Advertisement
E-Paper

উপলক্ষ ‘ধূমকেতু’, আগামী ১৫ বছরে বাংলা ছবিকে এগিয়ে দিতেই নাকি এককাট্টা সৃজিত-কৌশিক-দেব?

‘ধূমকেতু’কে সামনে রেখে বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা? কতটা ইতিবাচক হবে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ডাকা আগামী কালের বৈঠক?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৫ ১৫:১৬
বাংলা ছবির হয়ে সরব দেব, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-সহ গোটা টলিউড।

বাংলা ছবির হয়ে সরব দেব, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-সহ গোটা টলিউড। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বলিউডে বড় বাজেটের ছবিমুক্তি মানেই যেন বাংলা ছবির কাছে একটা আতঙ্ক! বেশ কয়েক বছর ধরেই তারকাখচিত হিন্দি ছবির মুক্তির আগে পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশকদের কাছে শর্ত রাখা হয়, বাংলা ছবির সঙ্গে শো ভাগ করা যাবে না। সিঙ্গল স্ক্রিনের চারটি শো-ই হিন্দি ছবিকে দিতে হবে। যেমন, ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘লক্ষ্মী ছেলে’-কে সরিয়ে হিন্দি ছবির নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল হলমালিকদের। কিংবা ২০১৯-এর কথাই ধরা যাক। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে, দুর্গাপুজোর সময় মুক্তি পেয়েছিল দেবের ‘পাসওয়ার্ড’। একই সঙ্গে মুক্তি পেয়েছিল হৃতিক রোশন-টাইগার শ্রফ অভিনীত ‘ওয়ার’, যার চাপে কোণঠাসা দশা হয়েছিল বাংলা ছবিটির।

২০২৫-এ ২০১৯-এরই যেন পুনরাবৃত্তি। ফের দেব এবং হৃতিক রোশনের ছবি সম্মুখসমরে। ১৪ অগস্ট মুক্তি পাচ্ছে দেব-শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় অভিনীত ‘ধূমকেতু’। ১৫ অগস্ট মুক্তি পাবে হৃতিক রোশনের ‘ওয়ার ২’। খবর, মুক্তি পাওয়ার আগে এই ছবির পরিবেশকদের তরফ থেকে রাজ্যের পরিবেশকদের কাছে শর্ত রাখা হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ‘ওয়ার ২’ কোনও বাংলা ছবির সঙ্গে শো ভাগ করে নেবে না। সিঙ্গল স্ক্রিনের চারটি শো-ই হিন্দি ছবিকে দিতে হবে। নিঃসন্দেহে এতে কোপ পড়তে চলেছে প্রযোজক রানা সরকারের ছবির উপরে। ‘ধূমকেতু’ প্রাইম টাইম পাবে না, তৈরি হয়েছে এমন সম্ভাবনাও।

বিষয়টি জানিয়ে ইতিমধ্যেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, প্রযোজক নিসপাল সিংহ রানে, প্রযোজক-অভিনেতা সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরিচালক-অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-সহ টলিউডের প্রথম সারির প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা একসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি চিঠি লিখেছেন। এর জেরে ৭ অগস্ট নন্দনে বৈঠক ডেকেছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

খবর জানাজানি হতেই প্রশ্ন উঠেছে টলিউডের অন্দরে, দেব-শুভশ্রীর বহু প্রতীক্ষিত ছবির আবেগকে অটুট রাখতেই কি একজোট টলিপাড়া?

আনন্দবাজার ডট কম যোগযোগ করেছিল, ‘ধূমকেতু’র পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, প্রযোজক রানা সরকার, ইমপা-র সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত, পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্যের সঙ্গে। কৌশিক কিন্তু এই ধরনের ভাবনার কথা শুরুতেই নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁর সাফ দাবি, “‘ধূমকেতু’কে উপলক্ষ করে নয়, সমস্ত বাংলা ছবির আগামী ১৫ বছরের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতেই এই প্রচেষ্টা। এর আগেও বহু বার আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি।” বৃহস্পতিবার মন্ত্রী অরূপের ডাকা বৈঠক নিয়ে কৌশিক আশাবাদী। তাঁর মতে, “কেন জানি না মনে হচ্ছে, এ বার কিছু ইতিবাচক ঘটনা ঘটতে চলেছে।”

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন ইমপা-র সভাপতি পিয়া। তিনি এর আগে বহু বার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিতে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১৯-এ যখন দেবের ছবির সঙ্গে হৃতিকের ছবির প্রথম দ্বন্দ্ব শুরু, তখনও বিষয়টি নজরে আনা হয়েছিল রাজ্য সরকারের। ‘পাসওয়ার্ড’ ছবির প্রযোজক ও অভিনেতা দেব সে সময়ে সমান ভাবে বাংলা ও হিন্দি ছবির প্রেক্ষাগৃহ ভাগাভাগির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছিলেন। সে সময়েও বিষয়টি জানার পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, বাংলা এবং হিন্দি ছবিকে সমান সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ এবং শো দিতে হবে। যদিও তা কার্যকর হয়নি!

এ প্রসঙ্গে পিয়া বলেন, “আমরা তাই বার বার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠির আকারে বিষয়টি পৌঁছে দিয়েছি। কিছু দিন আগেও ইমপা-র পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তখন সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, ২১ এবং ২৪ জুলাইয়ের পর বৈঠক হবে। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের এই পদক্ষেপ বলে দিচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি ভোলেননি।” ফলে, বৈঠক ইতিবাচক দাঁড়াবে, এমন আশা পিয়ারও।

টলিউডের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। ‘ডিয়ার মা’ ছবি দিয়ে ১০ বছর পরে তিনি আবার বাংলা ছবির দুনিয়ায়। পরিচালকের দাবি, “অনেক দিন ধরেই বাংলা ছবির সময় কেড়ে নিয়েছে বলিউড। মহারাষ্ট্রে কিন্তু এ রকমটা কখনও হয় না। আমি কাজ করে দেখেছি।” ‘সইয়ারা’ সুনামি নাকি কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছিল ‘ডিয়ার মা’-এর বাণিজ্যে? পরিচালকের মতে, শুধু তাঁর ছবি নয়, অন্যান্য বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও এই ঘটনা ঘটতে দেখেছেন। এ প্রসঙ্গে অনিরুদ্ধের উপলব্ধি, “বাংলা ছবিকে প্রেক্ষাগৃহে সময় দিতে হবে। বাংলা ছবির বাজেট হিন্দি ছবির মতো ২০০ কোটি টাকা নয়।”

‘ধূমকেতু’র প্রযোজক রানাও কি একই মতে বিশ্বাসী? না কি, তাঁর ছবিতে দেব আছেন বলেই ছবিমুক্তির আগে আবার একজোট টলিউড?

“এর আগে যত বার দেবের ছবি মুক্তি পেয়েছে তত বার উল্টো দিকে বড় বাজেটের হিন্দি ছবি ছিল। কখনও তা ‘টনিক’, কখনও ‘প্রজাপতি’, কখনও ‘প্রধান’। দেব একমাত্র কারণ হলে তখনও টলিউড এককাট্টা হত। সেটা কিন্তু হয়নি।” তাঁর আরও দাবি, সংঘাতের ভয়ে সে সময়ে অনেক বড় বাজেটের বাংলা ছবি সরে দাঁড়িয়েছে। একা দেব তাঁর ছবির মুক্তি ঘটিয়েছেন। ফলে, দেবের আলাদা করে সমর্থনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না তিনিও।

কিছু দিন আগে মুক্তি পেয়েছে ইন্দ্রাশিস আচার্যের নতুন ছবি ‘গুডবাই মাউন্টেন’। সেই সময় পরিচালক আফসোস করে জানিয়েছিলেন, ভাল ফল করা সত্ত্বেও মাত্র এক সপ্তাহ পরে তাঁর ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক প্রেক্ষাগৃহ থেকে। হিন্দি বনাম বাংলা ছবির অবস্থান সম্পর্কিত এই প্রতিবাদ তিনি কী চোখে দেখছেন? পরিচালকের কণ্ঠে স্বাভাবিক ভাবেই অনুযোগের সুর। তিনি বলেছেন, “এই প্রতিবাদ কিছু ছবির মুক্তির আগে না হয়ে সব ছবির ক্ষেত্রে হলেই ভাল হয়। তা হলে ‘গুডবাই মাউন্টেন’-এর মতো ছবিকে হল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় না।”

Dev Kaushik Ganguly Rana Sarkar dhumketu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy