অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন জোজো মুখোপাধ্যায় ও পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাজমাধ্যম সেই বিতর্কে সরগরম। মঞ্চ থেকে ‘ড্রামকিট’ সরানো নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত। আত্মপক্ষ সমর্থন করে দু’জনেই সমাজমাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য ভাগ করে নিয়েছেন। কে ঠিক, কে ভুল তা নিয়ে দুই শিল্পীর অনুরাগীরাই মতামত দিয়েছেন সমাজমাধ্যমে। কী বলছেন অন্য শিল্পীরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম।
মঞ্চে শিলাজিৎ মজুমদারের অনুষ্ঠান চাক্ষুষ করার জন্য মুখিয়ে থাকেন তাঁর অনুরাগীরা। তাঁর অনুষ্ঠানের আগে সেই একই মঞ্চে অনুষ্ঠান করার জন্য উচ্ছ্বসিত থাকে উঠতি ব্যান্ড ও শিল্পীরা। তা সত্ত্বেও ‘সাউন্ড চেক’ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাঁকেও। এমন একটি ঘটনা ভাগ করে নিয়েছেন গায়ক। একবার মঞ্চে ওঠার পরে শিলাজিতের দলের শিল্পীর গিটারে সমস্যা তৈরি হয়। তখন উপস্থিত অপর ব্যান্ডকে গিটার দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন শিলাজিৎ নিজেই। কিন্তু তারা রাজি হয়নি গিটার দিতে। সটান ‘না’ করে দিয়েছিল। তবে বিপরীত অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
শিলাজিৎ জানান, এমন ধরনের নানা অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে মঞ্চে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে। জোজো ও পৌষালীর তরজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সমস্যাগুলোকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। এই সমস্যাগুলো সামাল দেওয়ার কাজ আসলে আয়োজকদের। আমার ধারণা, জোজো ও পৌষালীর মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। হয়তো মঞ্চটি আয়তনে যথেষ্ট ছিল না বলেই এই সমস্যা হয়েছে। জোজো যথেষ্ট অভিজ্ঞ শিল্পী, পৌষালীও কাজ করছে। তবে আমি মনে করি, ওরা ঠিক সামলে নেবে।”
মঞ্চের সমস্যা নিয়ে সমাজমাধ্যমে তরজা সমীচীন কি না, তা নিয়েও কথা বলেন শিলাজিৎ। তিনি বলেন, “একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে রাগ হয়েছে। সেটার প্রকাশ অনেক সময় সমাজমাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এমন সমস্যা হয়েই থাকে। আসলে দু’জনেই শিল্পী তো। একটু রেগে গিয়েছে। নেতা হলে হয়তো বোম ছুড়তে পারত। সেই উপায় বা ইচ্ছে ওদের নেই। বড় বোন রেগে দু’কথা বলেছে ছোট বোনকে। আবার ছোটবোন উত্তর দিয়েছে। এটুকুই তো! ঠিক মিটে যাবে।”
আরও পড়ুন:
সমাজমাধ্যমে ক্ষোভপ্রকাশ নিয়ে সিধুও মতামত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আসলে সমাজমাধ্যম ব্যবহার করার ধরন নানা রকম হতে পারে। আমি যেমন শুধুই কাজের খবর দিই। ব্যক্তিগত কিছু ভাগ করি না। এটা আমার ভাবনা। এটাই ভাল, বাকিগুলো খারাপ, তা আমার দাবি নয়। কেউ মনে করতেই পারেন, সমাজমাধ্যমে ক্ষোভপ্রকাশ করা যায়। জোজো এর আগেও সমাজমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। ওর ছেলে সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করায়, ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল। ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করাই যায়।”
যদিও সিধু মনে করেন, যে বিষয়টি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে দুই শিল্পীর মধ্যে, তা নতুন কিছু নয়। প্রায়ই বাদ্যযন্ত্র, বিশেষত ‘ড্রামকিট’ সরানো নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় শিল্পীদের। তাঁর কথায়, “সাউন্ড চেকের পরেই ‘ড্রামকিট’ সরিয়ে ফেলা যায় না। বিশেষ করে মঞ্চের মাপ ছোট হলে এই সমস্যাটা হয়ে থাকে। যেমন ‘লক্ষ্মীছাড়া’র ড্রামার গাবু বাঁ-হাতি। ওদের তাই আলাদা ‘ড্রামকিট’ দরকার পড়ে। সে ক্ষেত্রে মঞ্চে দুটো ব্যান্ডের ‘ড্রামকিট’ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। গাবুর সঙ্গে না হয় বন্ধুত্ব আছে আমার। কিন্তু অচেনা শিল্পী থাকলেও এটাই করা উচিত।”
সিধু মনে করেন, মঞ্চে বাদ্যযন্ত্র রাখা নিয়ে কোনও নিয়মকানুন নেই। এই বোঝাপড়াটা অলিখিত নিয়মের মতোই। সিধু বলেন, “অনেক সময়ে আমাদের অনুষ্ঠানের আগে হয়তো নাচের অনুষ্ঠান থাকে। সে ক্ষেত্রে আমরা আয়োজকদের বলে দিই, অন্য যন্ত্র সরালেও, ‘ড্রামকিট’ সরানো যাবে না। ‘ড্রামকিট’ সরিয়ে ফেললে আর সাউন্ডচেক-এর কোনও অর্থ থাকে না। এ বার বাকিটা আয়োজকদের সিদ্ধান্ত।”
এই একই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয় লোপামুদ্রা মিত্রের সঙ্গে। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি এটা নিয়ে সত্যিই কিছু বলতে পারব না। দু’জনেই আমার খুব প্রিয় ও আদরের। দু’জনের সঙ্গেই আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। জীবন মানেই বোঝাপড়া এবং মানিয়ে নেওয়া। নিশ্চয়ই ওদের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। দুই শিল্পীর মধ্যে এমন হওয়া কাম্য নয়। তাই সমস্ত কিছু দ্রুত ঠিক হয়ে যাক, এটাই চাইব।”