Advertisement
২৩ মে ২০২৪
Web Series

পাকদণ্ডী বেয়ে চলা রূপকথা আর রহস্য

আগামী সিজ়নের জন্য অমীমাংসিত রহস্য ছেড়ে যাওয়ায় এ সিজ়নে অতৃপ্তি রয়ে গেল।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২১ ০৭:০৫
Share: Save:

দ্য লাস্ট আওয়ার (ওয়েব সিরিজ়)

পরিচালনা: অমিত কুমার অভিনয়:সঞ্জয়, সাহানা, কর্ম, রাইমা

৫/১০

পাহাড়ঘেরা পাইন বনে নিবিষ্টমনে গাছের গুঁড়িতে তির মেরে লক্ষ্যভেদ করে চলে এক শমন (নেপালিতে ঝাকরি, যে বিশ্বাস অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি আত্মার সঙ্গে যোগস্থাপনে সক্ষম)। সদ্য মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সংযোগস্থাপন করে সে দেখতে পায় তার মৃত্যুর আগের মুহূর্ত। এই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সে পুলিশকে সাহায্য করে অপরাধী খুঁজতে। তার নিজস্ব এক খোঁজও রয়েছে। পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে চলে আসা স্পিরিচুয়ালিটি, তার প্র্যাকটিস আর ক্রাইম থ্রিলারকে এক ব্র্যাকেটে এনে লেখা হয়েছে ‘দ্য লাস্ট আওয়ার’-এর গল্প। মামুলি এক ক্রাইম ড্রামার এমন একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করার জন্য সাধুবাদ প্রাপ্য লেখক-পরিচালক অমিত কুমারের, যেখানে একাকার হয়ে গিয়েছে বাস্তব আর অতিবাস্তব। তবে আট পর্বের এই সিরিজ়ে ধীর লয়ে যে ভাবে রহস্য বোনা হয়েছে, শেষে তাড়াহুড়ো করে তার জট ছাড়ানোয় চিত্রনাট্য যেন সম্পূর্ণতা পায়নি। আগামী সিজ়নের জন্য অমীমাংসিত রহস্য ছেড়ে যাওয়ায় এ সিজ়নে অতৃপ্তি রয়ে গেল।

সিকিমের প্রত্যন্ত এলাকায় বদলি হয়ে আসে মুম্বইয়ের পুলিশ অফিসার অরূপ সিংহ (সঞ্জয় কপূর)। একের পর এক খুন, ধর্ষণে অশান্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। তদন্ত করতে নেমে স্থানীয় তরুণ দেবের (কর্ম তাকাপা) অলৌকিক শক্তির সাহায্য নিতে শুরু করে অরূপ। দেবের সঙ্গে আলাপ হয় অরূপের কন্যা পরির (শায়েলি কৃষণ)। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়েই দেব আর পরির সমান্তরাল ট্র্যাক এগোতে থাকে। এলাকায় ঘটে চলা রহস্যজনক মৃত্যুই শুধু নয়, রহস্য ঘনীভূত এই চরিত্রদের জীবনেও। পরির মায়ের (রাইমা সেন) মৃত্যু কি নিছক দুর্ঘটনা? তাদের দাম্পত্যের তার ছিঁড়ে গিয়েছে কী ভাবে, তা পরির মতোই দর্শকের কাছেও অজানাই রয়ে যায়। দেবের বিশেষ ক্ষমতা কেড়ে নিতে চায় আর এক শমন, ইয়ামা নাড়ু। সে আবার মাদক ব্যবসাতেও জড়িয়ে। সেই শয়তানকে কি শেষ পর্যন্ত শায়েস্তা করা যায়?

উত্তর না মেলা কিছু প্রশ্ন থেকে যায় সিরিজ়-শেষে। ঈষৎ গুলিয়ে যায় কাহিনির আসল উদ্দেশ্যও। দেবের শৈশব, অরূপের ব্যাকস্টোরি যেমন স্পষ্ট নয়, তেমনই ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে পরির পরিণতিও। চিত্রনাট্যের এই ফাঁকফোকর এবং শ্লথ গতির কারণেই নম্বর কমে যায় সিরিজ়ের। চোখ বন্ধ, হাতে হাত রেখে টাইম ট্রাভেল দর্শকের কাছে কিন্তু নতুন নয়। পাহাড়ের প্রাচীন প্রথা ও বিশ্বাসকে আধুনিক ক্রাইম সিনে প্রতিষ্ঠিত করতে আরও যত্নের প্রয়োজন ছিল। তবে প্রতিটি পর্ব কমবেশি আধঘণ্টার হওয়ায় ধৈর্যচ্যুতি আটকানো গিয়েছে।

হিন্দি সিনেমা-সিরিজ়ে উত্তর-পূর্বের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে অনেক কথাই হয়। পুণে এফটিআইআই থেকে পাশ করা ডিরেক্টর-এডিটর কর্ম তাকাপা এ সিরিজ়ের অন্যতম মুখ। তাঁর সহজ অভিনয় আরও এক সফল উদাহরণ সেই প্রতিনিধিত্বের। পাহাড়ি মানেই কুকুরের মাংস খায়, সকলকে একই রকম দেখতে... এমন বিদ্বেষমূলক ধারণার গালে সপাটে চড় কষিয়েছে কিছু সংলাপ। পুলিশের চরিত্রে সাহানা গোস্বামীকে ভাল লাগে। তাঁর মতো অভিনেত্রীকে কেন বেশি ব্যবহার করা হয় না, সে আক্ষেপ উঁকি দেয় তাঁর সপ্রতিভ অভিনয় দেখতে দেখতে। সঞ্জয় কপূর এবং শায়েলি কৃষণ তুলনায় সাধারণ। রাইমা সেনের উপস্থিতি কয়েক ঝলকেই সীমাবদ্ধ।

জয়েশ নায়ারের ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে সিকিমের মেঘে মোড়া মোহময় রূপ। পাহাড়ি বাজার, ছোট্ট-রঙিন কাফে, নয়নাভিরাম সিল্ক রুট, পাইন বন, হেলিপ্যাডের ফুটবল গ্রাউন্ড... ক্যামেরার মাধ্যমে এ সবের মাঝে পৌঁছে যাওয়া গিয়েছে নিমেষে। রহস্য তেমন জমে না উঠলেও, প্রাপ্তি হিসেবে সেটুকুই বা কম কী?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Web Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE