Advertisement
E-Paper

একলা রাতের রাজা সৌমিত্র

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনের অবিস্মরণীয় সন্ধ্যায় হাজির ছিলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়“বাঙালি এত ভাবে চেয়েছে আমায়!”— বিস্মিত এক চিরতারুণ্য কথা বলে ওঠে।

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ১৪:৫৬
মঞ্চে সৌমিত্র। পাশে রয়েছেন প্রসেনজিত্।

মঞ্চে সৌমিত্র। পাশে রয়েছেন প্রসেনজিত্।

শুক্রবারের কলকাতা শুক্রবারের মাঘ সন্ধ্যায় এক নতুন চিত্রনাট্য খুঁজে পেল। এ ছবির প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা সবার একটাই নাম— সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
চুরাশিতেও যিনি আটচল্লিশ বা আঠারো।
জন্মদিনে ভাবেন না বগিটা মৃত্যু নামক টার্মিনাল স্টেশনের কাছে চলে এল। বরং নিজেকে ছুঁয়ে দেখেন ঝলমলে ভালবাসার মধ্যে। নিজেকে খোঁজেন আরও বেশি করে। “বাঙালি এত ভাবে চেয়েছে আমায়!”— বিস্মিত এক চিরতারুণ্য কথা বলে ওঠে।
১৯ জানুয়ারির আকাদেমির সন্ধে তখন আবেগময়। দর্শক জায়গা না পেয়ে মাটিতে। কেউ কেউ বাইরে থেকে দরজায় কান পেতেও শুনতে চাইছেন ‘অপু আড্ডা’।
মঞ্চে তাঁকে ঘিরে সমাপ্তির ‘মৃণ্ময়ী’। বললেন, ‘অপুর সংসার’ দেখে আমি তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে পড়ে গেছি। ওমা, উনি নিজেকে আমার কাছে পরিচয় করালেন ‘কাকা’ বলে!’’ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিলেন অপর্ণা সেন- চিদানন্দ দাশগুপ্ত, সত্যজিৎ রায়ের পরে তাঁর তৃতীয় মেন্টর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে পড়ে শোনালেন তসলিমা নাসরিনের ‘মৃত্যুদণ্ড’ কবিতা। জন্মদিনের এমন নির্বাচনে মুগ্ধ সৌমিত্র।
মীরের সঞ্চালনায় কখনও বা হাসির ছটা মঞ্চ জুড়ে। ‘আমাজন অভিযান’ মঞ্চস্থ হলে তাঁর অভিনেতা হবেন দেব-শঙ্কর হালদার বা ‘বুম্বাদা অমরসঙ্গী গাও না’, সবটাই মীরাক্কেলীয়!

আরও পড়ুন, ‘মাথার উপর থেকে ছাতাগুলো সব সরে যাচ্ছে’

কথার মাঝে গান হয়ে ফিরেছেন শ্রীকান্ত আচার্য। তাঁর ‘হয়তো তোমারই জন্য’-র সুর আর আবেগ জন্মদিনের রাজাকেও যেন রোম্যান্টিকতায় দুলিয়ে দিল। বহু জন্মের অনন্ত প্রেম ধরা দিল সৌমিত্রর ছন্দ আবেগে। তাঁর প্রেয়সীর জন্য পড়লেন তিনি ‘নিমন্ত্রণ’। কবিতা যেন জাপটে ধরেছে তাঁকে এক অমোঘ জীবনের নিরন্তর চলায়।
কী ভাবছেন তখন পাশে বসা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়? বললেন, “সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমার কাছে এক প্রতিষ্ঠান।”
খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছিল সুমন মুখোপাধ্যায়ের। চ্যাপলিন বলতেন কাজের মধ্যেই তিনি সবচেয়ে রিল্যাক্সড থাকেন। আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আপনি? “কাজেই আমার মুক্তি”— সহাস্যে জানালেন অপু।
এই ব্যস্ত কাজ-পাগল বাবা একদা চিঠি লিখে কথা বলতেন এগারো বছরের মেয়ের সঙ্গে। বাবার চিঠি পড়লেন মেয়ে পৌলমী বসু। সৌমিত্র মেয়েকে চিঠি লিখে বলেছিলেন মানুষ হতে। ক্ষমতা বা টাকাপয়সার মানুষ নয়। বড় হওয়া— ত্যাগে, জীবনে, ধৈর্যে বড় হওয়া মানুষ।


মঞ্চে সৌমিত্রকে বরণ করে নিচ্ছেন অপর্ণা সেন। পাশে রয়েছেন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় এবং কৌশিক সেন।

টাকি থেকে শ্যুটিংয়ের মাঝে ছুটে এসেছিলেন কৌশিক সেন। শুধু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্য। যে মানুষ ‘এক্ষণ’ পত্রিকা প্রকাশ করে, রঙ্গালয়ের ইতিহাসকে নিজের রক্তে লেখেন তাঁকে কুর্ণিশ জানানোর দিন যে আজ! খানিকটা আফশোস ছিল কৌশিকের গলায়, “আমি, সুমন, দেবশংকর, আমাদের উচিত ছিল ও পাড়ার মঞ্চকে জাগিয়ে রাখার। আজ কেন বিশ্বরূপায় অন্ধকার?”
জীবন নদীর মতো। মোড় ঘোরালেন দেবশংকর হালদার। আরও কাজ, আরও নিজেকে দেওয়া, আরও আরও ভাল থাকার নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দেবশংকর বললেন, উত্তমকুমার ভক্ত তিনি আজও মঞ্চ থেকে সৌমিত্রকে সংলাপ ছুড়ে দেন। জবাব আসে আর এক প্রান্ত থেকে।
নানা মনে নানা ভাবে আছেন তিনি। সুমন জানালেন, অপু বা ফেলুদা নয়, এ শহরের কোনও এক অবাঙালি মহিলা সৌমিত্রকে চিনেছিলেন ‘ওহ বেলাশেষে-র হিরো’ বলে!
সত্যি তো, বেলাশেষের নায়ক তিনি। যে কোনও রাস্তা থেকে বেলা শুরু করতে পারেন আজও!

আরও পড়ুন, সৌমিত্রর জন্মদিনে আগাম শুভেচ্ছা জানাল টলিউড

রাত গাঢ় হয় শহরে। তবু কেউ বাড়ি ফিরতে চান না আজ।
অপেক্ষা! যদি শোনা যায়...‘হে বন্ধু বিদায়...’
শেষ বলে কিছু নেই! শেষের কবিতা হয় না। তবুও কালের যাত্রার ধ্বনির ডাক দিলেন সৌমিত্র। অমোঘ কালের কাছে তাঁর মিনতি, ‘মোর লাগি করিও না শোক’।
তিনি কবিতার বৃত্তে ঘুরতে থাকলেন। তাঁর রথের চাকায় অভিনেতা সৌমিত্র, লেখক সৌমিত্র, নাট্যকার সৌমিত্র, কবি সৌমিত্র, গায়ক সৌমিত্র, একলা ঘরে নিজের সঙ্গে কথা বলার সৌমিত্র, জীবনের ধুলোবালিতে ঘুরতে থাকলেন।
কালের রক্তস্রোতে তিনি বারে বারেই প্রথম!
আজ যেন তাঁকে প্রথম দেখা গেল...

বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Soumitra Chatterjee Celebrities Tollywood সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় Celebrity Birthday
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy