উদিত নারায়ণ। খুব মিষ্টি মানুষ। ছটফটে, প্রাণবন্ত। সারা ক্ষণ হাসছেন। সেই হাসির ছোঁয়া ওঁর গানে, ওঁর কথাতেও। উদিতজির এই গুণ ধার নিয়েছি। আমরা একসঙ্গে বেশ কিছু গান গেয়েছি। গর্ব করে বলি, আমাদের বড় মিল, দু’জনেই ‘হাসিমাখা’ গান গাই।
তখন সবাই কারও না কারও ‘কণ্ঠী’। কেউ ‘কিশোরকণ্ঠী’, কেউ ‘রফিকণ্ঠী’, কেউ হয়তো ‘মুকেশকণ্ঠী’। সে ভাবেই তাঁরা বলিউডে নিজেদের জায়গা করেছেন। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গায়কি বদলেছেন। উদিতজি ব্যতিক্রম। প্রথম দিন থেকে নিজস্ব গায়কিতে গেয়ে গিয়েছেন। রাহুল দেব বর্মন-সহ অনেক সুরকারের সুরে ওঁর গান আছে। ‘কয়ামত সে কয়ামত তক্’ ছবির গান তাঁকে খ্যাতি এনে দিয়েছে। রাহুল দেব বর্মনের সময়েও উদিতজি যে গায়কিকে গাইতেন, ‘পাপা কহতে হ্যায়’ গানটিও একই ভঙ্গিতেই গেয়েছেন। কণ্ঠে পাহাড়ি অ়ঞ্চলের টান। খোলা গলায় প্রত্যেকটা গান করেন তিনি। ‘মেলোডি’ আর ‘রোম্যান্টিসিজ়ম’-এ মাখামাখি। ওঁর গান নিজেই যেন ‘নায়ক’! যাঁর ঠোঁটে বসবে, তিনিই জনপ্রিয়।
এটা সম্ভব হয়েছে ওঁর আচরণের জন্য। মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষটি অত্যন্ত হাসিখুশি, সাদাসিধে। রাগতে দেখিনি! খুবই ঠান্ডা মাথার মানুষ। দেখা হলেই মিষ্টি হেসে জড়িয়ে ধরেন। যে অনুষ্ঠানে যান, মাতিয়ে দেন। ওই জন্যেই তিনি সমসাময়িক। নব্বই দশকেও ছিলেন। ২০২৫-এর ছবিতেও ওঁর কণ্ঠ শোনা যায়। গলার পাশাপাশি নিজেরও যথেষ্ট যত্ন করেন গায়ক। সেটা তাঁকে দেখলেই বোঝা যায়। উদিতজিকে এখনও বয়স ছুঁতে পারেনি! সেই সঙ্গে খুবই রোম্যান্টিক মনের মানুষ। তাই হয়তো ওঁকে ঘিরে এত গুঞ্জন। আনন্দবাজার ডট কম যেমন জানতে চেয়েছিল, অলকা যাজ্ঞিকজির সঙ্গে ওঁর রসায়ন সত্যিই গাঢ়? আসলে ওঁরা একসঙ্গে প্রচুর গান করেছেন। একসঙ্গে গানের দুনিয়ায় অনেকটা সময় ‘রাজত্ব’ করেছেন। বন্ধুত্ব তো হবেই।
একই ভাবে উদিতজি আর কুমার শানুদাকে নিয়েও অনেক রটনা। ওঁরা নাকি পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী! খুব বাজে গুজব। আমি নিজে দেখেছি, ওঁরা একসঙ্গে অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। হইহই করে গেয়েছেন। পরস্পর পরস্পরকে নিয়ে মজা করেছেন। ওঁদের মধ্যে হয়তো সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলেও থাকতে পারে। অসুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্নই নেই।
আরও পড়ুন:
দেখুন, নয়ের দশকে গায়ক বলতে তো তিন জন। শানুদা, উদিতজি আর অভিজিৎ ভট্টাচার্যদা। এঁরা তিন জনে তিন জনের মতো। শানুদার ঝুলিতে গানের সংখ্যা বেশি। অভিজিৎদা মানেই একটা সময় শাহরুখ খান। উদিতজি লম্বা সময় ধরে কাজ করছেন। ওঁরা নব্বইয়ের দশককে ‘প্রেমের দশক’ বানিয়েছেন।
আমার কাছে আনন্দবাজার ডট কম-এর আরও একটি প্রশ্ন ছিল, এই প্রজন্মের শিল্পী হলেও কি উদিত নারায়ণ এতটাই খ্যাতি পেতেন? কারণ, এখনকার গান, গানের ধারা, গায়কি— সবই প্রায় বদলে গিয়েছে। নব্বইয়ের দশকের মতো ‘রোম্যান্টিসিজ়ম’ বা ‘মেলোডি’র আধিক্য কম। আমার মনে হয়, যে যুগেই উদিত নারায়ণ আসুন না কেন, উনি সফল হতেন। নিজের গায়কি দিয়ে সেই যুগকে নিজের মতো করে বদলে নিতেন। আট থেকে আশি— ওঁর কণ্ঠস্বরে মজত। এটাই উদিতজির ক্যারিশ্মা।