। কোথাও কোথাও দর্শকের মনে হতে পারে চরিত্ররা তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যোগ স্থাপন করতে পারছেন না। মৃদুল সেনের ক্যামেরার কাজ ভাল হলেও অমিতাভ দাশগুপ্তের এডিটিং আরও ভাল হতে পারত।

এই ছবি আগে ম্যাক্সমুলার ভবনে এক উৎসবে দেখানো হয়েছে। মানুষের জীবন মানেই রঙিন ও ধূসর চরিত্রের মিশেল। তারই এক দিক এই ‘রি-রুটিং’ এর নির্যাস, যা দেখতে মন্দ লাগে না।

Barun Chanda Pradeep Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy