অভিভাবক: সুব্রতবাবুর বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র
ডাইনিং টেবিলে ছুরি দিয়ে আনাজ কাটছিলেন লিপিকা চক্রবর্তী। একমনে। পাশে বসে দেবব্রত চক্রবর্তী স্ত্রীর কাজ দেখছেন। স্বামীর দিকে তাকিয়ে লিপিকাদেবী মুচকি হেসে বলেন, ‘আজ তোমাকে আনাজ কাটতে দিচ্ছি না। তুমি টিভি দেখো।’ হেসেই জবাব দিলেন, “ঝিরিঝিরি করে আলুটা কিন্তু আমিই কাটব।”
ঝাড়গ্রাম শহরের এক বহুতলের বাসিন্দা এই প্রবীণ দম্পতি সুব্রত চক্রবর্তীর বাবা-মা। ‘পদ্মাবত’এর শিল্প নির্দেশক সুব্রত চক্রবর্তী। ছেলে হিন্দি ছবির জগতে এখন ‘সেলিব্রিটি’র মর্যাদা পাচ্ছেন। তাতে অরণ্য শহরে বাবা-মায়ের জীবনযাপনে এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী দেবব্রতবাবু হাসতে হাসতে বললেন, “আগে সবাই আমাকে রেলের পুরনো বড়বাবু হিসেবে চিনত। এখন রাস্তাঘাটে বেরলে শুনতে পাই লোকজন বলছে, ওই দেখ, সুব্রতর বাবা যাচ্ছে। শুনে বেশ গর্ব হয়।”
বাবার পরে মা লিপিকাও ‘বাবাই’য়ের স্মৃতিচারণে মগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন। বাবাই সুব্রতর ডাক নাম। বললেন, “ছোটবেলা থেকে বাবাই ছবি আঁকতে ভীষণ ভালবাসত। ওকে আমরা ওর মতো করে বড় হতে দিয়েছি।” দেবব্রতবাবু জানান, ছেলেকে ভিস্যুয়াল আর্টস পড়ানোর বিপুল খরচ ছিল। দৈনন্দিন খরচ কমিয়ে সুব্রতর পড়াশোনা চালিয়েছি। প্রস্তুতি পর্বে লড়াই ছিল। পরে মুম্বইয়ের মাটিতে জায়গা করে নেওয়ার জন্য ছেলেকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। দেবব্রতবাবু ও লিপিকাদেবী বলেন, “এত সাফল্য, এত খ্যাতি। ছেলেকে বলেছি, পা-দু’টো যেন মাটিতে থাকে।” পুত্রবধূ ঝুমা ঝাড়গ্রামেরই মেয়ে। দম্পতি বলেন, “দু’জনেই মাটির মানুষ। ওরা যেভাবে ক্যাটরিনা, দীপিকা, অক্ষয়কুমারের সঙ্গে মেশে সে ভাবেই ঝাড়গ্রামে এলে পরিচিতদের সঙ্গে আড্ডায় মাতে।”
ছেলের জন্য গর্ব হয় বলেছেন বটে। কিন্তু জীবনযাপনে সেই গর্বের ছোঁয়াটুকু নেই সুব্রতর বাবা-মায়ের। চাকরির শেষের দিকে ঝাড়গ্রামে এক আবাসনের চারতলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন দেবব্রতবাবু। আবাসনে লিফট নেই। তবুও ফ্ল্যাট ছাড়ার কথা ভাবেননি দু’জনে।
সিঁড়ি ভাঙার সময়ে লড়াইয়ের কথা মনে করেন ‘সেলেব’ ছেলের জনক-জননী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy