Advertisement
E-Paper

বলিউডের মাধ্যমে এ বার হিন্দি-চিনি ভাই ভাই

একটা সময় ছিল যখন রাশিয়াতে রাজ কপূরের জনপ্রিয়তা সেই সময়ের হলিউড তারকাদের থেকেও বেশি ছিল। ‘আওয়ারা’ দিয়ে রাজের রাশিয়া জয়যাত্রা শুরু হলেও তার পর একের পর এক ছবি। তা সে ‘বরসাত’ই হোক কী ‘শ্রী ৪২০’। রাশিয়াতে রণবীর কপূরের দাদু মানেই সুপারহিট।

ইন্দ্রনীল রায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ১৯:৩৯
ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

একটা সময় ছিল যখন রাশিয়াতে রাজ কপূরের জনপ্রিয়তা সেই সময়ের হলিউড তারকাদের থেকেও বেশি ছিল।

‘আওয়ারা’ দিয়ে রাজের রাশিয়া জয়যাত্রা শুরু হলেও তার পর একের পর এক ছবি। তা সে ‘বরসাত’ই হোক কী ‘শ্রী ৪২০’। রাশিয়াতে রণবীর কপূরের দাদু মানেই সুপারহিট।

রাজ কপূরও পঞ্চাশ থেকে বেরিয়ে নব্বই দশকের শেষ দিকে তাকালে দেখা যাবে সেই সময়ের পুরো এনআরআই বাজার (প্রধানত ব্রিটেন, কানাডা ও আমেরিকা)-এর বেতাজ বাদশাহ ছিলেন শাহরুখ খান। ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া’-র পর থেকে ‘ওম শান্তি ওম’ অবধি শুধু ডলার আর পাউন্ডের কালেকশনেই সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন কেকেআর মালিক।

অন্য দিকে জাপান আবার কোনও বলিউড স্টারের ভক্ত নয়। সেখানকার রাজা রজনীকান্ত।

বিদেশের মাটিতে বলিউডের এ রকম জয়যাত্রার কাহিনি আগেও হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু, এর মাঝেই হঠাৎ করে বলিউডের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এমন এক ‘মার্কেট’ যেটা ধরতে আজ তুমুল ভাবে মরিয়া হলিউডও। সেই ‘মার্কেট’-এর নাম চিন।

এবং গত সপ্তাহে এমনই এক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে এক বলিউড ছবি যা হয়তো আগামী দিনের বলিউডের সবচেয়ে বড় ‘রেভিনিউ স্ট্রিম’-এ পরিণত হবে।

গত মাসের ২২ মে মুক্তি পাওয়া আমির খান অভিনীত ‘পিকে’ ইতিমধ্যেই ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে চিনে। ‘পিকে’র সাফল্য দেখেই এবার আশায় বুক বাঁধছে গোটা বলিউডও।

‘‘বলিউড যদি চিনের মার্কেটটা ধরে ফেলতে পারে, তা হলে পুরো বলিউডের ফিল্মের ব্যবসাটাই বদলে যাবে। যে মার্কেট ধরতে হলিউড মরিয়া, তারা যদি আমাদের ছবি দেখে, তা হলে হলিউডকেও পেছনে ফেলে দিতে পারে বলিউড।’’—ব্যাঙ্কক থেকে জানাচ্ছিলেন ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শ।

এমনিতেই দু’সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের পর সবাই জানে চিন ভারতবর্ষে ২২ বিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ করছে।

এক দিকে মোদী ২২ বিলিয়ন, অন্য দিকে বলিউডের চিন অভিযান— সত্যি কি তা হলে হিন্দি-চিনি ভাই ভাইয়ের সময় এল?

সে কথা হয়তো ভবিষ্যত বলবে। কিন্তু, তার আগে চিনের ছবির বাজারের দিকেও একবার চোখ ফেরানো দরকার।

এই মুহূর্তে চিনের ফিল্ম মার্কেটের টার্নওভার ৫ বিলিয়ন। বলা যায় মোট ২৩৬০০ স্ক্রিনের উপস্থিতিতে এই মার্কেট আমেরিকার ছবির বক্স অফিস মার্কেটকে আগামী পাঁচ বছরেই টেক্কা দিল বলে (মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী)। এতে থিয়েটারে ভারতীয় ছবি দেখানোর সুযোগ যেমন প্রচুর বাড়বে, তেমনই বিদেশে ভারতীয় ছবি অনেক টাকার ব্যবসাও করবে। এখনও অবধি গোটা পৃথিবী জুড়ে পাঁচ হাজার স্ক্রিনে ভারতীয় ছবি দেখানোর রেকর্ডটাই সর্বাধিক।

‘‘চিনে দর্শকরা বলিউডের ছবি দীর্ঘ দিন ধরে পাইরেটেড সংস্করণে দেখতেই অভ্যস্ত। আজ আমাদের ছবি ওখানে রিলিজ করলে পাইরেসিও বন্ধ হবে। মুনাফাও বাড়বে।’’—বলছিলেন ‘পিকে’র পরিচালক রাজকুমার হিরানি। সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, দিল্লি এবং বেজিংয়ের সম্পর্ক কী হবে, তা নিয়ে বাজি ধরা যেতেই পারে। কিন্তু, বেজিং ও বলিউডের সম্পর্ক যে আজ সুপারহিট, তা এখুনি বলে দেওয়া যায়।

চিনে ভারতীয় পরিচালকদের সাম্প্রতিক সাফল্য

• আমির খান অভিনীত ‘পিকে’ ২২ মে চিনের ৩৫০০-রও বেশি পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল। রিলিজের এক মাসেরও কম সময়ে সেই ছবি ১০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করে ফেলেছে।

• এই ছবির প্রিমিয়ার হয়েছিল সাংহাই আর্ট সেন্টারে। ১২০০ সিটের এই থিয়েটার শহরের সবচেয়ে বড়। ‘চাইনিজ আমির খান ফ্যান ক্লাব’-এর সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সেই প্রিমিয়ারে (এ ক্লাবের সক্রিয় সদস্য সংখ্যা এক লক্ষেরও বেশি)।

• ইতিমধ্যেই তিনটে সরকারি চিনে সিনেমা এবং বিনোদ সংস্থার সঙ্গে এক চুক্তিপত্র সই করেছেন ইরস ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থা তিনটি হল চায়না ফিল্ম গ্রুপ কর্পোরেশন, সাংহাই ফিল্ম গ্রুপ কর্পোরেশন এবং ফুদান ইউনিভার্সিটি প্রেস। সাংহাইতে ভারত-চিন বিজনেস ফোরামে এই চুক্তি সাক্ষর হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চিন সফরের সময়।

• এই চুক্তি অনুযায়ী ইরস আর এই তিন সংস্থা একইসঙ্গে চিন-ভারতীয় ছবির প্রযোজনা, প্রোমোশন এবং বিতরণ করবে সমস্ত ক্ষেত্রে। দু’দেশেরই কলাকুশলীরা থাকবে এই প্রজেক্টে। ইরসের এই মার্কেট প্রায় আড়াইশো লোক নিয়ে।

• এই চুক্তি অনুযায়ী ইরসের তরফে ‘দিল ধড়কনে দো’ পরবর্তী বলিউড ছবি হিসেবে মুক্তি পাবে চিনে। এবং চিনা ভাষায় সে ছবি দেখার সুযোগও পাবে সেখানকার দর্শক।

• ইরস এই চুক্তি অনুযায়ী অন্তত ১০-টা ছবি প্রতি বছর তাদের লাইব্রেরি থেকে রিলিজ করবে। সেই সংগ্রহে ২০০০-এর বেশি ছবি রয়েছে। স্থানীয় মার্কেটের কথা চিন্তা করে সেই ছবিগুলোকে সেখানকার মতোই বানিয়ে তোলা হবে। একই পদ্ধতিতে ইরসও চিনে সিনেমাকে রিলিজ করবে ভারতীয় বাজারে। ভারতীয় দর্শকদের মতো করে বানিয়ে আগামী দু’-তিন বছরের ভেতরেই ইরস এই একই মডেল অনুসরণ করবে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান বা দক্ষিণ আমেরিকাতেও। ইংরেজি ভাষার বাইরের এই দেশগুলোয় যেখানে হলিউডি ছবিকেও একই কায়দায় দেখানোর রেওয়াজ আছে।

• আশা করা হচ্ছে বেজিং অনুমতি দেবে যাতে আরও বেশি সংখ্যক ভারতীয় ছবি চিনে মুক্তি পায়। অন্তত সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি হবে।

pk chian pk pk in china sino indian relationship pk beijing amir khan beijing pk china release
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy