Advertisement
E-Paper

কোলেস্টেরল শুধু নয়, হার্ট অ্যাটাকের কারণ এক বিশেষ প্রোটিন, খলনায়ককে চিহ্নিত করলেন গবেষকেরা

হার্ট অ্যাটাকের আসল কারণ কি শুধু কোলেস্টেরল? গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রক্তে কোলেস্টেরল স্বাভাবিক, অথচ হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে বিশেষ এক প্রোটিনের কারণে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:১৯
কোলেস্টেরল কম অথচ এই প্রোটিন বেশি হলেই বিপদ।

কোলেস্টেরল কম অথচ এই প্রোটিন বেশি হলেই বিপদ। ছবি: ফ্রিপিক।

কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া মানেই ধরে নেওয়া হয়, হার্টের অবস্থা ভাল নেই। হৃদ্‌রোগ হানা দিতে পারে যখন তখন। প্রত্যেকের শরীরে রয়েছে অজস্র ধমনী। শরীরে যেমন মেদ জমছে, তেমনই এই ধমনীগুলিতেও মেদ জমে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে বলা হয় অ্যাথেরোসক্লেরোসিস। এর জন্য কোলেস্টেরলকেই দায়ী করা হয়। তবে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কোলেস্টেরল একা দোষী নয়, আসল খলনায়ক এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন। এটির মাত্রা কমবেশি হওয়া মানেই হার্ট বেহাল হয়ে পড়া।

প্রোটিনের নাম সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন। সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিনের টেস্ট করলে হার্টের রোগ আগাম সঙ্কেত পাওয়া যায়। সাধারণত হার্টের রোগের যে কোনও টেস্টে এই টেস্টটিও করাতে বলেন চিকিৎসকেরা। তবে এত দিন এই প্রোটিনটিকে নিছক প্রদাহের কারণ হিসেবেই দেখা হত। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এবং আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিয়োলজির গবেষকেরা জানিয়েছেন, হার্টের রোগ কেবল নয়, ব্রেন স্ট্রোকের কারণও হতে পারে এই প্রোটিনই। কোলেস্টেরল নয়, বরং হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোক চিহ্নিত করার প্রধান ‘মার্কার’ হতে পারে এই সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন।

সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন কী?

লিভার থেকে তৈরি হয়। এর কাজ হল শরীরের যে কোনও রকম প্রদাহ, সংক্রমণ বা কোষের ক্ষয় মেরামত করা। যখনই কোনও সংক্রমণ ঘটে শরীরে, এই প্রোটিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। গবেষকেরা জানিয়েছেন, অ্যাথেরোসক্লেরোসিস হওয়ার জন্য এই প্রোটিনই দায়ী। এ ক্ষেত্রে ধমনীর দেওয়ালের মধ্যে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমতে থাকে। একে বলা হয় ‘প্লাক’। এর ফলে ধমনী সঙ্কীর্ণ হয়ে রক্তপ্রবাহকে বাধা দিতে পারে। এই ব্লকেজ থেকেই হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এই ‘প্লাক’ হঠাৎই ফেটে গিয়ে রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে রক্তের গতি শ্লথ হয়ে আসে বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, আগে মনে করা হত কেবল ‘প্লাক’ ফেটে যাওয়ার কারণেই হৃদ্‌রোগ হয়। আসলে তা নয়। ‘প্লাক’ যেখানে জমা হয়, সেখানে সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিনের মাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ফলে প্রদাহ তৈরি হয়। এই প্রদাহের কারণেই ‘প্লাক’ ফাটে ও হার্ট অ্যাটাক হয়।

অনেক সময়েই দেখা যায়, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক। অথচ হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোক ঘটল। এর কারণই হল ওই প্রোটিন। কারণ রক্তে প্রোটিনটির পরিমাণ বেড়ে গেলে, প্রদাহ এতটাই বাড়বে যা রক্তচলাচলে ক্রমাগত বাধা দিতে থাকবে। রক্তে সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১ মিলিগ্রাম বা তার কম হলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কম। তবে যদি তা প্রতি ডেসিলিটারে ৩ মিলিগ্রাম বা তার বেশি হয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে, প্রদাহ অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। ফলে সাবধান না হলে হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়বে।

কেন বাড়ে সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন?

এখন মনে হতেই পারে, কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রয়েছে, অথচ প্রোটিনটির পরিমাণ বাড়ছে কী ভাবে। তার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের ঘন ঘন সংক্রমণ, দ্বিতীয়ত, ডায়াবিটিস, আর্থ্রাইটিস থাকলে প্রোটিনের মাত্রা বাড়ে, তৃতীয়ত, অস্বাভাবিক ধূমপান, অ্যালকোহলের নেশা ও প্রচণ্ড মানসিক চাপের কারণেও প্রোটিনটির মাত্রা বিপদসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। স্থূলত্বও এর জন্য দায়ী। সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন বেড়ে যাওয়া আরও কিছু রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন লুপাস ও ক্যানসার। কাজেই রক্তে এই প্রোটিনটির পরিমাণ স্বাভাবিক আছে কি না, তা সময়ান্তরে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই উচিত।

heart disease Heart Attack Brain Stroke
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy