Advertisement
০৫ মে ২০২৪
‘গিরগিটি’, ‘দলবদলু’ তকমা তিনি আগেই পেয়েছেন। নির্বাচনে পরাজয়ের পরে আর একপ্রস্ত ট্রোলের মুখে রুদ্রনীল ঘোষ
Rudranil Ghosh

‘চুরি সমর্থন না করায় লোকের এত রাগ?’

‘গিরগিটি’, ‘দলবদলু’ তকমা তিনি আগেই পেয়েছেন। নির্বাচনে পরাজয়ের পরে আর একপ্রস্ত ট্রোলের মুখে রুদ্রনীল ঘোষ

রুদ্রনীল ঘোষ।

রুদ্রনীল ঘোষ।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২১ ০৫:১৭
Share: Save:

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ। তাতে বিপক্ষকে অভিবাদন, ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি নিয়ে কয়েকটি বাক্য লিখেছিলেন ভবানীপুর কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী। সেই পোস্টের নীচে কমেন্টের সংখ্যা ছাড়িয়েছে তেরো হাজার! এবং তার সিংহভাগই সরাসরি আক্রমণ। ‘এ বার কোন দলে?’, ‘আপনার সাতে পাঁচে মিলে বারোটা বাজল’ কিংবা ‘কখন যে ফের তৃণমূল হয়ে যাবেন, ধরতে পারবেন না’— এই জাতীয় মিম ও মশকরায় আরও একবার ট্রোলের নিশানায় রুদ্রনীল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই। বিজেপিতে যোগদানের সময় থেকেই রুদ্রনীল ‘দলবদলু’ বা ‘গিরগিটি’র মতো বিশেষণের সম্মুখীন হয়ে আসছেন। এ বার শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে প্রায় ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পরে কার্যত কোণঠাসা অভিনেতা। পরাজয়ের ব্যর্থতা, আক্রমণের বন্যা, সর্বোপরি বিশ্বাসযোগ্যতা খোয়ানো নিয়ে কতটা বিচলিত রুদ্রনীল?

‘‘বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কারা কথা বলছেন? কারা বামপন্থী আর কারা তৃণমূল, বিগত ছ’মাসে গুলিয়ে গিয়েছে। যাঁরা তৃণমূলকে উঠতে বসতে সমালোচনা করতেন, চোর বলতেন, তাঁরা বিজেপিকে পরাস্ত করতে গিয়ে তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার গান বানিয়েছেন। তৃণমূল জমানায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রাপ্য অধিকার থেকে যে লাগাতার চুরি হয়েছে, সেটা নিয়ে সেই গানে কেউ একটা শব্দও কিন্তু বলেননি,’’ পাল্টা অভিযোগ রুদ্রনীলের। অনির্বাণ-ঋদ্ধি-ঋতব্রত-সুমনদের ‘নিজেদের মতো নিজেদের গান’-এর প্রতি সরাসরি আঙুল তুলে রুদ্রনীল আরও বললেন, ‘‘এঁরা প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না তৃণমূল জিন্দাবাদ। ব্যক্তিগত মেসেজ পাঠিয়ে বলছেন। আমাকে যদি গিরগিটি বলা হয়, তাঁরা কি কম গিরগিটি? এটা দেখে দুঃখ পেয়েছিলাম, ওই গানটার মাধ্যমে আমার বামপন্থী বন্ধুরা তৃণমূলকে আড়াল করার চেষ্টা করলেন। আর সেই ফলাফলই এ বার নির্বাচনে দেখা গেল। বাম ভোটটা তৃণমূলে গেল, আর বিধানসভা থেকে বাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।’’

সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপানোর পরেও নির্বাচনে বিজেপির এমন ফলাফল কেন? রুদ্রনীলের মতে, এমন ফল শুধু বিজেপি নয়, কারও কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না। ‘‘স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমোও ভাবতে পারেননি এই রেজ়াল্ট হবে। আর বামশূন্য বিধানসভায় যে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হয়ে যাবে, সেটাও কি কেউ ভেবেছিলেন? তাই আত্মসমীক্ষা শুধু বিজেপির নয়, সব দলেরই করা উচিত। কোনও দলকে জয়ী করার জন্য নয়, এ বারে মানুষ ভোট দিয়েছিলেন এর নাক কেটে ওর যাত্রাভঙ্গ করার জন্য,’’ বিশ্লেষণ তাঁর।

নিজে পরাভূত হলেও বিরোধী শিবিরের বন্ধু রাজ চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিকের জয়ে তিনি অখুশি নন, ‘‘ওরা যে রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী, সেটা আগে জানতাম না। এসেই জয় পেয়েছে, এতে আমি খুশি। আশা করব, ওদের কাজ করতে দেওয়া হবে।’’

‘দলে থেকে কাজ করতে পারছিলাম না’— রুদ্রনীলের এই বক্তব্য প্রবাদে পরিণত হয়ে গিয়েছে প্রায়। তবে শত বক্রোক্তি সত্ত্বেও নিজের সেই অবস্থানে অনড় রুদ্রনীল, ‘‘যেখানে ভাল লাগবে না, সেখানে থাকব না। যখন দেখেছিলাম, সাধারণ মানুষ যে কথা বলছেন বামপন্থী নেতারা তার থেকে অনেক দূরে, তখন দল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। তৃণমূলে এসে দেখলাম, দেদার চুরি-জোচ্চুরি। তাই সে দলও ছেড়েছি। চুরিকে সমর্থন করিনি বলে লোকের এত রাগ আমার উপর?’’ এর পরে কী করবেন রাজনীতিক রুদ্রনীল? ‘‘এই অবস্থায় দল একটা গাইডলাইন ঠিক করে। সেই মতোই চলব। তার আগে আমার পক্ষে এ নিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়।’’

রুদ্রনীলকে নিয়ে ‘রগড়ে দেওয়া’র মিম শেয়ার করেছেন তাঁর কাছের বন্ধু পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। অভিনেতার পোস্টে বহুজন সমাজ পার্টির ঠিকানা লিখে দিয়েছেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। দেবেশ চট্টোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘ফ্যাতাড়ু’র কয়েকটি লাইন। রুদ্রনীলের দাবি, তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে ছুঁতে পারে না এ সব সমালোচনা। ‘‘অনিকেত, দেবেশকে কখনও মানুষের পাশে থাকতে দেখিনি সরাসরি। অনিকেত কোন রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, সেটাই তো আজ অবধি বুঝতে পারিনি। উনি মাঝেমাঝেই এঁকে তাঁকে গালাগালি দেন, সেটা জানি। আর দেবেশের সঙ্গে দীর্ঘ দিন থিয়েটার করেছি, একটা ভাল স্মৃতি আছে, এটুকুই। এঁদের মতো পণ্ডিত না হলেও আমি একটু তো পড়াশোনা করেছি। তাই এ সবের জবাব দিতে রুচিতে বাধে। তবে এই তর্কগুলো থাকবেই। এটাই সুস্থতা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tollywood Rudranil Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE