Advertisement
E-Paper

‘দর্জিপাড়ার ছেলে’র জয়ে আশা দেখছে টলিউড

ঘটিপাড়ার ‘নোটনদাদু’ই কি শেষ কথাটা বলে গেলেন? একলা মায়ের ছেলে ফোয়ারাকে তিনিই তো বলেছিলেন, ‘যেখানে যাস্, মনে রাখিস্ তুই দর্জিপাড়ার ছেলে। কারও কাছে মাথা নিচু করবি না!’ মাথা না নোয়ানো সেই ছেলের লড়াই এবং ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর বক্স অফিস অভিযানের মধ্যে কোথায় যেন মিল রয়েছে। প্রযোজক সুজিত সরকার দারুণ ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ঠিকই। তবু চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে চন্দ্রবিন্দুর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সবেমাত্র হাতেখড়ি। ছবিতে সেই অর্থে কোনও তারকাও নেই। মাঝ জানুয়ারিতে ‘ওপেন টি’-র আত্মপ্রকাশ তাই বাঘের মুখে পড়া বলেই ধরে নিয়েছিল চলচ্চিত্র জগত।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৬

ঘটিপাড়ার ‘নোটনদাদু’ই কি শেষ কথাটা বলে গেলেন?

একলা মায়ের ছেলে ফোয়ারাকে তিনিই তো বলেছিলেন, ‘যেখানে যাস্, মনে রাখিস্ তুই দর্জিপাড়ার ছেলে। কারও কাছে মাথা নিচু করবি না!’

মাথা না নোয়ানো সেই ছেলের লড়াই এবং ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর বক্স অফিস অভিযানের মধ্যে কোথায় যেন মিল রয়েছে।

প্রযোজক সুজিত সরকার দারুণ ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ঠিকই। তবু চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে চন্দ্রবিন্দুর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সবেমাত্র হাতেখড়ি। ছবিতে সেই অর্থে কোনও তারকাও নেই। মাঝ জানুয়ারিতে ‘ওপেন টি’-র আত্মপ্রকাশ তাই বাঘের মুখে পড়া বলেই ধরে নিয়েছিল চলচ্চিত্র জগত।

কেন? একই দিনে ‘রিলিজ’ করেছিল দেব-মিঠুনের বিগ-বাজেট ‘হিরোগিরি’! ব্যোমকেশ, ফেলুদা, শবররা বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে জাঁকিয়ে রাজত্ব করছেন। এক সপ্তাহ আগেই মুক্তি পেয়েছিল প্রসেনজিত-অভিনীত ‘লড়াই’। ‘ওপেন টি’-র মতোই সেখানেও ফুটবলের উপাদান। ঘাড়ে-ঘাড়েই মুক্তি পেল অক্ষয় কুমারের ‘বেবি’। আর পরের সপ্তাহেই প্রভাবশালী প্রযোজকের ব্যানারে নামী পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ছোটদের ছবি’।

প্রিমিয়ারে অনিন্দ্যর ছবিটি দেখেই অবশ্য মনে ধরেছিল অগ্রজ পরিচালক কৌশিকের। কিন্তু ভয়ও হয়েছিল। এত ছবির ভিড়ে ‘ওপেন টি’ হল পাবে ক’দিন!

সব বাধা উড়িয়ে আনকোরা পরিচালকের ছবিই কিন্তু শেষ হাসি হেসেছে। গোটা দশেক মাল্টিপ্লেক্স ও ৭-৮টি হলে রই-রই করে দশম সপ্তাহে ঢুকে পড়েছে এঁদো গলির গল্প। পাড়ার রাজনৈতিক দাদাদের স্নেহধন্য ইস্পাত স্পোর্টিংকে গোলের পর গোল দিয়েছিল আনাড়ি ফোয়ারা। পরিচালক অনিন্দ্যর যুদ্ধজয় (যিনি নিজেও উত্তর কলকাতার ভূমিপুত্র), অনেকের কাছেই তার থেকে কম রোমহর্ষক বলে মনে হচ্ছে না।

একটি সুপারহিট তেলুগু ছবির আদলে বড় প্রযোজকের ব্যানারে ‘হিরোগিরি’ প্রথম এক সপ্তাহ রমরমিয়ে চলেছিল। এর পরেই মুখ থুবড়ে পড়ে। ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর, মফস্সলের কোনও কোনও হলেও হিরোগিরি-র থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কয়েক হপ্তা ধরে ওপেনটি-র শো চালাতে হয়েছে। কলকাতা-কেন্দ্রিক ছবি হয়েও বর্ধমান-দুর্গাপুর-মেদিনীপুর বা ত্রিপুরার আগরতলা তো বটেই, হাওড়ার পাঁচপোতা, হুগলির ধনেখালি, মছলন্দপুর, অশোকনগর থেকে চিত্তরঞ্জন--- সর্বত্রই ভাল ব্যবসা করছে ছবিটি। ৩৩টি ‘স্ক্রিনে’ মুক্তির পরে এখন চলছে ২৪টি জায়গায়। ৮০ লাখের ছবি হেসে-খেলে পৌনে দু’কোটি তুলে ফেলেছে।

পরিবেশক প্রিয়া মুভিজের আধিকারিক দেবাশিস সেনগুপ্তের চোখে এই দৌড় যেন খরগোশ বনাম কচ্ছপের ‘রেস’। ‘ওপেনটি’-র গ্রাফ দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চড়চড়িয়ে উঠেছে। তিন-চার সপ্তাহ পেরিয়ে দখল করা জমিটা ধারাবাহিক ভাবে ধরে রেখেছে ছবিটি।

সাম্প্রতিক অতীতে বাংলা ছবির আরও দু’টি অপ্রত্যাশিত সফল-দৌড়ের কথাও এই আবহে অনিবার্য ভাবে মনে আসছে। ২০১২-য় অনীক দত্তের ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ গোড়ায় মাল্টিপ্লেক্সে ঠাঁই পায়নি। প্রথম হপ্তায় ৭৪% টিকিট বিক্রি। পরের দু’হপ্তায় ধাপে ধাপে ৮৫ ও ৯৭ শতাংশ টিকিট বিক্রির হার। নামমাত্র প্রচারেই ক্রমশ টানা হাউসফুল লো-বাজেট ছবিটি।

২০১১-য় মা-ছেলের আটপৌরে গল্প ‘ইচ্ছে’ও গোড়ায় ‘প্রাইম টাইম শো’ পায়নি। কিন্তু ম্যাটিনিতে হিট করেই জয়জয়কার। ১২৫ দিন পার করে বাজেটের তিনগুণ পয়সা তুলে নিয়েছিল তারা। পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের জন্য বরাবরের মতো ব্র্যান্ড-ভ্যালু তৈরি করে দিয়েছে ‘ইচ্ছে’ই।

অনীক বা শিবপ্রসাদরাও এখন একই ভাবে ওপেন টি-কে কুর্নিশ করছেন। এখন বাংলা ছবির ৫০ দিন পার করাই মুখের কথা নয়! মাস কয়েক আগে প্রকাশিত মার্কেট রিসার্চ সংস্থা আইএমআরবি ও কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ-এর রিপোর্ট দেখিয়েছিল, ৯০ শতাংশ বাংলা ছবিই ‘ফ্লপ’। এই খেলাটা ঘুরিয়ে দিতে চলেছে ‘টিম ওপেন টি’। তরতাজা ঋদ্ধি-সুরঙ্গনা-ধী-ঋতব্রতদের সঙ্গে পোড়খাওয়া সুদীপ্তা-রজতাভ-কৌশিক সেনদের মিশেল অনেককেই হলে টেনে আনছে।

ছুটিতে দেশে এসে ‘ওপেন টি’ দেখতে ভোলেননি অধুনা স্পেনের বাসিন্দা সুপর্ণা বসু। আদতে লেকগার্ডেন্সের মেয়ে। কিন্তু উত্তর কলকাতার গল্পের সঙ্গে নিজের ‘কানেক্ট’ খুঁজে পাচ্ছেন। “ছবিটা কেমন প্রথম প্রেম-প্রথম সিগারেট-প্রথম চুমুর স্বাদ উসকে দিচ্ছে,” বলছেন সুপর্ণা। ফেলে-আসা শৈশবের ছোঁয়াচ পেতে কেউ কেউ তাই একাধিক বার ‘ওপেন টি’ দেখেছেন। ‘দর্জিপাড়ার ছেলে’র গল্প আর নিছক দর্জিপাড়ার চৌহদ্দিতে আটকে নেই।

Open Tee Bioscope riju basu Anindya Chatterjees Bengali Film Tollywood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy