প্রয়াত বাপ্পি লাহিড়ি।
অদ্ভুত প্রাণবন্ত এক মানুষ। যত দিন ছিলেন, যত ক্ষণ ছিলেন, হইহই করে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ আগেও মানুষটা ছিলেন তো! হঠাৎই নেই। ‘ছিলেন’ বলতে গিয়ে নিজেরই জিভ জড়িয়ে যাচ্ছে। প্রথমে লতা মঙ্গেশকর। তারপর মঙ্গলবার সন্ধেয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বুধবারের সকাল হল বাপ্পি লাহিড়ির প্রয়াণের খবরে। সুরের সব তারকা কি গন্ধর্বলোকে পাড়ি জমাচ্ছেন ধীরে ধীরে!
বাপ্পিদাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমার প্রতিটি গানের সুর উনি শুনেছেন। তাই নিয়ে আলোচনাও করতেন। ভাল লাগলেই প্রথম কথা ছিল, এক দিন বাড়িতে চলে এস। জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে। কোনওটা খারাপ লাগলে নরম করে বুঝিয়ে দিতেন। ওঁর সঙ্গে গানের রিয়্যালিটি শো-তে একসঙ্গে বিচারক হয়েছি। প্রতিযোগীরা ওঁর যেন সন্তানসম। সারাক্ষণ প্রশংসা করে ওঁদের মনের জোর বাড়াতেন।
বাপ্পিদার চরিত্রের ছায়া তাঁর গানে। ওঁর গান মানেই সেখানে নানা বাদ্যযন্ত্র আর অফুরন্ত প্রাণশক্তি। বাপ্পিদার গানের ছন্দে পা মেলাতে গিয়ে নতুন স্টেপ আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন। পরে যা কাল্ট হয়ে যায়। ‘নমকহালাল’ ছবির ‘পগ ঘুঙরু বান্ধ’ গানের দৃশ্যটাই ভাবুন। এটাই বাপ্পি লাহিড়ি।
একই ভাবে সাত সুর ওঁর গলায় যেন বশ মানত। ভারী মিঠে গলা। বাপ্পিদা না থাকলে মিঠুন চক্রবর্তীকে কেউ আবিষ্কার করতে পারতেন না। হিন্দিতে উনিই ছিলেন ‘ডিস্কো কিং’। ‘আই অ্যাম এ ডিস্কো ডান্সার’, বা ‘ইয়াদ আ রহা হ্যায় তেরা প্যায়ার’ তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘তখন তোমার একুশ বছর বোধহয়’.... বাপ্পিদা ছাড়া আর কারও মাথাতেই আসেনি! হিন্দি থেকে বাংলা- সব মাধ্যমেই গান, সুরের জগতে অদ্ভুত বৈচিত্র এনেছিলেন। শুধু মিঠুন নন, বাপ্পিদা সব সময়ে নতুন নতুন প্রতিভা আবিষ্কার করতেন। কত সময়ে আমাকেও অনুরোধ করেছেন, ‘‘শান্তনু দেখো তো, এই ছেলেটি ভাল জ্যাজ বাজাতে পারে। তুমি একটু সুযোগ দেবে?’’
একের পর এক রথী-মহারথীরা বিদায় নিচ্ছেন। আমি মানসিক ভাবে সত্যিই বিপর্যস্ত। আমরা যোগ্য উত্তরসূরী হয়ে এই অভাব পূরণ করতে পারব তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy