Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Jeet Ganguly on Rashid Khan

দু’বছর আগে ভাই ‘কেকে’-কে হারিয়েছিলাম, এ বার এক দাদাকে হারালাম

সুদূর মুম্বইয়ে প্রিয় দাদার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি বিহ্বল। প্রয়াত শিল্পী রাশিদ খানের স্মৃতিচারণায় সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

Singer composer Jeet Ganguly remembers deceased singer Rashid Khan

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী উস্তাদ রাশিদ খান প্রয়াত। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:১৪
Share: Save:

দুপুরে আমি তখন রেকর্ডিংয়ে ব্যস্ত। এর মধ্যে খবরটা এল। সত্যি বলছি, তৎক্ষণাৎ মনে হল আমার মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছে! খালি মনে হচ্ছিল, এ আমি কী শুনলাম। তার পর একের পর এক ফোন। তত ক্ষণে বুঝে গিয়েছি খবরটা সত্যি। রেকর্ডিং বন্ধ করে চুপ করে বসেছিলাম। আর চোখের সামনে উস্তাদজির সঙ্গে কাটানো বিভিন্ন মুহূর্তগুলো ভেসে উঠছিল। এখনও ওঁর কথাই মনে পড়ছে।

উস্তাদজিকে আমি দাদা বলে ডাকতাম। আর উনি আমাকে নিজের ভাইয়ের মতোই স্নেহ করতেন। ওঁর সঙ্গে তো আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। আমি নিজে বাংলার ছেলে। মনে পড়ছে ২০০৮ সালে ওঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ‘চিটি চিটি ব্যাং ব্যাং’ নামের অ্যানিমেশন ছবিতে আমার পরিচালনায় দাদা একটা গান গেয়েছিলেন। সেই ওঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তৈরি হল। তার পর ‘মর্নিং ওয়াক’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করি। এই ছবিতে ওঁর গাওয়া ‘ভোর ভায়ো’ গানটা তো আজও জনপ্রিয়।

Singer composer Jeet Ganguly remembers deceased singer Rashid Khan

জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাশিদ খান। ছবি: সংগৃহীত।

পরবর্তী সময়ে বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) আমাকে খুব অন্য রকম একটা বাংলা ছবি ‘বাপি বাড়ি যা’র সঙ্গীতের দায়িত্ব দিলেন। এই ছবিতেও উস্তাদজির গাওয়া ‘সাজনা’ গানটা কাল্ট হয়ে রয়ে গিয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই গানের গীতিকার আমার স্ত্রী চন্দ্রাণী। রেকর্ডিংয়ের পর দাদা ওঁর বাড়িতে আমাদের দু’জনকে বসিয়ে খুব যত্ন করে খাবার খাইয়েছিলেন। কারণ, এই গানে চন্দ্রাণীর অবদানটা উনি বুঝতে পেরেছিলেন। বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি— এই তিনটে ভাষাই এই গানটার মধ্যে ছিল। আজকের খবরটা পাওয়ার পর থেকেই চন্দ্রাণী কাঁদতে শুরু করেছে। খুব ভেঙে পড়েছে।

মানুষ হিসেবে দাদা ছিলেন অত্যন্ত সরল এবং সাধাসিধে। এই হেসে ফেলছেন, এই রেগে যাচ্ছেন, তো আবার এই কাছে ডেকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন। মানুষটার মনে কোনও রকম পাপ ছিল না। এতটা উদার হলে, তা হলে হয়তো গলার ও রকম টোন হয়। ভীমসেন যোশী তো বলতেন যে ওঁর পর যদি কেউ ‘সা’ স্বরটা লাগাতে পারে, তা হলে সেটা হলেন রাশিদ খান। বাড়িতে ডেকে খাওয়ানো, একসঙ্গে গানবাজনা করা, সকলে মিলে হইহই করা, সে সব দিনগুলো আজকে খুব মনে পড়ছে। ওঁর বাড়িতে সব সময়েই যেন সঙ্গীতের উৎসব লেগে থাকত।

সময়ের সঙ্গে ওঁর পরিবারের সঙ্গেও আমার নিবিড় আত্মীয়তা তৈরি হয়েছিল। মনে আছে দাদার বড় মেয়ে সুহাকে আমি ‘চিরদিনই তুমি যে আমার ২’ ছবিতে প্রথম গান গাইয়েছিলাম। ‘একা একেলা মন’ গানটার মেল ভার্সান গেয়েছিল অরিজিৎ সিংহ। আর ফিমেল ভার্সান সুহা। আমি জানি দাদার ছেলে খুব ভাল গান গায়। ওঁর মেয়েরাও খুব ভাল কাজ করছে। আমি এটুকু বলতে পারি, ভবিষ্যতে ওঁরা সঙ্গীত নিয়ে যে কোনও উদ্যোগ নিলে আমি পাশে থাকব।

মাঝে ওঁর শারীরিক অসুস্থতার খবর পেয়েছি। দাদা নিজেও বিষয়টা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে খুব একটা পছন্দ করতেন না। শেষের দিকে ওঁর পরিবার বিষয়টা পারিবারিক স্তরেই রেখেছিল। একই সঙ্গে ওঁর শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে বাজারে গুজব ছড়িয়েছিল। তবে কবিতাজি (কৃষ্ণমূর্তি), অভিজিৎদা (ভট্টাচার্য), সোনু (নিগাম) প্রত্যেকে আমাকে ফোন করে দাদার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর করতেন। তার পর এই খবরে আমাদের গোটা সঙ্গীত মহল ভেঙে পড়েছে। দু’বছর আগে আমার এক ভাই কেকে-কে হারিয়েছিলাম। আজকে আমার এক দাদাকে হারালাম। এটা চলে যাওয়ার বয়স নয়। ওঁর আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। যদি পরজন্ম বলে কিছু থাকে, তা হলে সেখানেও উনি গানবাজনা নিয়েই থাকবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jeet Ganguly Rashid Khan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE