এক পত্রিকার ফোটোশ্যুটে এই পোশাকের জন্যই ট্রোল হয়েছিলেন দীপিকা
খেলার দলে সেই সদস্যকে মনে পড়ে? বন্ধুদের সঙ্গে মিলে যাকে আপনি গাঁট্টা মারতেন, যার টি-শার্টটা ধরে টেনে দিতেন শুধু রংটা আপনার পছন্দ নয় বলে? অথবা ক্লাসের সেই সহপাঠী, যে সকলের সঙ্গে মিশতে পারত না বলে আপনি নানা প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতেন? ইন্টারনেটে ট্রোলিংটাও সে রকমই। যদিও বদলে গিয়েছে স্থান-কাল-পাত্র। আর এখানে পাত্রটি অবশ্যই তারকা।
তাতে অসুবিধে ছিল না, যদি না নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার ফলিয়ে কারও কোনও বক্তব্য বা অবস্থানকে নিরন্তর ক্ষত-বিক্ষত করতাম আমরা। ধরুন, কোনও সেলেব্রিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি, লেখা বা কোনও বিষয় সম্পর্কে নিজের মতামত দিয়ে পোস্ট করলেন। তাতে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে পান থেকে চুন খসল কি না-খসল, আপনি তেড়ে উঠলেন রে রে করে। সঙ্গে জুটে গেল আপনারই কয়েক জন পিঠ চাপড়ানো বন্ধু। আর সেই বেচারী, যিনি আদতে পোস্ট করেছিলেন, হতে থাকলেন ট্রোল্ড! আসলে ব্যাপারটা অন্য কাউকে ব্যঙ্গ-মশকরা, অপমান করে নিজের মহত্ত্ব ও জ্ঞান শো-অফ করার মতোই। আরবান ডিকশনারি বলছে, শুধু মাত্র করতে পারা যায় বলেই, ইন্টারনেটে একজন ‘ইনোসেন্ট’ মানুষের স্ট্যান্ড পয়েন্টে সিনিক্যাল বা সারক্যাস্টিক্যাল মন্তব্য করাই হল ট্রোল! সেই তালিকায় শাবানা আজমি থেকে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, আলিয়া ভট্ট— বাদ নেই কেউই।
কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের র্যাম্পে ঐশ্বর্যা ফ্লোরাল ড্রেসের সঙ্গে পরেছিলেন পার্পলরঙা লিপস্টিক। সকলে মিলে বলতে শুরু করল, ঐশ্বর্যা হয় ব্ল্যাক কারেন্ট আইসক্রিম নয়তো কালা খট্টা খেয়ে কার্পেটে নেমেছেন!
বার্লিনে নরেন্দ্র মোদীর সামনে হাঁটুসমান পোশাক পরে ট্রোলড হন প্রিয়ঙ্কা। (বাঁ দিকে) কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ঐশ্বর্যার বেগুনী ঠোঁট নিয়ে বিতর্ক
আবার প্রিয়ঙ্কা চোপড়া বার্লিনে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন নি-লেংথ ড্রেস পরে। নিন্দুকেরা বলে উঠল, মোদীর পাশে সোফায় হাঁটু মুড়ে বসে নাকি তিনি আদতে প্রধানমন্ত্রীকেই অপমান করেছিলেন! প্রিয়ঙ্কার শিক্ষা, দেশের প্রতি ভালবাসা, সংস্কার... প্রশ্নের বন্যা বয়ে গিয়েছিল সব নিয়ে। ট্রোলের পাল্টা জবাবে প্রিয়ঙ্কা মায়ের সঙ্গে হাঁটুসমান পোশাক পরে ছবি দিয়ে পোস্ট করেছিলেন, ‘লেগ্স ফর দ্য ডে!’ এক বার একটি বিদেশি ম্যাগাজিনের কভারে প্রিয়ঙ্কা ছবি তুলেছিলেন হাত তুলে। সেখানে তাঁর আর্মপিট কি আদৌ অত মখমলি, না কি সবই ফোটোশপের কামাল, প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়েও!
অনুষ্কা শর্মা প্লাস্টিক সার্জারি করে বদলেছিলেন নিজের ঠোঁটের রূপরেখা। তার পর তো অনুষ্কার নাম বদলে হয়েই গেল ‘হাঁসমুখ’! এমনকী আলিয়া দিয়েছিলেন পাউট করা একটা ছবি। তাতে প্রচুর কমেন্ট পড়েছিল এই বলে যে, ‘ম্যাম, আপনাকে অনুষ্কার চেয়ে ভাল দেখতে লাগছে!’
ট্রোল পিছু ছা়ড়েনি দীপিকা পাড়ুকোনেরও। একটি পত্রিকার ফোটোশ্যুটের ছবি দিয়েছিলেন ইনস্টাগ্রামে। লোকজন বলতে শুরু করে, দীপিকা নাকি ছবিতে ডায়াপার পরে রয়েছেন! কেউ কেউ তো বলেছিলেন, দীপিকাকে নাকি পর্নস্টারের মতো দেখতে লাগছে!
দীপাবলিতে শব্দবাজির উপরে সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সম্প্রতি টুইট করেছিলেন ফ্যাশন ডি়জাইনার মাসাবা গুপ্ত। তাঁর সওয়াল ছিল কোর্টের পক্ষেই। এর পর ক্ষিপ্ত লোকজন তাঁর জন্মপরিচয়, বাবার নাম, ‘অবৈধতা’ নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে।
এগুলো হাতে গোনা কয়েকটা উদাহরণ মাত্র। রোজই কোনও না কোনও তারকা ট্রোলের শিকার হন। কখনও কেউ এড়িয়ে যান, কেউ পাল্টা সেই ট্রোলের জবাব দেন। কেউ তো আবার এটাও বলেন যে, তাঁদের এ সমস্ত ট্রোল পড়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই।
কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র। অন্যকে ‘বুলি’ বা ব্যঙ্গ করে কোথায় এগোচ্ছে আমাদের সহিষ্ণুতা? যেখানে সারা বিশ্বে শান্তি আর সহাবস্থানের বার্তাই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়, সেখানে প্রতিনিয়ত আমরা তারকাদের অবস্থান, শিক্ষার পরিমাপ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছি আতসকাচ দিয়ে। এতে কি কোথাও আমাদেরই ধৈর্যহীনতা প্রকাশ্যে আসছে না?
তারকাদের হাঁড়ির ভাত, শোবার ঘরের রং, সদ্য ভাঙা প্রেম এমনকী নখ খাওয়ার বদভ্যাস জানার আগ্রহ থাকে আমাদের। একটা ইঁদুরছানাকে হাতিয়ার করে অনেকেই ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে তির মেরে বেড়াই। তারকারা নিজেদের মতো সেই ট্রোলিং-তিরের জবাব দেওয়ার পথ খুঁজে নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা পরিণতমনস্ক হব কবে, প্রশ্নটা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy