Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভ্রু পল্লবে ডাক দিলে

ভ্রু আঁকার কী দরকার স্থায়ী মেকআপ যখন করাতে পারেন। লিখছেন নাসরিন খান।ধনুকের মতো বাঁকা ভুরু আপনার পছন্দ? কিংবা পছন্দ ঠোঁটে অম্লান লিপস্টিক? যতই আইব্রো পেনসিল দিয়ে ভুরু আঁকুন কিংবা ঠোঁটে স্মার্জপ্রুফ লিপস্টিক লাগান, তা সবই উঠে যায়।

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০০:২১
Share: Save:

ধনুকের মতো বাঁকা ভুরু আপনার পছন্দ? কিংবা পছন্দ ঠোঁটে অম্লান লিপস্টিক? যতই আইব্রো পেনসিল দিয়ে ভুরু আঁকুন কিংবা ঠোঁটে স্মার্জপ্রুফ লিপস্টিক লাগান, তা সবই উঠে যায়। কিন্তু আপনার সহকর্মীর বাঁকা ভুরু, রাঙানো ঠোঁট দিনের শেষেও একই রকম থেকে যায়। কী করে সম্ভব?

জেনে রাখুন এর পেছনে রয়েছে পার্মানেন্ট মেক আপ। বিখ্যাত ট্যাটু শিল্পী সমীর পতঙ্গে জানালেন মুম্বইয়ে তাঁর পার্লারে অনেক বছর ধরেই পার্মানেন্ট মেকআপ করাচ্ছেন। সেই পার্লারে বলিউডের সেলিব্রিটিরাও আসেন। বললেন, বহু দিন ধরে ভুরু আর ঠোঁটে স্থায়ী ট্যাটু করে সৌন্দর্য ধরে রাখার রেওয়াজ চালু হয়েছে।

কলকাতাতেও স্থায়ী মেকআপের চাহিদা বেড়েছে। ‘‘আমরা বেশ কিছু বছর ধরেই পার্মানেন্ট ভুরু ট্যাটু করাচ্ছি। ঠোঁটে স্থায়ী রং বসানোর চাহিদাও কলকাতায় প্রবল,’’ বলছেন সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ একতা ভগত ভট্টাচার্য।

এর শুরু হয়েছিল মুখের দোষত্রুটি ঢাকার জন্য। যেমন ভ্রু খুব কম বা নেই, সে ক্ষেত্রে মাইক্রো পিগমেন্টেশনের দ্বারা ভ্রু সুন্দর করা হয়। এটা স্থায়ী মেক আপের অঙ্গ। ‘‘পার্মানেন্ট মেকআপ ট্যাটুর মতোই একটা রূপটান। কিন্তু এটা ত্বকের ওপরের স্তরেই থাকে। ট্যাটুর মতো ত্বকের গভীরে যায় না,’’ বললেন ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. যমুনা পাই।

স্থায়ী রূপটানে কি যন্ত্রণা আছে?

‘‘একেবারেই না। অবশ করার ক্রিম লাগিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্যাটু শিল্পীরাই এই মেক আপ করিয়ে থাকেন। দুই ভ্রুর মেকআপ করাতে সময় লাগে মিনিট পঁচিশ,’’ বললেন একতা। ‘‘স্থায়ী মেকআপ নিতে ইচ্ছুক এমন মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। এটা করালে প্রতিদিন ভ্রু আঁকতে বা লিপস্টিক লাগাতে সময় নষ্ট হবে না,’’ বলছেন ডা. পাই।

স্থায়ী মেকআপে খরচ কত?

কলকাতার পার্লারে ২০০০ টাকা খরচ পড়ে ভ্রু জোড়ায় স্থায়ী মেকআপ করাতে। স্থায়ী মেকআপে ভ্রুর রং হালকা হয়ে যেতে পারে। তাই বছরে একবার ভ্রুতে ও ঠোঁটে স্থায়ী মেকআপ বা ট্যাটু করাতে হবে।

কী ভাবে এই ট্যাটু হয়? শুনতে সহজ মনে হলেও ব্যাপারটা অত সোজা নয়। ‘‘অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে রেখে প্রতিটি রোম পরীক্ষা করার পর আসল রোমের মতোই রং তৈরি করা হয়। সেগুলো বসিয়ে দেওয়া হয় যেখানে যেখানে ভ্রুতে রোম আছে সেগুলোকে অক্ষত রেখে, তার মধ্যে মধ্যে,’’ বললেন ডা.পাই।

ভ্রু এবং ঠোঁট ছাড়াও মুখের স্থায়ী বিউটি স্পট এবং আইলাইনারেরও প্রচুর চাহিদা এখন। ট্যাটু শিল্পী সমীর বললেন, ‘‘নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি আর রঙের সাহায্যে ভ্রুর স্থায়ী মেকআপ করা এখন সহজ হয়ে গিয়েছে। আইলাইনার দিয়ে স্থায়ী ভাবে চোখ সাজাতেও দু’তিনঘণ্টার বেশি লাগে না। ঠোঁটের স্থায়ী মেকআপের পর পনেরো থেকে আঠারো মাস পরে মাঝে মাঝে অল্পক্ষণের সিটিং হয়।’’

স্থায়ী মেকআপের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি? মেকআপের পরবর্তী দেখভাল কী রকম?

না স্থায়ী মেকআপের কোনও ঝুট ঝামেলা নেই। নেই কোনও নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। তবে কিছু কিছু যত্ন আত্তি নেওয়ার প্রযোজন আছে। ‘‘যেহেতু ভ্রু বা ঠোঁটে স্থায়ী মেকআপ করার সময় ত্বকে অনেক আঘাত পড়ে, হাল্কা ক্ষত তৈরি হয়। সামান্য ব্যথাও হয়। তখন বিশেষ ধরনের অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগাতে হয়। ক্রিম লাগালে ক্ষতের জায়গা নরম থাকে এবং ব্যথাও কমে। স্থায়ী মেকআপ করানোর পর মুখে আর মেকআপ লাগাবেন না দু’ তিন দিন। রোদে বেশি বেরোনো চলবে না। সাঁতার কাটাও চলবে না স্থায়ী মেকআপ করানোর পর বেশ কিছু দিন,’’ সাবধান করলেন ডা. পাই।

তা হলে কি আপনি স্থায়ী মেকআপ করানোর জন্য তৈরি?

এই ধরনের রূপটানে প্রচুর সময় বেঁচে যায়। তবে এই মেকআপ করানোর আগে একটু খোঁজখবর নিয়ে নিন। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কোন পার্লারে স্থায়ী মেকআপ করাবেন ঠিক করুন। কোন রং আপনার ঠোঁটে ও ভ্রুতে মানাবে সেটাও বিশেষজ্ঞদের কাছে জানুন। যদি আপনার ত্বক সংবেদনশীল হয়, যিনি ট্যাটু করাচ্ছেন তাঁকে জানান।

ত্বক অ্যালার্জি প্রবণ কি না জানার জন্য রূপটানের আগে প্যাচ টেস্ট করিয়ে নিন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে এই রূপটান করাতে হবে। রূপটানের যন্ত্রপাতিগুলো যেন জীবাণুমুক্ত করা হয়। ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করবেন। ডায়াবেটিস বা অন্য অসুখ থাকলে এই ধরনের রূপটানের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হল এই ধরনের স্থায়ী মেকআপ সাধারণ ট্যাটু পার্লারে করাবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE