Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দিশার মৃত্যুর পর হার্ডডিস্ক মুছে ফেলতে বলেন সুশান্ত? সিদ্ধার্থের বয়ানে ঘনীভূত রহস্য

সুশান্ত কাণ্ডে তিনি অন্যতম প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী। পরিচয়ে সুশান্তের বন্ধু, কোম্পানির অংশীদার। মুম্বইয়ে পা রাখার পর থেকে প্রায় রোজই তাঁকে ডেকে পাঠাচ্ছে সিবিআই। জেরায় কী বলেছেন সিদ্ধার্থ? কোথায় প্রথম তাঁদের দেখা হয়েছিল? মৃত্যুর দিন এবং আগের দিন কারা এসেছিলেন সুশান্তের ফ্ল্যাটে? দিশার মৃত্যু নিয়ে কেন এত চিন্তিত ছিলেন অভিনেতা? কেনই বা সিদ্ধার্থকে দেখা মাত্র কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত?

বাঁ দিক থেকে সুশান্ত, দিশা এবং সিদ্ধার্থ।

বাঁ দিক থেকে সুশান্ত, দিশা এবং সিদ্ধার্থ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২০ ১৮:২১
Share: Save:

দেখা মাত্রই নাকি কান্নায় জড়িয়ে ধরেছিলেন সুশান্ত। প্রাক্তন ম্যানেজার দিশার মৃত্যুর পর থেকেই নাকি প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছিল সুশান্তের, মাঝেমধ্যেই কর্মচারীদের উপর চিৎকার করতেন সুশান্তের দিদি, সুশান্তকে নিজের হাতে ওষুধ দিতেন সিদ্ধার্থ, নিজের যাবতীয় খরচের জন্য সুশান্তের কার্ডই ছিল রিয়ার ভরসা...সুশান্ত কাণ্ডে ইডি এবং সিবিআইকে দেওয়া বয়ানে এমনই কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সিদ্ধার্থ পিঠানি।

সুশান্ত কাণ্ডে তিনি অন্যতম প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী। পরিচয়ে সুশান্তের বন্ধু, কোম্পানির অংশীদার। মুম্বইয়ে পা রাখার পর থেকে প্রায় রোজই তাঁকে ডেকে পাঠাচ্ছে সিবিআই। জেরায় কী বলেছেন সিদ্ধার্থ? কোথায় প্রথম তাঁদের দেখা হয়েছিল? মৃত্যুর দিন এবং আগের দিন কারা এসেছিলেন সুশান্তের ফ্ল্যাটে? দিশার মৃত্যু নিয়ে কেন এত চিন্তিত ছিলেন অভিনেতা? কেনই বা সিদ্ধার্থকে দেখা মাত্র কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত?

‘ইণ্ডিয়া টু-ডে’-র এক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, গোয়েন্দা সংস্থাটিকে সিদ্ধার্থ জানিয়েছেন, ২০১৭-তে এক গ্রাফিক ডিজাইন এজেন্সিতে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজে ঢোকেন তিনি। সেখানেই তাঁর আলাপ হয় আয়ুশ শর্মার সঙ্গে। আয়ুশ ছিলেন সুশান্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আয়ুশই নাকি সিদ্ধার্থকে কেরিয়ার পোক্ত করার জন্য মুম্বই আসার পরামর্শ দেন। সিদ্ধার্থের বয়ান বলছে, আয়ুশের কথামতো ২০১৯-এর এপ্রিলে মুম্বইয়ে আসেন তিনি। দেখা হয় সুশান্তের সঙ্গে। দেখা করিয়ে দেন আয়ুশই।

‘বেতন দেব না, রোজের খরচ দেব’

সিদ্ধার্থ জানিয়েছেন, সে সময় আকাঙ্ক্ষা ছিলেন সুশান্তের ম্যানেজার। সুশান্তের স্বপ্নের প্রজেক্ট ‘ড্রিমস ১৫০’-তে সিদ্ধার্থকে কাজ করার প্রস্তাব দেন তিনি। শর্ত ছিল বেতন দেওয়া হবে না। তবে রোজকারের হাতখরচ, খাওয়া দাওয়া সমস্ত খরচা দেওয়া হবে সুশান্তের কোম্পানির থেকেই। তিনি জানান, মাঝেমধ্যেই নাকি কর্মচারীদের উপর অকারণে চিৎকার করতেন সুশান্তের দিদি প্রিয়ঙ্কা। আর সে জন্যই নাকি অনেক কর্মচারী অসন্তুষ্ট হয়ে কাজ ছেড়ে দেন। যদিও এর আগে সুশান্তের পরিবার-সহ অভিনেতা ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েক জন জানিয়েছিলেন, রিয়া সুশান্তের জীবনে আসার পর তিনিই নাকি গাড়ির চালক থেকে শুরু করে অনেককেই কাজ থেকে বার করে দিয়েছিলেন। যদিও সিদ্ধার্থের বয়ান একেবারেই অন্য কথা বলছে।

দিদি নয়, রিয়ার পক্ষ নিয়েছিলেন সুশান্ত

তাঁর বয়ান থেকে জানা যাচ্ছে, একবার আয়ুশ (সুশান্তের বন্ধু), আকাঙ্ক্ষা (সুশান্তের ম্যানেজার), রিয়া (সুশান্তের প্রেমিকা), প্রিয়ঙ্কা (সুশান্তের দিদি) এবং তিনি, সবাই মিলে সুশান্তের ফার্মহাউজে পিকনিকে যান। তিন-চার দিন সেখানে ছিলেন তাঁরা। আর সেখানেই নাকি রিয়া এবং প্রিয়ঙ্কার মধ্যে জোর ঝামেলা হয়। সুশান্ত রিয়ার পক্ষ নেন। আর সে কারণেই প্রিয়ঙ্কা এবং তাঁর স্বামী সুশান্তের বাড়ি ছেড়ে দেয়। দিদি-জামাইবাবু চলে যাওয়ার পর সিদ্ধার্থ থাকতে শুরু করেন সুশান্তের সঙ্গে। প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে যে ঝামেলা হয়েছিল তা রিয়া এবং প্রিয়ঙ্কা দু’জনেই জানিয়েছিলেন আগে। রিয়া বলেছিলেন, মদের ঘোরে রিয়াকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা, তিনি বাধা দেন। প্রিয়ঙ্কা বলেছিলেন, ভাইকে পরিবারের থেকে আলাদা করার জন্যই রিয়া ইচ্ছে করে সুশান্তকে ভুল বুঝিয়েছিলেন।

সুশান্তের আগের ফ্ল্যাট কি সত্যিই ভুতুড়ে ছিল?

সুশান্তের পরিচারক, রিয়া, তাঁর ভাইয়ের আগে মুম্বই পুলিশকে একাধিক বার জানিয়েছিলেন সুশান্তের কেপরি হাইটসের ফ্ল্যাটটি নাকি ভুতুড়ে ছিল। রাতের বেলা অদ্ভুত আওয়াজ, লিফটের ওঠানামার শব্দ ভেসে আসত সেখানে। সিদ্ধার্থ তাঁর বয়ানে জানান, শুধু রিয়া বা শৌভিকই নন, সুশান্তেরও নাকি এ রকমটা মনে হত। আর সে কারণেই কেপরি হাইটস ছেড়ে তিনি ওয়াটার স্টোন রিসর্টে থাকতে শুরু করেন। সে সময় নাকি রিয়াও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে এই রিসর্টেই নাকি এক আধ্যাত্মিক গুরুর সাহায্যে শান্তিলাভের সন্ধানে ছিলেন সুশান্ত। সিদ্ধার্থের বয়ান অনুযায়ী, এর পরেই নাকি নিজের ড্রিম প্রজেক্টের থেকে ক্রমশ সরে আসতে থাকেন সুশান্ত। রিয়ার সঙ্গেই বেশি সময় কাটাতে শুরু করেন। সে সময় সিদ্ধার্থের বাবার ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় ফিরে যান সিদ্ধার্থ। সুশান্তকে কথা দেন, আবার ফিরে আসবেন তিনি।

'জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল সুশান্ত'

সিদ্ধার্থ জানান, এই বছরের জানুয়ারিতে ফিরে আসার জন্য নাকি তাঁকে ফোন করেন সুশান্ত। আর অভিনয় করতে চান না বলেও জানান তিনি। সিদ্ধার্থের বয়ান অনুযায়ী, তিনি আমদাবাদের ৪৫ হাজার টাকার চাকরি ছেড়ে চলে আসেন মুম্বই। দেখা মাত্রই নাকি তাঁকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করেন। সিদ্ধার্থের বয়ানে বলেন, “ও বলে সব কিছু বেচে দেবে। অভিনয় ছেড়ে ড্রিম প্রজেক্টেই ফোকাস করবে। রিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করতেই সুশান্ত বলে, সবাই আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছে।” সিদ্ধার্থও আরও বলেন, সে সময় সুশান্তের সঙ্গে রিয়ার ঝামেলা চলছিল। তবে কিছু দিন পরেই রিয়া ফিরে আসেন। সিদ্ধার্থদের বলেন সুশান্তের খেয়াল রাখতে। তবে সুশান্তের ক্রেডিট কার্ডের নিয়ন্ত্রক ছিলেন রিয়াই, জানান সিদ্ধার্থ।

রিয়ার সঙ্গে সুশান্তের সম্পর্ক কেমন ছিল? কী বলছেন সিদ্ধার্থ?

‘ওষুধ দিয়েছিলাম সুশান্তকে’

ওই মাসেরই শেষে চন্ডীগড়ে দিদির বাড়ি যান সুশান্ত। সঙ্গে ছিলেন সিদ্ধার্থও। সেখানে গিয়েও নাকি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন সুশান্ত, জানা যাচ্ছে সিদ্ধার্থের বয়ান থেকে। তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আরও অনেক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে বলে জানান সিদ্ধার্থ। আর তখনই নাকি ডাক্তার চাওড়ার প্রেসক্রাইব করা ওষুধ সুশান্তকে দেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন সিদ্ধার্থ।

দিশার মৃত্যু ও সুশান্তের অস্বাভাবিক আচরণ

সিদ্ধার্থ জানান, এর পর সব কিছু ভালই চলছিল। রুমি জাফরি সুশান্তকে ছবি অফার করেন। সুশান্ত নাকি সিদ্ধার্থকে বলেছিলেন, ওষুধ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। বারণ করেছিলেন সিদ্ধার্থ। এর মধ্যেই আবার অঘটন। ৮ জুন মারা যান সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা। পুলিশ জানায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সংবাদমাধ্যমেও লেখা হয়, সুশান্তের ম্যানেজার আত্মহত্যা করেছেন। দিশার মৃত্যুতে সুশান্তের নাম জড়ানোয় ভয় পেয়ে যান সুশান্ত, এমনটাই জানান সিদ্ধার্থ গোয়েন্দা সংস্থাকে জানান। তিনই আরও জানান, এর পরেই নাকি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন সুশান্ত। “হার্ডডিস্ক থেকে আমায় সমস্ত পুরনো ভিডিয়ো, তথ্য মুছে দিতে বলে সুশান্ত। অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে। বারবার দিশার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে থাকে আমায়”, সিবিআইকে জেরায় বলেন সিদ্ধার্থ।


শেষের সে দিন, ১৪ জুন

৮ জুন দিশা সালিয়ান মারা যান। রিয়াও সুশান্তের ফ্ল্যাট ছেড়ে দেন। সুশান্তের দিদি মিতু এসে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁর বাচ্চা ছোট, এই কারণ দেখিয়ে মিতু সিংহও ১২ তারিখ চলে যান বলে জানান সিদ্ধার্থ। সিদ্ধার্থ বলছেন, “১৪ তারিখ সকালে আমি হলরুমে বসে গান শুনছিলাম। কেশব আন্দাজ সাড়ে ১০টা নাগাদ আমার কাছে এসে বলে, সুশান্ত দরজা খুলছে না। আমরা বার বার ডাকতে থাকি। কিন্তু কোনও সাড়া নেই। এর পর সুশান্তের দিদি মিতু আমায় ফোন করে বলে, তাঁর ভাই ফোন ধরছে না। আমিও বলি দরজা ধাক্কা দিলেও খুলছে না সুশান্ত।“ এর পরেই চাবিওয়ালাকে খবর দেওয়া হয় বলে জানান সিদ্ধার্থ। ঘরে ঢুকে তিনিই প্রথম সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান বলে সিবিআইকে জানান সিদ্ধার্থ।

সিদ্ধার্থকে আজ আবারও জেরা করছে সিবিআই। সূত্রের খবর খুব শীঘ্রই রিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে তাঁকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE