বসু পরিবার
টলিউডে পেমেন্টের সমস্যা নতুন কিছু নয়। কলাকুশলী টাকা পাননি, এমন আকছার শোনা যায়। কিন্তু ছবির মান নিয়েও তো প্রশ্ন ওঠে। সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে এক জন শিল্পী কী করে নিজেকে উজাড় করে দেবেন? তার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিতে আসা নতুন প্রযোজকরা কতটা ভরসাযোগ্য, সেই প্রশ্নও উঠে আসে বইকি।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘বসু পরিবার’ বক্স অফিসে ভালই ব্যবসা করছে। কিন্তু ছবি তৈরির নেপথ্যে অনেক কাহিনি রয়েছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেনের মতো অভিনেতাদের চেক বাউন্স করেছে। দীর্ঘ দিন শুটিং বন্ধও ছিল। পরিচালক সুমন ঘোষের অভিযোগের তির প্রযোজক রাকেশ সিংহের দিকে। ‘‘একের পর এক শিল্পীর চেক বাউন্স হচ্ছে। পাওনা মেটানো হয়নি বলে শুটিংয়ের সময়ে জেনারেটর বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। রিলিজ়ের আগের দিন আইনক্স থেকে জানাচ্ছে, আপলোডিংয়ের টাকা দেওয়া হয়নি, তাই তারা ছবি চালাতে পারবে না। এমন সব ঘটনার মধ্যে আমরা কাজ করি,’’ এক গুচ্ছ অভিযোগ তুলে ধরলেন পরিচালক।
সুমনের মন্তব্য, ‘‘এই পরিস্থিতিতে কাজ করে মান বজায় রাখা কঠিন। আমি শিল্পীদের কাছে কৃতজ্ঞ যে, তাঁরা কাজ করেছেন।’’
‘বসু পরিবার’-এ অভিনয় করেছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। বিষয়টি তুলে ধরতে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তিনি, ‘‘টলিউডের প্রতিটি শিল্পীই পাওনাগত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। প্রথমেই তো এত কম টাকা অফার করা হয় যে, বলার নয়। তার পরে সেই টাকা পেতে কালঘাম ছুটে যায়। খুব কম প্রযোজক ঠিক সময়ে পাওনা মেটান। কিন্তু কিছু বললে বলা হবে, খালি টাকা-টাকা করছে!’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ছোট-বড় দুই পর্দাতেই পারিশ্রমিক বাকি রাখার উদাহরণ রয়েছে। পাওনা আদায়ের জন্য ধারাবাহিকের শুটিংও বন্ধ হয়েছে। ছোট পর্দায় একাধিক ধারাবাহিক নামিয়েছিলেন প্রযোজক রানা সরকার। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি সব সিরিয়াল অন্য প্রযোজনা সংস্থার হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
সুদীপ্তা ‘ভূমিকন্যা’তেও ছিলেন। এই টিভি সিরিজ়ের অনেক শিল্পী এখনও পারিশ্রমিক পাননি। আর্টিস্ট ফোরামে এই নিয়ে বিস্তর কাজিয়া চলছে। সোহিনী সরকার, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের অনেক টাকা বাকি। সোহিনীই প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা পান। ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কথাও ঘুরছে যে, অরিন্দম শীল ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’। এ নিয়ে প্রশ্ন করতে অরিন্দম বললেন, ‘‘জানি না এগুলো কারা বলছে। আমার সঙ্গে ফেডারেশনের কথা হয়েছে। সকলের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’’ তিনি কি চ্যানেল থেকে টাকা পেয়েছেন? ‘‘না, নিজেই জোগাড় করে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস ‘ভূমিকন্যা’ নিয়ে মুখ খুলতে চাইলেন না। শুধু জানালেন, আলোচনা চলছে।
শিল্পীরা টাকা পাচ্ছেন না। ছবি মাঝপথে বন্ধ। ছবি তৈরি হলেও রিলিজ় হচ্ছে না... ভিগনেশ ফিল্মসেরই ‘বীরপুরুষ’ ছবিটি মাঝপথে আটকে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মৈনাক ভৌমিকের ‘গল্প ওদের’ মাঝপথে বন্ধ হয়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন। আর্থিক সমস্যার কারণেই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ধূমকেতু’ রিলিজ় করছে না। যেখানে দেব-শুভশ্রীর মতো অভিনেতারা রয়েছেন। প্রথম সারির অভিনেতা-পরিচালকদের যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে বাকিদের পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়।
তবে অভিযোগের উল্টো দিকও বিবেচনা করা উচিত। ‘বসু পরিবার’-এর প্রযোজক রাকেশ সিংহকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার ব্যবসাগত কিছু সমস্যার জন্য টাকা দিতে দেরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু টাকা না দিলে ছবি শেষ হলই বা কী করে? রিলিজ়ই বা করল কী করে? আসলে প্রথমেই ধরে নেওয়া হয়, প্রযোজক মানেই গণ্ডগোলের মূল।’’
শিল্পীদের পেশাদারিত্বের দিকেও আঙুল তোলেন ছোট পর্দার অনেক প্রযোজক। কিন্তু প্রযোজকরা যতই তাঁদের যুক্তি পেশ করুন, ঘটনা পরম্পরা বলে দিচ্ছে টলিউডে পারিশ্রমিক পেতে কালঘাম ছুটে যায়! বড় প্রযোজনা সংস্থা যেখানে পাওনা বাকি রাখে, সেখানে নতুনদের উপরে কতটা ভরসা রাখা সম্ভব? কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় যেমন বলছেন, ‘‘আমি নতুনদের সঙ্গেও কাজ করেছি। সুপর্ণকান্তি করাতিও নতুন। কিন্তু কোনও সমস্যা হয়নি। ‘ধূমকেতু’ একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কাউকে অমর্যাদা না করে বলছি, মাঝে মধ্যে কাজ করতে আসা লোকেদের নিয়েই সমস্যা হয়।’’
অরিন্দমকে সকলে কাঠগড়ায় তুললেও সোহিনীরও কিছু দায় থেকে যায় বলে মনে করছেন অনেকে। তিনি বকেয়া প্রসঙ্গে গোড়াতেই অভিযোগ জানালে হয়তো সুরাহা হতো। এখন একসঙ্গে এতটা টাকা আদৌ কি তিনি পাবেন? প্রশ্ন ঘুরছে আর্টিস্ট ফোরামের অন্দরেই। সুদীপ্তা যেমন বলছিলেন, ‘‘আমরা এখানে লোকের মুখ চেয়েই কাজ করে দিই। অরিন্দম শীল কারও পাওনা বাকি রেখেছেন এমনটা আগে শুনিনি। এখন একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে...’’
তবে সুমন, সুদীপ্তা, কৌশিক কিংবা মৈনাক ভৌমিক সকলেরই বক্তব্য, এত সমস্যা সত্ত্বেও টলিউডের শিল্পীরা মানের সঙ্গে আপস না করে পেশাদারিত্ব দেখিয়ে কাজ করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy