Advertisement
E-Paper

অনুপম স্যর

মুম্বইয়ে তাঁর স্কুল ‘অ্যাক্টর প্রিপেয়ার্স’ অনেক উঠতি অভিনেতার কাছেই পীঠস্থান। সেই অনুপম খের কলকাতায় এসে ১০ টিপস দিলেন টালিগঞ্জের শিক্ষানবিশ অভিনেতাদের। শুনলেন ইন্দ্রনীল রায়সবাই জানে আমার জীবনের ফিলোজফি হল, ‘কুছ ভি হো সকতা হ্যয়’। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি কথাটা। না হলে সিমলার এক ওঁচাটে, ফেল করা ছেলে কী করে ৪৯১টা হিন্দি ছবিতে কাজ করতে পারে আমাকে একটু বলবেন?

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪২
Share
Save

সবাই জানে আমার জীবনের ফিলোজফি হল, ‘কুছ ভি হো সকতা হ্যয়’। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি কথাটা।

না হলে সিমলার এক ওঁচাটে, ফেল করা ছেলে কী করে ৪৯১টা হিন্দি ছবিতে কাজ করতে পারে আমাকে একটু বলবেন?

শুধু তা-ই নয়, যে ছেলেটা কেরিয়ার শুরুই করেছিল ‘সারাংশ’‌য়ে ৬৫ বছরের এক চরিত্র করে, সে কী ভাবে ৩১ বছর কাটিয়ে দিতে পারে বলিউডের মতো জায়গায়— তা আজও আমার কাছে ক্লিয়ার নয়!

ক্লিয়ার শুধু একটাই কথা— ‘কুছ ভি হো সকতা হ্যয়’। আমার টিভি শো, যা দ্বিতীয় সিজনে পড়তে চলেছে, তার নামও তাই: ‘দ্য অনুপম খের শো-কুছ ভি হো সকতা হ্যয়’।

কলকাতায় তাবড় তাবড় অভিনেতা রয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই আমি গুণমুগ্ধ ফ্যান। সেই কলকাতায় এসে অভিনয়ের টিপস দেওয়াটা এক রকম ধৃষ্টতা বলেই আমি মনে করি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আনন্দplus-এর সেই সব পাঠক যাঁরা ভবিষ্যতে অভিনেতা হতে চান, তাঁদের উদ্দেশে দশটা টিপস দিচ্ছি।

যদি কোনও দিন আমার টিপস কাজে লাগিয়ে আপনাদের মধ্যে কেউ বিরাট অভিনেতা হয়ে ওঠেন, তা হলে ওই কথাটাই মনে রাখবেন— ইয়ে জিন্দেগি মে কুছ ভি হো সকতা হ্যয়।

১) পরিশ্রমটা হাসতে হাসতে করতে হবে

বছর তিনেক আগে আমার কাছে একজন ছাত্র এসেছিল। নিজের জগতে সে সুপারস্টার, কিন্তু আমার কাছে এসেছিল অভিনয় শিখতে।

তাকে শেখাতে গিয়ে বুঝেছিলাম, কেন ৪২ বছর বয়সেও সে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতে। তার নাম লিয়েন্ডার পেজ।

শুধু অভিনয় শিখতে ওর যা একাগ্রতা দেখেছিলাম সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। ওর ছবিটা হয়তো সে রকম চলেনি কিন্তু আমি বিশ্বাস করি কোনও পরিশ্রমই ফেলে দেওয়ার নয়।

আমার কাছেও লিয়েন্ডার বিরাট ইন্সপিরেশন। যারা আমার কাছে অভিনয় শিখতে আসে তাদের প্রথমেই ওর কথা বলি। অভিনেতা হতে গেলে এটাই প্রথম টিপস— পরিশ্রম।

আজকে যে সব অভিনেতাকে আপনারা দূর থেকে দেখেন স্টুডিয়োতে কি শ্যুটিং ফ্লোরে ঢুকতে, তাদের দেখে ঈর্ষা করাটাই স্বাভাবিক প্রবণতা। আমি নিজেও একসময় তাই করেছি। মনে মনে বলেছি, ধুর এ আবার অভিনেতা নাকি! কিন্তু পরে বুঝেছি এই মানুষগুলোর বড় গাড়ি, ভাল লাইফস্টাইল মেনটেন করা— সবটার পিছনেই রয়েছে অবিশ্বাস্য পরিশ্রম।

২) নিজের অনুভূতির প্রতি সৎ থাকতে হবে

আমাদের, অভিনেতাদের, অনেকেই বলে ‘ফেক’। কেউ কেউ এটাও বলে, আমরা টাকা ছাড়া কিছু বুঝি না। খারাপ লোক। এগুলোর কোনওটাই আমি অগ্রাহ্য করছি না।

কিন্তু যেটা কেউ বলেন না, তা হল অভিনেতারা একটা জায়গায় সবাই এক। তা হল জীবনের নানা অনুভূতির প্রতি তারা অসম্ভব সৎ। আমি বড় বড় অভিনেতাকে দেখেছি রাগতে, কাঁদতে। সেই রাগ, সেই কান্নাটা কিন্তু অসৎ নয়। সেটা আসে একদম ভিতর থেকে। আমার নিজের মনে হয় নিজের অনুভূতির প্রতি এই সততা না থাকলে সফল অভিনেতা বোধহয় হওয়া যায় না।

৩) ভাঁড় সাজতে হবেই, ভয় পেলে চলবে না

একজন অভিনেতাকে ক্যামেরার সামনে নাচতে হতে পারে, বিচ্ছিরি কস্টিউমে গাইতে হতে পারে, কখনও খারাপ ডায়ালগও বলতে হতে পারে।

এগুলোর সব কিছুই সম্ভব, যখন সেই অভিনেতা নিজের লজ্জা-শরম সব ছুড়ে ফেলে দিতে পারে। ভাঁড় যদি সাজতেই হয়, তা হলে ভাঁড় সাজতে যেন লজ্জা না লাগে।

৪) ইংরেজি বলতেই হবে

আজও মনে আছে এই গল্পটা প্রথম বলেছিলাম অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়কে। যখন ও মুম্বইতে কাজ করত। আপনারা জানেন চূর্ণী দারুণ ইংরেজি বলে। একদিন ওকে আমি আমার ইংলিশ শেখার গল্পটা বলেছিলাম। মুম্বইতে এসেই বুঝে যাই এখানে ইংরেজি বলতে পারলে কদর বেশি। কিন্তু আমি তো কিছুই বলতে পারতাম না। তখন একটা উপায় বার করি। ঠিক করি রোজ দুপুর দু’টো থেকে চারটে আমি ইংরেজি বলবই। পারি কি পারি না, ভুল বলি কি ঠিক বলি— ইংলিশ আমি বলবই।

সেই মতো ঠিক দুপুর দু’টোর সময় বাড়ি থেকে বেরোতাম। রাস্তায় মুচি, লোকাল ট্রেনের সহযাত্রী— সবার সঙ্গে ওই দু’ঘণ্টা ইংরেজিতে কথা বলতাম। মাঝখানে এমন হল আমার বন্ধুরা ওই দু’ঘণ্টা আমাকে দেখলেই পালিয়ে যেত। কিন্তু আমি দমিনি। প্রায় দু’বছর এ রকম করতে করতে দেখলাম, আরে আমি তো ভাল ইংরেজি বলছি। তাই আজকে অনেকেই যারা ইংরেজি না বলতে পারার জন্য হীনমন্যতায় ভোগেন, তাঁদের এই ফর্মুলাটা ব্যবহার করতে বলছি। দেখবেন ঠকবেন না। প্রযোজক কি পরিচালকও সমীহ করে চলবে।

৫) তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা চাই

ফিল্ম কি থিয়েটার জগতের মানুষেরা এমনিতে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকেন। কিন্তু ওই মানুষগুলোর ড্রয়িং রুমে যদি কোনও দিন ঢুকতে পারেন বা গ্রিনরুমে যদি তাদের দেখেন, দেখবেন তারা কী অসম্ভব ভাল মানুষকে নকল করতে পারে। কী ব্রিলিয়ান্ট মিমিক তারা।

শুধু কথা বলাই নয়, তাদের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ হুবহু তুলে ধরতে তারা সক্ষম। এটা তখনই হয় যখন আপনার অবজারভেশন ক্ষমতা সাঙ্ঘাতিক তীক্ষ্ণ হয়। এই তীক্ষ্ণতা আপনাকে ভাল অভিনেতা হতে সাহায্য করে।

তাই বাসে উঠুন কি ট্রেনে, পাশের মানুষকে মন দিয়ে দেখুন। দেখবেন কোনও দিন দারুণ একটা শটে সেই মানুষটার এমন একটা মুদ্রাদোষ আপনি অভিনয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, যা দেখে মানুষ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে।

৬) সেন্স অব হিউমার হারালে চলবে না

আমাদের অভিনেতাদের জীবনটা অদ্ভুত। একদিন আপনার ইন্টারভিউ নিতে সবাই ছুটছে, পরের দিনই আপনাকে পাশ কাটিয়ে মিডিয়া অন্য দিকে। এই বৈপরীত্য আমাদের জীবনের সর্বক্ষণের সঙ্গী।

এটা থেকে বাঁচতে একটাই উপায়। তা হল পুরো ব্যাপারটা নিয়ে হাসি-মশকরা করা। যখন সবাই ছুটছে আপনার পিছনে, তখন ব্যাপারটা নিয়ে মজা করুন। যখন পাশে কেউ নেই, তখনও হাসুন। এই জীবনদর্শন না থাকলে কষ্ট পাবেন। তাই ‘সেন্স অব হিউমার’টা কোনও মতেই হারাবেন না প্লিজ।

৭) বই পড়ুন নিয়মিত

বহু অভিনেতাকে দেখেছি, যারা একটু নাম করলেই এমন কিছু অভ্যেস ছেড়ে দেয়, যেটা তাদের এই জায়গায় আসতে সাহায্য করেছে। তার অন্যতম হল বই পড়া। তাই বই পড়া ছাড়বেন না। এতে কনসেনট্রেশনও বাড়ে।

৮) পারলে থিয়েটার করুন

আমি আজও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, অভিনেতার জন্ম হয় থিয়েটারে। তাই ছোট হোক কি বড় — একটা থিয়েটারের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলুন। ওর থেকে ভাল শিক্ষা হতে পারে না। অনেক অভিনেতা দেখেছি, যারা জানে না অভিনয়ের সময় তাদের হাত দু’টো নিয়ে কী করবে। তাদের দেখলেই বুঝি, তাদের এই অসুবিধা হচ্ছে কারণ তারা থিয়েটার করেনি। থিয়েটার এই সূক্ষ্ম জিনিসগুলো শিখিয়ে দেয়। তাই থিয়েটারের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখুন। এতে পয়সা খুব একটা পাবেন না, কিন্তু অভিনয়ে ঢুকে পড়ার বদ অভ্যেস এবং ফাঁকিবাজিগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে।

৯) কোনও কাজ ছোট নয়

নতুন অভিনেতাদের কাছ থেকে দেখে জেনেছি তারা প্রথম দিন থেকেই সবচেয়ে বড় প্রোডিউসর বা সবচেয়ে নাম করা পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতেই আগ্রহী থাকে।

এই চিন্তাধারা যে কত উঠতি অভিনেতার সর্বনাশ করেছে তার ইয়ত্তা নেই। যখন শুরু করছেন তখন যা কাজ পাবেন সেটাই করুন। হাজার নেট প্র্যাকটিস করলেও ম্যাচ খেলা যেমন অন্য জিনিস, তেমনই আয়নার সামনে অভিনয় আর ক্যামেরার সামনে অভিনয় দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা।

তাই কোনও কাজকে ছোট ভাববেন না। কোনও পরিচালককে হ্যাটা করবেন না। যে যা কাজ দিচ্ছে সেটা দিয়ে নিজের অভিনয়ের ধারটা বাড়িয়ে তুলুন। ব্যস।

১০) ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখুন

সুভাষ ঘাই একটা গল্প বলেছিল, আমার মনে হয় এটা সবার জানা উচিত। শুক্রবার ওর ছবি ‘কর্মা’ রিলিজের পর সোমবার সকালে সুভাষজি ফোন করেন দিলীপ কুমারকে। ফোনে বলেন, ‘‘স্যর, মুবারক হো। ছবি লেগে গিয়েছে। আজকে রাতে পার্টি করছি আমরা।’’

পুরো কথা শুনে দিলীপ সাব একটা কথা বলেছিলেন যা শো-বিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইন। উনি বলেছিলেন, ‘‘সুভাষ, ফোনটা রেখে ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে পুজো দাও। বলো, ধন্যবাদ, এ বারটা উতরে দেওয়ার জন্য।’’ আমার কাছে এই লাইনটা ফ্যাসিনেটিং।

যদি ছবি বা অভিনয়ের প্রশংসা হয়, তা হলে ওই কথাটাই বলুন— ঠাকুর, ধন্যবাদ এ বারটা উতরে দেওয়ার জন্য। যদি ছবি না চলে বা লোকে গালাগালি করে, তা হলেও ঠাকুরকে বলুন— ঠাকুর, পরের বারটা উতরে দিও।

আর তার পর? তার পর তো সেই একই কথা- ‘কুছ ভি হো সকতা হ্যয়’।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

anupam kher anupam kher interview ananda plus latest news ananda plus latest interview ananda plus cover story indranil roy Tollywood tollywood actors budding actors tips anupam kher tips abpnewsletters

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}