Advertisement
E-Paper

মিহি কণ্ঠস্বর, ‘মেয়েলি’ মনের জন্য বার বার লাঞ্ছিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ! শৈবাল বসুর নাটকে আর কী উঠে আসবে?

রবীন্দ্রনাথের নির্মিত নারী চরিত্রদের নিয়ে আলোচনা হয় প্রায়ই। কী ভাবে একজন পুরুষ হয়ে এই ভাবে নারী মন আঁকতে পেরেছিলেন তিনি, সেও এক বিস্ময়। কোথাও গিয়ে তাঁর মনের অন্দরেও কোনও নারীর বাস ছিল কি?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ ২০:৩০
রবীন্দ্রনাথের ভানুসিংহের পদাবলীর গান নাটক জুড়ে।

রবীন্দ্রনাথের ভানুসিংহের পদাবলীর গান নাটক জুড়ে। ছবি: সংগৃহীত।

বাঙালির মনেপ্রাণে জায়গা করে নিয়েছেন সেই কবে থেকে। রক্তমাংসের মানুষ থেকে তিনি অধিকাংশ বাঙালির কাছে হয়ে উঠেছেন পূজনীয় ‘ঠাকুর’। তবে শুধু একটি ব্যক্তিত্ব নয়। বাঙালির কাছে আজ তিনি একটি ধারণা ও প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এক সময়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও সমাজের গতে বাঁধা ধারণার শিকার হতে হয়েছে। কথা বলার ধরন, আচরণের জন্য নানা কটাক্ষে বিদ্ধ হয়েছে তাঁর শৈশব ও তরুণ জীবন।

রবীন্দ্রনাথের নির্মিত নারী চরিত্রদের নিয়ে আলোচনা হয় প্রায়ই। কী ভাবে এক জন পুরুষ হয়ে এই ভাবে নারী মন আঁকতে পেরেছিলেন তিনি, সেও এক বিস্ময়! কোথাও গিয়ে তাঁর মনের অন্দরেও কোনও নারীর বাস ছিল কি? নিজের আসন্ন কাজ ‘ছিয়ে ছিয়ে রাধা’ নিয়ে বলতে গিয়ে এই কথাগুলিই উঠে এল নাট্যকর্মী শৈবাল বসুর মুখে।

একটা সময়ে স্কুলে তির্যক মন্তব্যের শিকারও হতে হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে। পরে অল্প দিনের জন্য কলেজে পড়তে গিয়েও নানা একই মন্তব্য শুনতে হয়েছে তাঁকে। ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ও পোশাকের জন্য বিদ্ধ হতে হয়েছে তাঁকে। শৈবাল বলেছেন,“রবীন্দ্রনাথের জীবনের বিভিন্ন পর্ব আমরা জীবনস্মৃতি, ছেলেবেলা, তাঁর চিঠিপত্র থেকে পেয়ে থাকি। বেড়ে ওঠার মধ্যে কখনও তিনি বাড়ির পরিচারকদের শাসনে পড়ছেন। কখনও স্কুলে গিয়ে র‌্যাগিং-এর সম্মুখীন হচ্ছেন।”

রবীন্দ্রনাথ এক জায়গায় লিখেছিলেন, “স্কুলের বন্ধুদিগের সঙ্গে মিশিতে পারিতাম না। অধিকাংশের সংস্রবে অশূচি বোধ হত।” এই প্রসঙ্গে নাট্যকর্মীর বক্তব্য, “পুরুষ বন্ধুদের সংস্রবে কেন অশূচি বোধ করতেন তা বোঝাই যায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের একটি তথ্য থেকেই পাওয়া, রবীন্দ্রনাথকে সেই কলেজেও তির্যক মন্তব্যের শিকার হতে হয়। সকলের সঙ্গে পোশাক-আশাকের পার্থক্যের জন্য তাঁকে দেখে পরিহাস শুরু হয়। তাই একটা সময় পরে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি।”

প্রয়াত চিত্রপরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর একটি গবেষণায় জানিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে বাইজি পর্যন্ত বলা হয়েছিল। জানান শৈবাল বসু। তিনি বলেন, “দীর্ঘ দিন লিঙ্গ রাজনীতির মুখোমুখি হতে হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে। অল্প বয়সে বেনারসি কাপড় দিয়ে বানানো পাগড়ি পরতেন তিনি। পরে দক্ষিণী শাড়ি দিয়ে ধুতি পরেছেন। লম্বা চুল, মিহি কণ্ঠস্বর, অন্য রকম সাজ। এর জন্য সেই সময়েও তাঁকে নিয়ে পরিহাস করা হয়েছে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক নিয়ে নানা কথা প্রচলিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শৈবালের মতে, “তথ্য বলছে, কাদম্বরী দেবীর হাত ধরেই মেয়েদের অন্দরমহলে রবীন্দ্রনাথ প্রবেশ করেছিলেন। সেখানে ছাদে কেউ ডালের বড়ি বিছিয়ে দিচ্ছেন, কেউ চুল শুকোচ্ছেন, দাসীরা কাপড় কাচছেন— এই জগৎ দেখতে থাকেন তিনি। নিজেও সুপুরি কাটতেন, আমসত্ত্ব পাহারা দিতেন। তথাকথিত মেয়েলি কাজের সঙ্গেও জড়িয়ে ছিলেন তিনি। এখান থেকেই মেয়েদের মনের কথাও বুঝতে শুরু করেন তিনি এবং নারী চরিত্রগুলির চিত্রায়ণ শুরু তাঁর।”

এখান থেকেই সুদর্শনা, বিমলা, বিনোদিনীর মতো চরিত্র নির্মাণ করতে থাকেন তিনি। এক জন তথাকথিত ‘মেয়েলি’ ছেলের লাঞ্ছিত হওয়ার কথা থেকে শুরু করে এবং মেয়েদের মনের গড়ন এবং সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে শৈবাল নির্মাণ করেছেন ‘ছিয়ে ছিয়ে রাধা’র।

নাটকর্মী জানান, এই অভিনয়টি আসলে ভানুসিংহ ঠাকুর নামের এক কবির জীবনের আখ্যান। সেই আখ্যান বলতে বলতে ভানুকবি তাঁর রাধাজীবনের কথা বলেন। রাধা সংসারের, সমাজের চেনা এবং বাঁধা চৌখুপির বাইরে পথ চলে একা। পদাবলী সাহিত্যে একটি মেয়ের এই একলা চলার নাম ‘অভিসার’। এই নাটকে ভানুসিংহের পদাবলীর গানের ব্যবহার হয়েছে। এই নাটকের শৈবাল বসু ছাড়াও রয়েছেন জয় গোস্বামী, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শ্রীকান্ত আচার্য, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রাবণী সেন, বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ, পণ্ডিত বিপ্লব মণ্ডল, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মৌমিতা রায়, মৌমিতা রুদ্র প্রমুখ। ১২ জুলাই জ্ঞানমঞ্চে সন্ধে ৬টা ২৫ মিনিটে মঞ্চস্থ হবে এই অনুষ্ঠান।

Rabindranath Tagore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy