স্বরা ভাস্কর। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।
দিনের শেষে তা হলে ‘যোনি-সর্বস্ব’ই হয়ে থাকতে হচ্ছে স্বরা ভাস্করকে!
খোলা চিঠিতে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর দিকে আঙুল তুলে স্বরা বলেছিলেন, ভন্সালী আসলে শেষমেশ ‘মানুষ’ আর ‘মেয়েমানুষ’-এ ভেদ করা সমাজেরই প্রতিনিধিত্ব করে ফেলেছেন। প্রতিনিধিত্ব করে ফেলেছেন মেয়েদের যোনি-সর্বস্ব প্রাণী হিসেবে দেখা সমাজের। কেন এ কথা তাঁর মনে হয়েছিল তা খুব স্পষ্ট করেই লিখেছিলেন স্বরা। কিন্তু তার পর থেকে স্বরার ওই খোলা চিঠি এবং তিনি নিজে আক্রমণাত্মক আতস কাচের নীচে।
‘পদ্মাবত’-এর শেষ দৃশ্যে রানি পদ্মিনীর জহরব্রত পালনের দৃশ্য আলোড়িত করেছে বলিউডের এই উঠতি নায়িকাকে। আলোড়িত করেছে তাঁর মননকে। কারণ, তিনি মনে করেন, প্রাচীন এই প্রথা কোনও অবস্থাতেই নারীকে গৌরবান্বিত করে না। স্বরা লিখেছেন, ‘আপনার ছবির শেষটা দেখে খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। যেখানে এক জন অন্তঃসত্ত্বা এবং একটি বাচ্চা মেয়ে আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছেন।...আপনার মনে রাখা উচিত ছিল পাওয়ার অব সিনেমা কী!’
আরও পড়ুন, ‘পদ্মাবত দেখে মনে হল, যোনিটাই যেন আমার সব’
স্বভাবতই এই সব মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলড হচ্ছেন স্বরা। অভিনেত্রী তথা গায়িকা সুচিত্রা কৃষ্ণমূর্তি টুইট করেছেন, ‘পদ্মাবত নিয়ে এ ধরনের নারীবাদী বিতর্ক নেহাতই বোকামি নয় কি? এটা তো নিছকই একটা গল্প, জহরের ঢাক পেটানো নয়। যুদ্ধের জন্য তুমি আসল কোনও কারণ খোঁজো।’’ সুচিত্রা লিখেছেন, ‘মজার বিষয় হল, এক অভিনেত্রী, যিনি কখনও নৃত্যশিল্পী, কখনও যৌনকর্মীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, এক রানির সিনেমা দেখে তাঁর মনে হল, আমি যেন যোনি সর্বস্বতে পরিণত হয়েছি।’ এই কটাক্ষেরও জবাব দিয়েছেন স্বরা। তিনি টুইট করেছেন, ‘মজার কথা এত বড় একটা চিঠি, যেটা নিয়ে গঠনমূলক বিতর্ক হতে পারে, সেখান থেকে মানুষ শুধু যোনি শব্দটাই মনে রাখল!’
রাখল। কারণ, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অনেকেই দুধ আর জল আলাদা করার মতো অজস্র শব্দাবলির মধ্য থেকে যৌনগন্ধী শব্দ বেছে নিতে অভ্যস্ত। অতএব, স্বরার এই খোলা চিঠি যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যুমেরাং হয়ে তাঁর দিকেই ফিরবে, এটাও স্বাভাবিক।
অতএব বলিউডের কোনও কোনও মহল অবশ্য স্বরার সাম্প্রতিক এই ভাষ্যের একটা অতি সরলীকরণও করে ফেলেছেন। তাঁদেরই কারও কারও ধারণা, স্বরাকে অভিনয়ের সুযোগ দেননি সঞ্জয়, সেই রাগে এখন তাঁর কাজের সমালোচনা করে প্রচারের আলোয় আসার চেষ্টা করছেন এই অভিনেত্রী। যেমন পরিচালক অশোক পণ্ডিত। তাঁর টুইট: ‘সত্যিই কি স্বরা রেগে গিয়েছেন? গুজারিশ ছবিতে সঞ্জয় ওকে ছোট্ট একটা রোল দিয়েছিলেন বলেই কি স্বরার এত রাগ?...এখন কি সঞ্জয়কে জ্ঞান দেওয়ার মতো এক্সপার্ট হয়ে উঠল স্বরা? সঞ্জয় তো বটেই, ওর সঙ্গেই আমাদের সব পরিচালক এবং লেখকের ওর কাছ থেকে লেকচার নেওয়া উচিত? এফটিআইআই-এর মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তা হলে বন্ধ হয়ে যাক।’
Funny that an actress who can play an erotic dancer/ prostitute with such elan should feel like a vagina after watching a story of a pious queen . What standards are these ...tch tch
— Suchitra Krishnamoorthi (@suchitrak) January 28, 2018
Funny that people cannot get over the fact that a woman said Vagina! Funny that in a 2440 word article making fairly comprehensible arguments they only remember the word Vagina!!! 🙄 So... Vagina vagina vagina vagina vagina vagina...............vagina vagina VAGINA!!!!! https://t.co/pVh7rskZHL
— Swara Bhasker (@ReallySwara) January 28, 2018
প্রযোজক মণীশ মুন্দ্রা টুইট করেছেন, ‘কেউ যদি ফিকশনকে সিরিয়াস ভেবে খোলা চিঠি লেখে, তা হলে কী বলব।’
সত্যিই তো, নিছক ফিকশন! অতএব, সেই ‘ফিকশন’ থেকে জীবনের গভীরতর কোনও অর্থ খুঁজতে চাওয়া বিলাসিতা মাত্র! আরও নিবিড় কোনও প্রশ্ন যদি কেউ তোলেন যে, এ ভাবে প্রাচীন কোনও প্রথার দৃশ্যায়ন আসলে সেই প্রথাকে গরিমান্বিত করে, নারীত্বের সম্মানকে প্রকারান্তরে ধূলায় নামাতে চায়, তা হলে তার অর্থ স্রেফ প্রচারের আলোয় আসা? ‘বড় রোল’ না পাওয়ার ক্ষোভ?
Now that @ReallySwara has become an expert in advising a filmmaker #SanjayLeelaBhansali, all our directors & writers should take lectures from her, while the major institutes like #FTII & #WhistlingWoods should shut down.
— Ashoke Pandit (@ashokepandit) January 28, 2018
আরও পড়ুন, ‘পদ্মাবত’ দেখে দীপিকাকে উপহার পাঠালেন প্রাক্তন প্রেমিকের বাবা-মা!
এখনও পর্যন্ত স্বরার খোলা চিঠির উত্তর দিয়েছেন ‘পদ্মাবত’ টিমের দুই সদস্য সিদ্ধার্থ এবং গরিমা। তাঁরা ‘পদ্মাবত’ ছবির একটি গানের গীতিকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা বলেছেন, ‘যৌনতায় নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে কি? এক জন নারীর যোনি রয়েছে। যেটা জীবনের দরজা। তা তো কোনও পুরুষের থাকতে পারে না। যত চেষ্টাই করুক, পুরুষের যোনি থাকতে পারে না। এখানেই তো সমানাধিকারের প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেল।’
ফের সরলীকরণ! কত সহজেই শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে আসা বৈষম্য দূর হয়ে সমানাধিকারের প্রশ্নের সমাধান হয়ে যায়!
Now somebody takes fiction seriously and writes open letter about a story 100s of years old. The point is if u make a film from your past do changes suitably to reflect today’s feminism.
— Manish Mundra (@ManMundra) January 28, 2018
প্রায় আত্মকথনের ঢঙে স্বরা বলে চলেছেন, ‘কাউকে সতী বানানো আর কাউকে ধর্ষণ করা একই মানসিকতার এ পিঠ-ও পিঠ। এক জন ধর্ষক চেষ্টা করে মহিলাটির জননাঙ্গে আঘাত করতে, জোর করে পেনিট্রেট করতে, ছিন্নভিন্ন করে নিজের ক্ষমতা দেখাতে অথবা তাকে মেরে ফেলতে। সতী-জহরের সমর্থকেরা এক জন নারীকে মেরে ফেলতে চায় কারণ তাঁর যৌনাঙ্গের পুরুষ মালিকটি আর নেই। দুটো ক্ষেত্রেই চেষ্টা ও ভাবনাটা হল, মেয়েদের শুধু যৌনাঙ্গের যোগফলে নামিয়ে রাখা।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: আরও একটা ‘বিগ বাজেট’, আরও একটা ‘ম্যাগনাম ওপাস’
এই বোধ কি শুধুই স্বরার? শুধুই বলিউডের এক উঠতি নায়িকার? না কি আরও বহু স্বরা ভাস্করের?
হাজার হোক, তাঁরা তো আর ‘ছোট রোল’ চাইতে পরিচালকদের দরজায় দরজায় ঘোরেন না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy