Advertisement
১১ মে ২০২৪

অপ্রীতিকর

প্রীতি জিন্টার গালে টোল ফেলা সেই মায়াবি হাসি মুগ্ধ করত সবাইকে। হঠাত্‌ কী কারণে এমন মুখে ফুটে উঠল তিক্ততা? মুম্বইতে বহু বছর তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে লিখলেন আভা গোস্বামী।আজ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। বলিউডের অনেক অভিনেত্রীর জীবনই সাফল্যের অভাবে একটা পর্যায়ের পর থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু প্রীতি জিন্টার তো আর সে সবের বালাই ছিল না! প্রীতির নিজের আইপিএল দল ছিল।

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

আজ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। বলিউডের অনেক অভিনেত্রীর জীবনই সাফল্যের অভাবে একটা পর্যায়ের পর থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু প্রীতি জিন্টার তো আর সে সবের বালাই ছিল না! প্রীতির নিজের আইপিএল দল ছিল। সেই দল ফাইনালেও পৌঁছেছিল। পুরোদস্তুর বিজনেসওম্যান হিসেবে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে ভালই উঠছিলেন এক সময়ের প্রতিভাবান এই অভিনেত্রী।

সেই প্রীতির হঠাত্‌ হলটা কী? সেটা জানতে হলে তো একটু ফিরে দেখতেই হবে। ‘ইশক্ ইন প্যারিস’ সিনেমাটার মুখ থুবড়ে পড়া ব্যর্থতা অভিনেত্রী প্রীতি জিন্টার ফিল্ম কেরিয়ারকেও জোর একটা ধাক্কা দিয়েছিল। প্যারিসে খুব কম পয়সার বাজেটে শু্যট করা এই সিনেমায় ফরাসী সুপারস্টার ইসাবেল আদজানি ছাড়াও এক বিশেষ উপস্থিতিতে দেখা গিয়েছিল সলমন খানকেও। যদিও ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচাতে সিনেমাটার রিলিজ বারদু’য়েক স্থগিত রাখা হয়েছিল।

প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ড নেস ওয়াদিয়ার সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে নতুন ছবিতে সই করার ব্যাপারটা প্রীতির পক্ষে এখন আরও ঝামেলার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বপ্নের শুরু স্বপ্নের শেষ

এক বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন করতে গিয়ে শেখর কপূরের নজরে পড়ে যান প্রীতি। তবে সত্যিকারের ব্রেকটা আসে পরিচালক মণিরত্নমের হাত ধরে। ‘দিল সে’ ছবিতে প্রীতি অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ-মনীষার সঙ্গে। স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয় করলেও প্রীতির শরীরী ভাষা, তাঁর ডিম্পলড হাসি মাতিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের। সিমলার প্রীতিকে এর পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

ইন্ডাস্ট্রিতে তখন রানি মুখোপাধ্যায়-ঐশ্বর্যা রাইয়ের সাঙ্ঘাতিক প্রতাপ। নামীদামি প্রযোজনা সংস্থার প্রায় ৭৫ শতাংশ ছবিই তখন এই দুই নায়িকার কব্জায়। তা সত্ত্বেও প্রীতি এলেন, অভিনয় করলেন এবং জয় করলেন। ‘সংঘর্ষ’ বা ‘কেয়া কহেনা’য় প্রীতির বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘কোই মিল গয়া’ বা ‘কল হো না হো’ প্রীতিকে এক নম্বর নায়িকার তকমার কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল। যশরাজ বা ধর্মা প্রোডাকশনের মতো বড় ব্যানারের কাছে প্রীতি তখন আদরের নায়িকা।

কর্ণ জোহরের ‘কভি অলবিদা না কহে না’ আর ‘জানেমন’-এর পর প্রীতির বড়সড় যে ক’টা ছবি মুক্তি পেয়েছিল, তা সে ‘ঝুম বরাবর ঝুম’ হোক বা ‘দ্য লাস্ট লিয়র’ কিংবা ‘হিরোজ’ বক্স অফিসে দারুণ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে।

‘দ্য লাস্ট লিয়র’ বা ‘জানেমন’ প্রীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস ছিল বলা যায়। যদিও বিশেষ লাভ হয়নি। রানি বা ঐশ্বর্যা কিন্তু ব্র্যান্ড এনডর্সমেন্ট করে ভালই রেস্ত কামাচ্ছিলেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে। প্রীতি, যিনি নাকি উঠেই এসেছিলেন বিজ্ঞাপনের হাত ধরে, তাঁর কাছে এ রকম বড়সড় এনডর্সমেন্টের অফারই ছিল না।

যদিও তাতে কিছু থেমে থাকেনি। আইপিএল টিম কিংস ইলেভন পঞ্জাবের একটা ছোট স্টেক প্রীতি কিনে নিয়েছিলেন। বিজনেসওম্যান হওয়ার লক্ষ্যেই মনসংযোগ করছিলেন প্রীতি। ছবি সই করলেও তা অ্যাক্টিং কেরিয়ার বাড়াতে নয়, মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জনের উদ্দেশেই করছিলেন তিনি।

বাকিটা ব্যক্তিগত...

‘বম্বে ডাইং’ সংস্থার কর্ণধার নেস ওয়াদিয়াকে ডেট করছিলেন প্রীতি জিন্টা। হাই সোসাইটির লোকজন অবাকই হয়েছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী চিন্তাধারার দুই মানুষকে একসঙ্গে দেখে। অল্পেতেই মেজাজ হারানোর জন্য এমনিতেই নেসের খ্যাতি আছে। এক বার তো প্রাক্তন বান্ধবী লারা দত্তকে মেরিন ড্রাইভের মাঝামাঝি জায়গায় গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলেই দিয়েছিলেন নেস। প্রীতির মতো একজন স্বাধীনচেতা মহিলা সেই নেসের প্রেমে পড়লেন কী ভাবে, সেটাই আশ্চর্যের! সন্দেহবাতিকরা অবশ্য বলতে ছাড়েননি যে ওঁদের জুটিটা না কি তৈরি হয়েছিল সুযোগসুবিধের কথা মাথায় রেখেই।

প্রীতির সঙ্গে আমির খানের অ্যাফেয়ারের গুজবও এতটাই ছড়িয়েছিল, যে প্রীতি বলতে বাধ্য হয়েছিলেন আমিরের সঙ্গে তাঁর সে রকম কোনও সম্পর্কই নেই। এতেই শেষ নয়। ২০০৭-এর মার্চে নায়িকা-অভিনেত্রী সুচিত্রা কৃষ্ণমূর্তি দাবি করেন প্রীতির সঙ্গে তাঁর স্বামী পরিচালক শেখর কপূরের অ্যাফেয়ার চলছে বলে।

প্রীতি এখন

ভরত শাহ্‌ কেসে ভারতীয় সেই জঙ্গীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে প্রীতি গোটা দেশের সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিলেন। ইন্ডাস্ট্রি তাঁর সেই কাজে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলতে বাধ্য হয়েছিল প্রীতিই না কি ‘দ্য ওনলি ম্যান ইন দ্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি’। ইন্ডাস্ট্রির একজন সিনিয়র বললেন, “প্রীতি জিন্টা অসাধারণ অভিনেত্রী। যদিও একটা সমস্যায় ও সব সময়ই ভুগেছে। এক এক সময় তুমুল উত্তেজিত হয়ে ওভাররিঅ্যাক্ট করে ফেলে ও। আবার নিজের ভুল বুঝতে পারলে ফিরে গিয়ে মাফ চেয়ে নিতেও দেরি হয় না ওর। এটাই আসলে প্রীতি।”

তিনি কথাপ্রসঙ্গে আরও জানালেন, “‘বীরজারা’, ‘কল হো না হো’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’ ছবিগুলোতে প্রীতি দুর্দান্ত অভিনয় করেছিল। কিন্তু যেই ও অন্য দিকে মন দিতে গেল, ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেত্রী হিসেবে ওর জায়াগাটাও নড়বড়ে হয়ে গেল। প্রীতি যদি অভিনয়টা মন দিয়ে করত, তা হলে এখনও টপ ফাইভ অভিনেত্রীর দলে খুঁজে পাওয়া যেত তাঁকে। বিদ্যা বালনকেই দেখুন না। বয়সের তোয়াক্কা না করেই বিদ্যা চরিত্রনির্ভর সব রোলে অভিনয় করে নিজের পাকাপোক্ত জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন। প্রীতির ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবশত তা ঘটতে পারেনি।”

অসমীয়া পরিচালক জহ্নু বড়ুয়ার সঙ্গে তৈরি ছবি এখনও ক্যানবন্দি হয়ে রয়েছে। সইফ আলি খানের ইল্যুমিনাটি প্রোডাকশন হাউসের ব্যানারে তৈরি ‘হ্যাপি এন্ডিং’ সিনেমায় একটা ছোট্ট ক্যামিও ছাড়া প্রীতির এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ কিছু নেই বললেই চলে। প্রীতির সমসাময়িক হিসেবে রানি বা ঐশ্বর্যা কিন্তু ব্র্যান্ড এনডর্সমেন্ট হোক বা বাছা সিনেমার পছন্দের ভিত্তিতেই হোক এখনও কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের ইনিংস খেলে যাচ্ছেন। আর এখন প্রীতির রোজগারের মূল ভিত্তিই বলা যায় তাঁর আইপিএল টিম। যদিও সেই দলের মাত্র ২০ শতাংশেরও কম স্টেক তাঁর হাতে।

অর্ম্যাক্স মিডিয়ার শৈলেশ কপূর বললেন, “প্রীতির মধ্যে বৈচিত্র্যের বড়ই অভাব। রোম্যান্টিক যে কোনও চরিত্র বা বাবলি টাইপের রোল প্রীতি ভাল করতেন। কিন্তু অন্য ধারার সিনেমা করতে হলেই ওঁর খামতিটা চোখে পড়ত। উদাহরণ হিসেবে ‘সংঘর্ষ’-এর কথাই বলা যায়। নায়িকাদের যত বয়স বাড়ে, ততই কিন্তু তাঁদের উচিত বেশি করে বাস্তববাদী, চরিত্রনির্ভর রোলে অভিনয় করা। এখানেই প্রীতি অন্যান্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

preity zinta ava goswami abha goswami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE