Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Soumitra Chatterjee

বাবার শেষ পড়া বই ‘১৬০৬: উইলিয়াম শেক্সপিয়র অ্যান্ড দ্য ইয়ার অফ লিয়ার’

বাবার জীবনের শেষ কয়েকটি দিন নিয়ে স্মৃতিচারণ সৌমিত্র-পুত্রের।

উত্তমকুমার এবং সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে এক ফ্রেমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবি সৌগত চট্টোপাধ্যায়ের পারিবারিক অ্যালবাম থেকে পাওয়া।

উত্তমকুমার এবং সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে এক ফ্রেমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবি সৌগত চট্টোপাধ্যায়ের পারিবারিক অ্যালবাম থেকে পাওয়া।

সৌগত চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ১৪:৪৭
Share: Save:

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সেই যুগ অর্থাৎ উত্তম-সৌমিত্র কিংবা সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক নিয়ে তো চিরকালই চর্চা হয়েছে। আজ আরও একবার সেই সব কথা হয়তো হবে। আমি বরং একটু বলি, বাড়িতে শেষ দিনগুলো কী ভাবে কেটেছিল বাবার, কী বই পড়ছিলেন, কোন কবিতা পড়েছিলেন, আমার সঙ্গেই বা শেষ কী কথা হয়েছিল, সেই সব। এখন আমার মনের অবস্থা এমন নয়, যে বেশি কথা বলতে পারব, তবু চেষ্টা করছি।

ছোটবেলা থেকে দেখেছি বাবা অভিনয় করতেন, সাহিত্য পড়তেন। বড় হওয়ার পর কোনও বই উনি প্রথমে পড়লেন, তার পর আমি পড়লাম, এমনও অনেকবার হয়েছে। শেষ অবধি উনি পড়ছিলেন জেমস স্যাপিরোর লেখা ‘১৬০৬: উইলিয়াম শেক্সপিয়র অ্যান্ড দ্য ইয়ার অফ লিয়ার’ বইটি। এই বইটা আমিও পড়েছি। বইটা আমার কাছেই ছিল। আমার কাছ থেকে উনি নিয়েছিলেন। এটাই উনি শেষ পর্যন্ত পড়ছিলেন। জেমস স্যাপিরো একজন শেক্সপিয়র গবেষক, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। যে বছর শেক্সপিয়র কিং লিয়র লিখেছিলেন, সে বছর তাঁর জীবনে আর কী ঘটনা ঘটেছিল, সে নিয়ে বর্ণনামূলক এবং বিশ্লেষণাত্মক একটি বই। যে দিন উনি হাসপাতালে ভর্তি হলেন, সে দিন থেকেই সমস্যা শুরু হল। তার পর দিন থেকে তো উনি আনকনসাস। আমরাও কোনও বই আর পাঠাতে পারিনি।

শেষ কবিতার বই বলতে, আমরা তিন বন্ধু মিলে একটি কবিতার সংকলন বার করেছিলাম, ‘শুধু কবিতার জন্য’। বিভিন্ন বিদেশি কবিতার বঙ্গানুবাদ। সেটা আমি ওঁকে দিয়েছিলাম। আমার ধারণা, এটাই হয়তো ওঁর হাতে নেওয়া শেষ কোনও কবিতার বই।

বাবা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছেলে সৌগত (ডানদিকে)।

শেষ বাক্যালাপ বলতে, আমাকে আর মা-কে বলেছিলেন, ‘‘যাচ্ছি, কিন্তু ওখানে কত দিন থাকতে হবে জানি না…।’’ খুব তাড়াতাড়ি তো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হল। তখন কোভিড রিপোর্ট পজেটিভ এসেছিল। খুব বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি।

বাবার সঙ্গে সিনেমা দেখার স্মৃতি বললে মনে পড়ে নিউ এম্পায়ারে চার্লি চ্যাপলিনের একটা ‘দ্য কিড’ ছবিটির কথা। তার পর প্রিয়াতে। তখন অনেক দিন হয়ে গিয়েছে ‘পথের পাঁচালি’-র। তবে, তখন আমি আর আমার বোন খুব ছোট। সেই ছবিটা আমরা একসঙ্গে দেখেছিলাম।

কম বয়সের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

শেষ সিনেমা দেখার স্মৃতি বলতে গল্ফগ্রিন ফিল্ম ক্লাবে। আমি ওই ক্লাবের মেম্বার। ওঁকে ইনভাইট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিলি ওয়াইল্ডারের ‘ফেডোরা’ ছবিটা আমরা একসঙ্গে বসে দেখেছিলাম। এটা কয়েকবছর আগের কথা। আর নাটক বলতে, ওঁর অভিনীত শেষ কয়েকটা নাটকই দেখেছি। উনি মঞ্চে, আমি দর্শকের আসনে।

আরও পড়ুন: সৌমিত্রকাকুকে মডেলের মতো বসিয়ে ছবি এঁকেছিলেন বাবা

আরও পড়ুন: প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, চল্লিশ দিনের লড়াই শেষ রবিবার দুপুরে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE