শ্রীময়ী'- র সেটে তিনি ব্যস্ত। সেখান থেকেই ফিরে গেলেন স্মৃতির পাতায়। দেখতে দেখতে কুড়ি বছর পার।
প্রথম দিনগুলোর কথা মনে পড়ে?
‘‘চাকরি করতে করতে নাটক করতাম। সেখানে ইন্দর সেন আমায় অভিনয়ের অফার দেন।তখন আমার চেহারাটা অন্যরকম ছিল। খেলাধুলা করতাম। তার কিছু দিন পরে একটা বড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়। হাড়গোড় ভাঙল...চাকরি ছাড়লাম তিরিশে। অভিনয়ে ফিরলাম।’’ স্ট্রাগলের জায়গাটা ভোলেননি তিনি।
মনে হয়নি তিরিশে চাকরি ছাড়া রিস্ক?
‘‘অতো ভাবতাম না। মনে আছে একজন পরিচালক মুখের ওপর বলেছিলেন, বাংলা ছবিতে তোমার জায়গা হবে না। তিরিশ বছরে আমি জানতাম, কেউ আমাকে হিরো বানাবে না। তামাটে রং। চোয়াড়ে চেহারা...’’ নিজেকে মেলে ধরছেন সুদীপ।
এত ভাল কণ্ঠস্বর, অভিনয়ের ক্ষমতা ইন্ডাস্ট্রিতে কুড়ি বছর। মনে হয় না আরও অনেক বেশি পাওয়ার ছিল?
‘‘আমি তো ভেবেছিলাম ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকব। বড়জোর গুন্ডা, বদমাইশের চরিত্র পাব। যা পেয়েছি আশাই করিনি।’’ চাওয়া-পাওয়ার হিসেবটাই তাঁর কাছে আলাদা।
কথা বলতে গিয়ে বললেন একটা বিষয় বলতে চাই আজ। ‘‘ তখন 'মহাপ্রভু' চলছে যীশু সেই সময় স্টার। ও আমাকে প্রচুর কাজের সুযোগ করে দেয়। ওর উৎসাহে পাইলট করি। তার পর কাজ পেতে থাকি। দেবাংশু সেনগুপ্তর সঙ্গে কাজ। জয় মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় 'শ্যাওলা' বলে একটা ধারাবাহিকে কাজ করতে করতে দেখলাম, আমি আর চান্দ্রেয়ী জুটি হয়ে উঠলাম। রিংগো ‘সোম থেকে শুক্র’ সিরিজে কাজ করতে ডাকে, অভিজিৎ দাশগুপ্ত, দেবাংশু সেনগুপ্ত ‘রহস্য গল্প’-তে...’’ কাজের দরজা এ ভাবেই খুলে গেল।
আরও পড়ুন, ক্যামেরার সামনে নগ্ন! কে এই অভিনেত্রী?
পরবর্তীকালে তখনকার ধারাবাহিকে তিনি একের পর এক লিড চরিত্রে। দেবশ্রী রায় থেকে অপরাজিতা আঢ্য, শ্রীলেখা মিত্র কে ছিল না তাঁর জুটি। ইন্দ্রাণী হালদারের সঙ্গে জুটি বেঁধে নজর কেড়েছেন 'সাহিত্যের সেরা সময়'-এ। প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, ‘‘মামণি ব্রিলিয়ান্ট কো অ্যাক্টর। ওর সঙ্গে কাজ করতে গেলে নিজেকে নিংড়ে বার করতে হয়।’’
অবসরে সুদীপ।
সম্প্রতি এই জুটি বহুকাল পরে লেখক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় আর শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় টেলিভিশনের পর্দায়।
'শ্রীময়ী'-তে আপনাকে দেখে মানুষের খুব ভাল লাগছে।
‘‘ওই চরিত্রে আমায় অভিনয় করতে হয় না তো!এই ধারাবাহিকে সংলাপ জীবন থেকে পাওয়া। আমি তো বরাবর লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখায় চরিত্র হতে চেয়েছি।ওর সঙ্গে দেখা হলেই বলতাম কাজ করতে চাই। আমি তো মানুষ আমার তো লোভ হবে ।’’ হেসে বললেন সুদীপ। 'শ্রীময়ী' নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগে ভাসলেন সুদীপ। ‘‘মামণি যে চরিত্রটা করছে 'শ্রীময়ী'-তে সেটা দেখতে দেখতে মা-কে মনে পড়ে। মা অনেক কিছু পারতেন। অনেক গুণ ছিল। সে ভাবে আমি জানতামই না! লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা পড়তে পড়তে মনে চলে আসে।’’
টেলিভিশন নিয়ে যারপরনাই উৎসাহ তিনি। বিশ্বাস করেন, টেলিভিশন এখন ইন্ডাস্ট্রিকে অভিনেতা থেকে অর্থ দুই-ই সিনেমার চেয়ে বেশি দিচ্ছে। কিন্তু নিজে অল্প নিয়ে থাকতে চান। নিজেই বলেন ‘‘আমি অলস। বেশি দায়িত্ব নিতে পারি না। পি আর পাবলিসিটি এ সব থেকে দূরে থাকতে চাই।’’
আরও পড়ুন, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া..’-র এই ভুলগুলো খেয়াল করেছেন কখনও!
আর সম্পর্ক? 'শ্রীময়ী'তে তো আপনার স্ত্রী-র চেয়ে বান্ধবী নিয়ে মুগ্ধ!
‘‘ এটা রিয়েল লাইফের গল্প। একজন গৃহবধূর পাশে একজন ডায়নামিক মহিলাকে দেখানো হচ্ছে।’’ বললেন সুদীপ।
আর ব্যাক্তি জীবনে 'শ্রীময়ী'-র গল্পের মতো আর কেউ?
‘‘নাহ আমার আগের স্ত্রী অসম্ভব গুণী একজন মানুষ। যেমন অভিনেতা তেমনি শিক্ষক।আর পরবর্তীকালে আজ আমি যার সঙ্গে ঘর করি তিনিও নিজ গুণে সমৃদ্ধ। খুব ভাল নাচেন। আর কোনও সম্পর্কের প্রয়োজন হয়নি।’’ গম্ভীর গলায় বললেন সুদীপ।
নিজের কাজ, ছোট্ট জীবন। এক মুঠো আনন্দ। অভিনয়। নিজের পরিসরে ভাললাগার দিগন্তকে খুঁজে চলেন তিনি। সুদীপ মুখোপাধ্যায়। 'শ্রীময়ী' ধারাবাহিকে তাঁর কণ্ঠস্বর, ক্ষয়াটে চেহারা, দৃঢ়তা ইদানীং বাঙালি মহিলা মহলে রীতিমতো চর্চার বিষয়।
(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy