Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Sushant Singh Rajput

Sushant-Aryann: বড় তারকা হয়েও কী ভাবে নিজের কাজকে ভালবেসে যেতে হয়, সুশান্তই আমাকে শিখিয়েছিলেন

২০১৫ সালে দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ ছবিতে সুশান্তের সঙ্গে কাজ করেছিলেন আরিয়ান।

আরিয়ানের স্মৃতিতে উজ্জ্বল সুশান্ত।

আরিয়ানের স্মৃতিতে উজ্জ্বল সুশান্ত।

আরিয়ান ভৌমিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ১৩:৪১
Share: Save:

২০১৫ সাল। তখন আমি মাত্র ২৩। একদিন জানতে পারলাম, ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে ছবি তৈরি করছেন দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজের লোভ সামলাতে না পেরে সেই ছবির একটি চরিত্রের জন্য অডিশন দিলাম। ৪০০-৫০০ জনের মধ্যে ওঁরা বেছে নিলেন আমাকে। ভাবতে পারিনি, এত অল্প বয়সে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মতো একজন দক্ষ অভিনেতার সঙ্গে কাজের সুযোগ আসবে! সবটাই তখন স্বপ্নের মতো। এর পরে কলকাতায় লুক টেস্টের জন্য আমার ডাক পড়ল। সেই প্রথম দেখা হয়েছিল সুশান্তের সঙ্গে। এখনও দিনটা স্পষ্ট মনে আছে। প্রোডাকশনের বাকি সদস্যদের সঙ্গেই বসেছিলেন ছবির নায়ক। পিরিয়ড ফিল্ম। সেখানে প্রত্যেক চরিত্রের ‘লুক’ বিশ্বাসযোগ্য হওয়াটা খুব জরুরি। সে সব নিয়ে আলোচনা চলছিল। সব কিছুই খুব মন দিয়ে শুনছিলেন তিনি।

‘ব্যোমকেশ বক্সী’-র সুবাদে আমরা বেশ কিছু দিন একসঙ্গে কাজ করেছি। কিছুটা অংশ মুম্বইয়ে শ্যুট করা হয়েছিল। আবার কিছুটা কলকাতায়। একসঙ্গে চিত্রনাট্য পড়েছি বহু বার। সেই সময় সুশান্তকে যত দেখতাম, অবাক হতাম। অত বড় মাপের একজন অভিনেতা। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি থেকে এসে অবলীলায় অভিনয় করছিলেন বড় পর্দায়। কিন্তু কোনও তারকাসুলভ হাবভাব ছিল না তাঁর। খুব সাধারণ ভাবে থাকতে ভালবাসতেন। সারাক্ষণ শুধু কাজ নিয়ে চিন্তা। পরিচালক এক বার ‘অ্যাকশন’ বলে দিলে তিনি আর কোনও দিকে তাকাতেন না। সেই সময় কোনও হাসিঠাট্টাতেও অংশগ্রহণ করতে দেখিনি তাঁকে। কী ভাবে নিজের অভিনয়কে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, সেটে বসেও শুধু সে সব ভাবনাই খেলত তাঁর মাথায়। এত সাফল্য পাওয়ার পরেও যে কাজ নিয়ে এ ভাবে ভেবে যাওয়া যায়, ওই অল্প বয়সে সুশান্তকে দেখেই তা শিখেছিলাম।

পিরিয়ড ছবির শ্যুট অন্যান্য ছবির তুলনায় বেশ কঠিন। সেখানে রাস্তায় একটা সিগারেট পড়ে থাকলেও, সেটাকে ছবিতে যে সময়কালকে তুলে ধরা হচ্ছে, সেই সময়ের হতে হবে। এ রকম একটা ছবির শ্যুটিংয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা মুহূর্ত খুব মূল্যবান। ইচ্ছা থাকলেও তাই কাজের ফাঁকে খুব বেশি আড্ডা দিয়ে উঠতে পারিনি সুশান্তের সঙ্গে। তবে একটা ঘটনার কথা আজ খুব মনে পড়ে যাচ্ছে। ছবির একটি দৃশ্যের জন্য একটা নকল ট্রাম তৈরি করা হয়েছিল। আমরা সবাই মিলে সেটাকে ঠেলে ঠেলে সেট অবধি এনেছিলাম। সুশান্তও সে দিন আমাদের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। ওই মুহূর্তে কে কত বড় তারকা, কে জুনিয়র আর্টিস্ট— কেউ সে সব কথা মাথায় রাখেননি। তখন আমরা ‘টিম’। সে দিন সুশান্তকে দেখে বুঝেছিলাম, কত বড় মাপের মানুষ তিনি। নিজেকে কখনও আলাদা করে রাখেননি। সবার সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসতেন। সব সময় একটা অমায়িক হাসি লেগে থাকত তাঁর মুখে।

ছবির একটি দৃশ্যে সুশান্তের সঙ্গে আরিয়ান।

ছবির একটি দৃশ্যে সুশান্তের সঙ্গে আরিয়ান।

কলকাতায় ছবির কাজ চলাকালীন সোদপুর, টেলিফোন ভবনের সামনে শ্যুট করেছিলাম আমরা। ৬টা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজও সেই জায়গাগুলোয় ফিরে গেলে সুশান্তের কথা মনে পড়ে যাবে। ওঁর মুখটাই চোখের সামনে ভাসবে। গত ১৪ জুন যখন ওঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়েছিলাম, প্রথমে বিশ্বাস করিনি। ভেবেছিলাম, ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে কেউ। এ রকম একজন প্রাণবন্ত মানুষ যে এ ভাবে হারিয়ে যাবেন, ভাবতে গেলে ভিতরটা কেমন যেন ভেঙে আসে। ওঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ জীবনে এক বারই হয়েছে। বিস্তর সাফল্য পেয়েও কী ভাবে মাটিতে পা রেখে মন দিয়ে কাজ করে যেতে হয়, সেটা সুশান্তই আমাকে শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।

পেশাগত জীবনের শুরুর দিকে এত বড় ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম। ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’-তে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তাই সারা জীবন মনে থেকে যাবে। তবে সুশান্তের জন্য হয়তো এই ছবিকে আরও বেশি করে মনে রাখব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE