সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিরিজ় ‘রয়্যাল্স’। এই সিরিজ়ে নজর কেড়েছেন লিসা মিশ্র। বেশ কয়েক বছর আগে আমেরিকায় গায়িকা হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। সঙ্গীত জগৎ থেকে অভিনয়ের দুনিয়াতেও সফর শুরু হয়েছে তাঁর। ‘কল মি বে’র পরে ভূমি পেডনেকর ও ঈশান খট্টর অভিনীত এই সিরিজ়ে অভিনয় করলেন তিনি।
প্রশ্ন: ‘রয়্যাল্স’ নিয়ে চর্চা হচ্ছে। আপনার চরিত্রও নজর কেড়েছে। এখন নিশ্চয়ই সপ্তম স্বর্গে?
লিসা: ‘রয়্যাল্স’-এর সফর সত্যিই অসাধারণ। বহু দিন বাদে দীর্ঘ একটা সময় ধরে টানা পরিশ্রম করেছি। টানা তিন মাস শুটিং করেছি! চরিত্রটিও অসাধারণ। পরিচালকেরাও দারুণ। এখন ভাল প্রতিক্রিয়াও পাচ্ছি।
প্রশ্ন: ভূমি পেডনেকরের সঙ্গে বেশ কিছু দৃশ্য রয়েছে আপনার। সহ-অভিনেত্রী হিসেবে কেমন লাগল ওঁর সঙ্গে কাজ করে?
লিসা: ভুমি অসাধারণ অভিনেত্রী। আমার অধিকাংশ দৃশ্য ওঁর সঙ্গে জেনেই আমি চমকে গিয়েছিলাম। আমার বাবার প্রিয় অভিনেত্রী উনি। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো বিষয়। জ়িনত আমন, ঈশান খট্টর ও নোরা ফতেহিও অসাধারণ। ওঁদের সঙ্গে সেই ভাবে আমার দৃশ্য ছিল না ঠিকই। কিন্তু এমন তারকাদের সঙ্গে কাজ করার অনুভূতি সত্যিই দারুণ।
প্রশ্ন: এই সিরিজ়ে এক কুইয়া-র (চলতি লিঙ্গ পরিচিতির বাইরে যাঁরা নিজেকে রাখেন) চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চরিত্রটি জানতে পেরে কোনও অস্বস্তি হয়েছিল?
লিসা: যে কোনও লিঙ্গের মানুষই একই রকম ভাবে প্রেমে পড়ে। যে কোনও যৌন পরিচিতির মানুষই প্রেমে পড়তে পারে। ‘কল মি বে’-তে বীর দাসের সঙ্গে আমার জুটি ছিল। এই সিরিজ়ে কাব্য ত্রেহানের সঙ্গে রসায়ন ধরা পড়েছে। দুটোই আমার কাছে সমান। আমার কাজ শুধু চরিত্রটাকে তুলে ধরা। চরিত্রটা যাতে সব দিক দিয়ে বাস্তবিক মনে হয় সেটাই আমার কাজ। চরিত্র যা-ই হোক না কেন।
প্রশ্ন: এ বার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। গীতিকার থেকে গায়িকা এবং সেখান থেকে অভিনেত্রীর হওয়ার সফরটা কেমন?
লিসা: গীতিকার হিসাবে আমার সফর শুরু। সেখান থেকে গান গাওয়া আর তার পরে অভিনয়। তবে এই সফর খুব একটা অমসৃণ হয়নি আমার জন্য। গীতিকার-গায়িকা হিসাবে আমরা মঞ্চে অনুষ্ঠান করি। সেখানে প্রতিটি গানের অভিব্যক্তি ভিন্ন হয়। শ্রোতাদর্শকের সঙ্গে আমাদের কথাও বলতে হয়। গানের বক্তব্য শুধু গানের মাধ্যমে নয়, অভিব্যক্তি ও কথার মাধ্যমেও ফুটিয়ে তুলতে হয়।
প্রশ্ন: এই অভিজ্ঞতাই কি অভিনয়ে সাহায্য করেছে?
লিসা: হ্যাঁ অবশ্যই। তার কারণ এই গোটা বিষয়টার মধ্যেই অভিনয়ের ছোঁয়া থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে মঞ্চে অনুষ্ঠান করছি। তাই অভিনয় আমার কাছে ততটাও কঠিন বলে মনে হয়নি।
প্রশ্ন: এক জন প্রবাসী ভারতীয় হিসাবে বলিউডকে কী ভাবে দেখে এসেছেন?
লিসা: বিদেশে বড় হয়েছি, বিদেশে থেকেছি ঠিকই। কিন্তু বলিউড আমাকে সব সময়ে মোহিত করেছে। বলিউডের ছবি দেখে বড় হয়েছি। মনে আছে, ছোটবেলায় ‘হম দিল দে চুকে সনম’, ‘তাল’, ‘গুলাম’ এই ছবিগুলির গান গাইতে খুব ভালবাসতাম। প্রেক্ষাগৃহে আমার দেখা প্রথম ছবি ছিল ‘হম সাথ সাথ হ্যায়’। ছোটবেলা থেকেই বলিউডের বড় ভক্ত আমি।
প্রশ্ন: বলিউডে প্রথম কাজ পেতে বেগ পেতে হয়েছিল?
লিসা: অভিনয়ের ক্ষেত্রে একাধিক অডিশন দিয়েছি। দীর্ঘ চার বছর অডিশন দেওয়ার পরে প্রথম কাজ পাই। বিভিন্ন চরিত্রে অডিশন দিয়েও প্রত্যাখ্যান পেয়েছি। অবশেষে ‘কল মি বে’ ওয়েব সিরিজ়ে আমি সুযোগ পাই। খুবই অবাক হয়েছিলাম। কারণ কোলিন ডি কুনহা আমাকে এক জন সঙ্গীতশিল্পী হিসাবেই চিনতেন। আমার অডিশনের রেকর্ডিং দেখে প্রথমে তিনি আমাকে চিনতে পারেননি। কিন্তু আমার অভিনয় দেখে ওঁর পছন্দ হয়ে যায়।
প্রশ্ন: নেটপ্রভাবী হওয়ার ফলে কি বলিউডে কাজ পাওয়ার রাস্তা কিছুটা মসৃণ হয়?
লিসা: আসলে নেটপ্রভাবী হওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, আত্মবিশ্বাস। আর মঞ্চের অনুষ্ঠান অবশ্যই আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বলিউডে অভিনেতাদের কাছে উচ্চ প্রত্যাশা থাকে। প্লেব্যাক সঙ্গীতশিল্পীদেরও দায়িত্ব থাকে। কিন্তু ছবি সফল হওয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি তাঁদের সেই ভূমিকা থাকে না। কিন্তু মঞ্চে এবং জনসমক্ষে দীর্ঘ দিন অনুষ্ঠান করে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি হয়, যা অভিনয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা সাহায্য করে তো বটেই।
প্রশ্ন: বলিউডে অনন্যা পাণ্ডের সঙ্গে আপনার প্রথম কাজ। তারকা সন্তান বলে স্বজনপোষণের আঙুল তোলা হয় ওঁর দিকে। এক সঙ্গে কাজ করে আপনার কী মনে হয়েছে?
লিসা: আমার মনে হয় না, তারকা সন্তানদের আলাদা করে কোনও সুবিধা হয়। হয়তো প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে ওঁদের পরিচিতি থাকে। কিন্তু তাঁরা কেবল স্বজনপোষণের জন্যই কাজ পান, এমন মনে করি না। অভিনয়ে ক্ষেত্রে ওঁদেরও নিজেদের প্রমাণ করতে হয়। তারকা সন্তানদের মানুষ একটু বেশিই সমালোচনা করে। তবে সেই দিক থেকে দেখতে গেলে, প্রচারের আলোয় যাঁরাই থাকেন, তাঁদের সকলকে নিয়েই নানা রকমের নেতিবাচক কথা বলা হয় আজকাল।
প্রশ্ন: নিজেকে এই জগতে বহিরাগত বলে মনে হয়নি?
লিসা: এই পর্যন্ত আসার সফর অবশ্যই কঠিন ছিল। তবে সেটা বহিরাগত বলে কঠিন হয়েছে, এমন মনে করি না। বরং আমি কখনও ভাবিনি বিনোদন জগতে পেশাদার অভিনেত্রী হব। সেই জন্য এই জগৎকে অচেনা লাগত। তাই আমাকে অনেক কিছু শিখতে হয়েছে।
প্রশ্ন: কী কী শিখেছেন?
লিসা: আসলে আমার গানের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। সেখান থেকে ভারতের মানুষের কাছে আমি পরিচিত হই। ‘বীরে দি ওয়েডিং’ ছবিতে ‘তারিফা’ গানটি গাওয়ার ডাক পাই। বলিউডের ছবি দেখেছি। কিন্তু বলিউডে কী ভাবে কাজ হয়, মুম্বইয়ের জীবনযাপন কেমন, সে সব নিয়ে আমার কোনও ধারণা ছিল না। ক্রমশ সেটা বুঝতে শুরু করি। এই বোঝার পদ্ধতিটাই কঠিন। আলাদা করে বহিরাগত বলে কোনও কঠিন সমস্যা হয়নি।
প্রশ্ন: প্রবাসী ভারতীয় হিসাবে কার সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন?
লিসা: ছোটবেলা থেকে যাঁদের দেখে বড় হয়েছি, তাঁদের সঙ্গে অবশ্যই কাজ করতে চাই। আমি শাহরুখ খানের ভক্ত। তা ছাড়া আলিয়া ভট্ট, দীপিকা পাড়ুকোন, রণবীর সিংহের সঙ্গেও কাজ করতে চাই। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণ হতে হয়তো অনেক দেরি। আমি এখানে খুবই নতুন।
প্রশ্ন: বর্তমানে বিভিন্ন মঞ্চে বিনামূল্যে গান শোনা যায়। এর জন্য কি শিল্পীর মূল্য কমছে?
লিসা: আসলে সঙ্গীত কিন্তু বিনামূল্যে নয় এখন। বিভিন্ন অনলাইন মঞ্চে টাকা দিয়েই শুনতে হয় গান। কিন্তু অনেকেই বিনামূল্য-সংস্করণ ব্যবহার করছেন। যদিও সেখানে বিজ্ঞাপনও শুনতে হয়। তাতেও কোনও সমস্যা নেই। বৃহত্তর মানুষের কাছে সহজে গান পৌঁছচ্ছে আজ। আর কেউ যদি প্রিমিয়াম পরিষেবা চান, তা হলে অর্থ দিয়ে সাবস্ক্রাইব করছেন। মানুষ কী ভাবে গান শুনবে সেই দিকে নজর দিতে গেলে আমাদের আর কোনও অনুরাগী থাকবে না।
প্রশ্ন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব কি সঙ্গীতশিল্পীদের উপরে পড়বে?
লিসা: আমি তা মনে করি না। তার কারণ, প্রত্যেক সঙ্গীতশিল্পীর নিজস্ব গায়ক শৈলীর মধ্যে সৌন্দর্যের সঙ্গে কিছু অসম্পূর্ণতাও থাকে, যা মানুষের কণ্ঠের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। সেগুলোও কিন্তু এক জন শিল্পীকে একে অন্যের থেকে স্বতন্ত্র করে তোলে। মঞ্চে অনুষ্ঠানের সময়ে হয়তো একটা সুর সামান্য নড়ে গেল অথবা গিটারে হঠাৎ একটা ভুল কর্ড বেজে উঠল, এটাই তো মৌলিকতা। এখানেই মানুষের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পার্থক্য। প্রযুক্তি কিন্তু মানুষের এই বৈশিষ্ট্যগুলো নকল করতে পারবে না। তাই প্রযুক্তি তার মতো এগিয়ে যাক। মানুষও তাদের মতো এগিয়ে যাবে।